রূপকথা ও উপকথা বলতে কী বোঝ
রূপকথা ও উপকথা বলতে কী বোঝ?
![]() |
রূপকথা ও উপকথা বলতে কী বোঝ? |
উত্তর:রূপকথা লোককাহিনীর যে শাখায় দীর্ঘতর কাহিনীতে অপুত্রক রাজার দৈববলে পুত্রলাভ, ভাগ্যান্বেষণে রাজপুত্রের দেশান্তর অভিযান, পরে সাফল্য লাভ, পরিণামে অন্য রাজকন্যা ও অর্ধেক রাজ্যলাভ এসব কাহিনী যেসব লোককাহিনীতে থাকে তাকেরূপকথা বলে।
রূপকথায় মানুষের কল্পনার অবাধ বিস্তার বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। রূপকথায় একজন নায়ক বা কেন্দ্রীয় চরিত্র থাকে, একজন খল বা ভিলেন থাকে, নায়কের সাহায্যকারী (কোটলিপুত্র বা বন্ধু) চরিত্র থাকে, নায়িকা থাকে, জাদুদ্রব্য বা প্রাণী থাকে, খলের সাহায্যকারী চরিত্রও থাকতে পারে, প্রতিনায়ক ও প্রতিনায়িকা থাকতে পারে, দেবতা বা স্বর্গীয় চরিত্রও থাকতে পারে।
ঘাত-প্রতিঘাত ও সংঘাতের মধ্য দিয়ে রূপকথার কাহিনী অগ্রসর হয়, নায়ক বা কেন্দ্রীয় চরিত্র অনেক বাধা অতিক্রম করে শেষ পর্যন্ত জয়লাভ করে ।
রূপকথা মিলনাত্মক। রূপকথায় সাধারণত একত্রিশটি ক্রিয়াশীলতা (Function) থাকে, কোন কোনটিতে কমও থাকতে পারে। কাহিনী পরিভ্রমণের সময় অনেক ক্ষেত্রে বিষয়ের হেরফের ঘটে, কিন্তু ক্রিয়াশীলতার কোন পরিবর্তন ঘটে না।
যেমন ভারতীয় দেবতাগণ কাহিনীর মধ্যে যে রকমের আচরণ করে বা অলৌকিক কাজকর্ম সম্পাদন করে। ইউরোপীয় কাহিনীতে সে কাজগুলো সম্পন্ন করে কোন ধর্মযাজক, আফ্রিকায় তা করে প্রেতাত্মা । অর্থাৎ কুশীলবের পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু ক্রিয়াশীলতা অপরিবর্তনীয়।
রূপকথা সাধারণত আরম্ভ হয়, এক যে ছিল রাজা অথবা প্রাচীনকালে গৌড়ে এক রাজা বাস করতো অথবা এক দেশে এক সাধু ছিল ইত্যাদি। রূপকথার কাহিনীর পরিসর জল- স্থল, পাতাল, আকাশ, মাটি, সমুদ্র, মরুভূমি-পর্বত, সমুদ্র পর্যন্ত বিস্তৃত। এর ঘটনায় কল্পনা ও বাস্তবের সমন্বয় ঘটে, অতিলৌকিক ও ঐন্দ্রজালিক ঘটনার পাশে মানবীয় সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নার চিত্রও কাহিনীতে দেখা যায়।
কোনো কোনো রূপকথায় পরীদের কাহিনী থাকে। একে কেউ কেউ পরীকথা বললেও তা মূলত রূপকথা। এ ধরনের রূপকথায় মানুষের সাথে সাথে পরী থাকে। পরী হল মানুষের মাটির কল্পিত সুন্দরী রমণী যারা আকাশলোকে বিহার করে এবং অজানা জগতে বাস করে, পৃথিবীতে তারা মাঝে মাঝে আসে। তারা কোন যুবককে ভালবেসে তাদের জগতে নিয়ে যায়, কোন শিশুকেও এভাবে নিয়ে যায়- আবার তারা ফিরেও আসে। এমনকি মাটির মানুষের সাথে তারা মাটির পৃথিবীতেই ঘর বাঁধতেও পারে।
উপকথা ঃ পশুপক্ষীর চরিত্র অবলম্বনে যেসব কাহিনী গড়ে উঠেছে সেগুলোর নাম উপকথা। কৌতুক সৃষ্টি ও নীতি প্রচারের জন্যই এগুলোর সৃষ্টি। পশুপক্ষী অনেক ক্ষেত্রে রূপকার্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এ ধরনের নীতিবাচক উপকথা কলেবরে অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র, পশুপাখি, কীটপতঙ্গ, বৃক্ষলতা গুল্ম ইত্যাদির এর চরিত্র হিসেবে বিদ্যমান। মাঝে মাঝে এদের সাথে মানুষও থাকে।
উপকথাতে মানুষ ছাড়া আর যেসব চরিত্র থাকে তারাও মানুষের মতই আচরণ করে এবং কথা বলে । উপকথার বিশেষ লক্ষণ হচ্ছে, কাহিনীর শেষে থাকে একটি নীতিকথা এবং সমগ্র কাহিনী যেন এই নীতিবাক্যটিকে প্রতিপন্ন করবার জন্যেই প্রথম থেকে তৈরি হতে থাকে।
নীতিবাক্যের উদ্দেশ্যেই কাহিনীর সমগ্র কাঠামো নির্মিত হয়। উপকাহিনীতে কোনো জটিলতা থাকে না, কাহিনী সহজ ও সরল। দু'টি পক্ষ থাকে, কিন্তু তাদের দ্বন্দ্ব ও সংঘাত ভয়ানক কোন রূপ ধারণ করে না- বিরোধটি ব্যাপক পরিসর নয়। এখানে ঘটনার কোন ঘনঘটা নেই, নেই কোন গাম্ভীর্য। একটি ছোট প্রাঙ্গণে এর জন্ম এবং সেই প্রাঙ্গণেই এর স্থিতি ও পরিণতি ঘটে।