শাহ মুহম্মদ সগীরের কবিকীর্তির পরিচয় দাও
শাহ মুহম্মদ সগীরের কবিকীর্তির পরিচয় দাও ।
![]() |
শাহ মুহম্মদ সগীরের কবিকীর্তির পরিচয় দাও । |
উত্তর:বাংলা সাহিত্যের প্রথম মুসলমান কবি শাহ মুহম্মদ সগীর। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের মধ্যযুগে তিনি একজন বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব। তিনি বিশেষভাবে পরিচিত ‘ইউসুফ জোলেখা' কাব্য রচনার কারণে। গিয়াসউদ্দিন আজম শাহের রাজত্বকালে (১৩৯৩–১৪০৯ খ্রিঃ) তিনি ‘ইউসুফ জোলেখা' কাব্য রচনা করেন। কবি তাঁর কাব্যের রাজবন্দনায় গৌড়ের সুলতান গিয়াসউদ্দিন আজম শাহের প্রশংসা কীর্তন করেছেন—
মনুষ্যের মৈদ্ধে, জেহ্ন ধর্ম্ম অবতার ।
মহানরপতি গেছে পিরথিম্বীর সার।
‘মহানরপতি গ্যেছ' বলে যাকে উল্লেখ করা হয়েছে তিনি গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ বলে মনে করা হয় ৷
কাব্যের আত্মবিবরণীতে মধ্যযুগের কবিরা সাধারণত নিজেদের পরিচয় জানান। কিন্তু শাহ মুহম্মদ সগীর সে কাজটি করেন নি, তিনি ছিলেন ব্যতিক্রম। রাজবন্দনা কালে তিনি নিজের কোন পরিচয় দেন নি। তাই কবির জন্ম সময়, জন্মস্থান সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কিছু বলা যায় না। ড. এনামুল হক কবির কাব্যে চট্টগ্রাম অঞ্চলের কিছু শব্দের ব্যবহার লক্ষ্য করে কবিকে চট্টগ্রামের অধিবাসী বলে অনুমান করেছেন।
তাছাড়া শাহ উপাধি থেকে অনুমান করা যায় যে, তিনি কোন দরবেশ বংশে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। রাজবন্দনায় ‘মুহম্মদ সগীর’ ‘তান আঞ্জাক অধীন’– একথা থেকে ধারণা করা হয় যে, তিনি সুলতানের কর্মচারী ছিলেন। তাঁর ‘ইউসুফ জোলেখা' একটি রোমান্টিক প্রণয়োপাখ্যান। এ কাব্যে তিনি সুপ্রাচীন প্ৰণয় কাহিনী উপজীব্য করতে গিয়ে কুরআন ও ফেরদৌসের কাব্য ছাড়াও মুসলিম কিংবদন্তীতে ও স্বীয় প্রতিভায় নির্ভর করেছেন।
মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে মুসলমান কবিগণের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান রোমান্টিক প্রণয়োপাখ্যান। শাহ মুহম্মদ সগীর কর্তৃক চতুর্দশ শতকের শেষে বা পঞ্চদশ শতকের প্রথমে ‘ইউসুফ জোলেখা' কাব্য রচনার মাধ্যমে রোমান্টিক প্রণয়োপাখ্যান ধারার প্রবর্তনা
হয় ।
তাঁর কাব্যে দেশি ভাষায় ধর্মীয় উপাখ্যান বর্ণিত হয়েছে। কবি প্রেমরসে ধর্মবাণী প্রচার করতে চাইলেও তা মানবীয় প্রেমকাহিনী হিসেবেই রূপলাভ করেছে।
করেছে যে— আলিবর্দীর মৃত্যুর পর সে ক্ষমতায় বসতে পারবে। মীরজাফরের সংলাপ থেকে জানা যায় যে, আলিবর্দীর আমল থেকেই মসনদ তার স্বপ্ন-
“সফল করতে হবে আমার স্বপ্ন। বাংলার মসনদ নবাব আলিবর্দীর আমলে, উদ্ধত সিরাজের আমলে মসনদের পাশে অবনত মস্তকে দাঁড়িয়ে আমি এই কথাই শুধু ভেবেছি, একটি দিন মাত্র একটা দিনও যদি ওই মসনদে মাথা উঁচু করে আমি বসতে পারতাম।” আলিবর্দীর মৃত্যুর পর সিরাজ মসনদে বসলে মীরজাফর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।
সে খুঁজে পায় সিরাজের শত্রু ইংরেজ ও কিছু অর্থলোভী অমাত্যদের, তাদের স্বার্থপরতার সাথে যুক্ত হয় মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতা। সিরাজকে ক্ষমতাচ্যুত করে নিজে বাংলার মসনদে বসতে মীরজাফর শঠতা, চাতুর্য ও পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরানকে ব্যবহার করে। কোরান স্পর্শ করে সে প্রতিজ্ঞা করে যে, আজীবন সে সিরাজের আজ্ঞাবহ হয়ে থাকবে।
দক্ষ অভিনেতা মীরজাফর তার অভিনয় নৈপুণ্য দিয়ে সিরাজকে জয় করে এবং পলাশী যুদ্ধের প্রধান সেনাপতির পদ আদায় করে নেয়।
মীরজাফরের কাছে মসনদই ধর্ম-খোদা। তাই ইংরেজের সাথে চুক্তি করে নেয় যে, সিরাজের পতনে সে ইংরেজদের সহায়তা দেবে এবং ইংরেজ কোম্পানি তাকে মসনদে বসাবে। ইংরেজের কাছে সম্পূর্ণ সমর্পিত হয়ে মীরজাফর পলাশীর যুদ্ধে সেনাপতি হওয়া সত্ত্বেও কোনো যুদ্ধ পরিচালনা করে নি; বরং যুদ্ধরত হাজার হাজার দেশপ্রেমিক সৈনিককে যুদ্ধক্ষেত্র ত্যাগ করতে পরামর্শ দেয়। মীর জাফরের নিষ্ক্রিয়তায় পলাশীতে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্ত যায় ।
নিঃসন্দেহে মীরজাফর এক ঘূর্ণিত চরিত্র।