পাখি নহো তার ঠাই উড়ী পড়ি জাওঁ

পাখি নহো তার ঠাঁই উড়ী পড়ি জাওঁ 

পাখি নহো তার ঠাঁই উড়ী পড়ি জাওঁ
পাখি নহো তার ঠাঁই উড়ী পড়ি জাওঁ 

উত্তর : বড়ু চণ্ডীদাস রচিত 'শ্রীকৃষ্ণকীর্তন' বাংলা সাহিত্যের দ্বিতীয় প্রাচীন নিদর্শন। আখ্যানমূলক এ কাব্যে কবি রাধাকৃষ্ণের প্রেমলীলা অসাধারণ দক্ষতায় বর্ণনা করেছেন। কাব্যটির ভাষাগত ও সাহিত্যগত গুরুত্ব অপরিসীম। 

উপরিউক্ত পক্তিদ্বয় 'রাধাবিরহ' খণ্ডের অন্তর্গত। ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন' কাব্যের কহিনি কবি রাধা, কৃষ্ণ আর বড়াই— এ তিনটি চরিত্রের মাধ্যমে বর্ণনা করেছেন। ‘বংশীখণ্ডে'র কয়েক দিন পর রাধাবিরহের কাহিনি শুরু হয়েছে। আলোচ্য অংশে কৃষ্ণ মিলনের জন্য রাধার হৃদয়ের ব্যাকুলতা কবি সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন।

‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন' কাব্যের কৃষ্ণ যেমন স্বর্গের দেবতা বা অবতার নয়, তেমনি নায়িকা রাধাও স্বর্গের দেবী নয়। তারা সাধারণ নর-নারী হিসেবেই কাব্যে চিত্রিত হয়েছে। শ্রীমতী রাধিকা গ্রাম বাংলার এক সহজ সরল পল্লিবধূ। রাধার বয়স যখন এগারো বছর ছিল, তখন কৃষ্ণের প্রেমপ্রস্তাব রাধা অবজ্ঞাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। 

কিন্তু যখন তার দেহমনে প্রেম জেগে উঠেছে, তখন সেই রাধাই কৃষ্ণপ্রেমে আকুল হয়েছে। কৃষ্ণ দেহ-সম্ভোগ শেষে রাধাকে ফেলে মথুরা চলে গেছেন। বিরহী রাধা অস্থির হয়ে পড়েছে কৃষ্ণের সাথে মিলনের জন্য। এই কাব্যে কবি বড়ু চণ্ডীদাস কৃতিত্বের সাথে এর গীতিধর্মিতা ও নাট্যধর্মিতা রক্ষা করেছেন। 

'রাধাবিরহ' খণ্ডে কবি বড়ু চণ্ডীদাস অনন্য শিল্পিত সৌকর্যে শৃঙ্গার- হাস্য-করুণ প্রভৃতি রসের সমন্বয় ঘটিয়েছেন। কৃষ্ণের বাঁশী রাধাকে আকুল করে তোলে। সেই সুরের মূর্ছনায় বিমোহিত রাধা কৃষ্ণের জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠা রাধা উপরিউক্ত উক্তিটি করেছে। কারণ, কৃষ্ণ বাঁশী বাজায় মনের আনন্দে। কিন্তু সেই আনন্দের সুর রাধার হৃদয়ে অস্থিরতার তুফান তোলে। 

বাঁশীর শব্দে রাধা ঘরে টিকতে পারছে না। ছুটে যেতে ইচ্ছে করছে কৃষ্ণের কাছে। কিন্তু রাধা তো পাখি নয় যে, কৃষ্ণের কাছে উড়ে যাবে। তাই পৃথিবীকে বিদীর্ণ করে দিতে বলেছে যেন সেখানে রাধা আত্মগোপন করতে পারে। তাই রাধা বলেছে-

পাখি নহো তার ঠাঁই উড়ী পড়ি জাওঁ ।

মেদিনী বিদার দেউ পসিআঁ লুকাওঁ ।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ