নাগমতির চরিত্র ট্র্যাজিক বেদনায় আচ্ছন্ন আলোচনা করো
নাগমতির চরিত্র ট্র্যাজিক বেদনায় আচ্ছন্ন”- আলোচনা করো ।
![]() |
নাগমতির চরিত্র ট্র্যাজিক বেদনায় আচ্ছন্ন”- আলোচনা করো । |
উত্তর:আলাওলের 'পদ্মাবতী' কাব্যে চিতোরের রাজা রত্নসেনের সুন্দরী স্ত্রী নাগমতি নাগমতি অসামান্য সুন্দরী, কিন্তু রূপগর্বিণী পরশ্রীকাতর। স্বামী রত্নসেনের প্রিয় শুক ভূত ভবিষ্যৎ বলতে পারে শুনে স্বামী শিকারে গেলে নাগমতি শুকের কাছে জিজ্ঞেস করে যে, তার সমান সুন্দরী সংসারে আর কেউ আছে কি না। শুক জানায়, সিংহল রাজকন্যা পদ্মাবতীর রূপের সামনে নাগমতি তুচ্ছ।
নাগমতি তখন ভাবে রাজা একদিন নিশ্চয় শুকের কাছ থেকে পদ্মাবতীর রূপের কথা শুনবে এবং নাগমতিকে ছেড়ে চলে যাবে। তাই সে ধাত্রীকে ডেকে শুককে হত্যার নির্দেশ দেয়। ধাত্রী পরিণাম বিবেচনা করে শুককে লুকিয়ে রাখে। রাজা প্রাসাদে শুককে না পেয়ে খোঁজখবর নেয়, শুক সামনে আসে। শুক সমস্ত বৃত্তান্ত শুনালো । প্রসঙ্গক্রমে পদ্মাবতীর রূপের কথাও রাজাকে জানায়। রাজা যোগী হয়ে পদ্মাবতীর জন্য বেরিয়ে পড়ে।
নাগমতি স্বামীকে ভালবাসে, সে পতিপ্রাণগতা বলেই স্বামী বেহাত না হয়, সে ব্যবস্থা করতে গিয়েই ভাগ্যদোষে স্বামী তাকে ছেড়ে যায়। রত্নসেন যোগী বেশে পদ্মাবতীর সন্ধানেযেতে উদ্যত । এমন সময় নাগমতি স্বামীর সাথে সংসার ত্যাগ করতে চায়। সে তার স্বামীর চরণ সেবার জন্য সাথে যাবে। রামের সাথে যেমন সীতা গিয়েছিল। তার বিশ্বাস নারীর জন্মই স্বামীর জন্য ।
নাগমতির পূর্বজনমের কর্মের ফলে রত্নসেনের মতো স্বামী পেলেও রূপের অহংকার লোভে এবং কর্মদোষে সে তার স্বামীকে হারায়। স্বামী বিহনে তার জীবন অন্ধকার এবং জগৎ সংসার নিরর্থক শূন্য। রত্নসেন সিংহল গেলে নাগমতি নিঃসঙ্গ অনিকেত। তার ঘুম নেই, খাওয়া নেই— জীবনটাই তার কাছে বিষময় হয়ে ওঠে।
দীর্ঘ এক বছর নাগমতি বিরহে পুড়েছে। তার বিলাপে পশুপাখি বিহ্বল। একদিন অর্ধেক রাত্রে একটি পাখি নাগমতিকে তার দুঃখের কারণ জিজ্ঞেস করে। নাগমতি পাখিটিকে রাজার কাছে পাঠিয়ে দেয়। মৃগয়ায় এসে রত্নসেন গাছের ডালে বসা পাখির কাছে নাগমতির দুঃখের কথা শুনে রত্নসেন চিতোর যাত্রা করে।রত্নসেন নাগমতি ও পদ্মাবতীকে নিয়ে সুখে ঘর করে। নাগমতির গর্ভে জন্ম নেয় নাগসেন নামক পুত্র সন্তান ।
মূলত রাজা রত্নসেন যেদিন হীরামন পাখিকে কিনে আনে এবং হীরামনের কাছে পদ্মাবতীর রূপ বর্ণনা শোনা থেকেই নাগমতির ট্র্যাজেডির সূত্রপাত। পদ্মাবতীর কারণেই তার জীবন ছিন্নভিন্ন। রত্নসেন পদ্মাবতীকে নিয়ে ফিরে এলেও সেই পদ্মাবতীর রূপের কারণেই বাদাশা আলাউদ্দিন পদ্মাবতীকে পেতে রত্নসেনকে বন্দি করে নিয়ে যায়।
যদিও সেখান থেকে গোরা ও বাদলের সহযোগিতায় মুক্তি পায় কিন্তু পদ্মাবতীর কারণেই রত্নসেন দেবপালের ধৃষ্টতার জবাবে দ্বৈরথ যুদ্ধে অবতীর্ণ হলে আহত হয় এবং কিছুদিনের মধ্যে মৃত্যুবরণ করে। মূলত পদ্মাবতীর কারণে নাগমতির দাম্পত্য সুখ বিনষ্ট হয়ে এবং তাকে ভোগ করতে হয় অপার ট্র্যাজেডি।
রাজা রত্নসেনের মৃত্যু হলে নাগমতি সহমরণে যায়, অর্থাৎ সে অনুমৃতা হয়। নাগমতির বিরহ বেদনা কবি আপন মনের মাধুরী দিয়ে চিরায়ত বাংলার নারীর বিরহে রূপ দিয়েছেন—দেশান্তরে যাইব পতি শুনি নাগমতিসজল নয়ানে আমি করি এ মিনতি।কবি নাগমতিকে চিরায়ত বাংলার সেই নারীর সার্থক চিত্ররূপে তুলে ধরেছেন। যে ভোগে সহচরী, সেবায় দাসী, দুঃখে সান্ত্বনা। তার নাগমতি চরিত্র বাঙালি ঘরে অতি পরিচিতা ।