লক্ষ্মণ কীভাবে মেঘনাদকে হত্যা করেছিল

লক্ষ্মণ কীভাবে মেঘনাদকে হত্যা করেছিল?
লক্ষ্মণ কীভাবে মেঘনাদকে হত্যা করেছিল
লক্ষ্মণ কীভাবে মেঘনাদকে হত্যা করেছিল

উত্তর : মেঘনাদবধ কাব্যে ইন্দ্রজয়ী মেঘনাদ লক্ষ্মণের চিরশত্রু। এর পূর্বেও মেঘনাদের হাতে লক্ষ্মণ একবার জীবন দিয়েছে, দেবতার আশীর্বাদে সে জীবন ফেরত পেয়েছে। মেঘনাদ কালযুদ্ধে আসবে, ফলে রাঘবেরা সবাই ভীত-সন্ত্রস্ত। দেবতাদের পরামর্শে দেব প্রেরিত অস্ত্র নিয়ে মিত্র বিভীষণের সাথে লক্ষ্মণ রাবণের অন্দরমহলে প্রবেশ করে। 

মেঘনাদ যুদ্ধে যাবার আগে পিতার নির্দেশে নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে পূজার জন্য গিয়েছে। এ সময় লক্ষ্মণ গিয়ে নিরস্ত্র মেঘনাদের উপর চড়াও হয়। মেঘনাদ লক্ষ্মণকে আতিথেয়তা গ্রহণ করতে অনুরোধ জানায়, সেই অবকাশে সে অস্ত্রাগার থেকে অস্ত্র আনার অনুমতি চায়। কিন্তু লক্ষ্মণ জানে যে, অস্ত্রধারী মেঘনাদের সাথে সে যুদ্ধে পেরে উঠবে না। তাই নিরস্ত্র মেঘনাদকেই সে মারতে উদ্যত হয়। তাই সে যুক্তি দেয় যে, শিকারির চিরশত্রু বাঘকে জালে পেয়ে শিকারি কি কখনো ছেড়ে দেয়, তেমনি লক্ষ্মণ আজ সুযোগ পেয়ে মেঘনাদকে ছেড়ে দেবে না।

 এভাবে শত্রুকে মারা যদিও ক্ষত্রিয়দের বা যোদ্ধাদের রীতিসিদ্ধ নয়, তবু যেহেতু মেঘনাদের জন্ম রক্ষঃকুলে, লক্ষ্মণ তার সাথে কেন ক্ষত্রিয় রীতি প্রয়োগ করবে। শত্রুকে বধই হচ্ছে মূল উদ্দেশ্য, ফলে তা যে কৌশলেই হোক তাতে কোনো অপরাধ নেই । মূল অভিপ্রায় শত্রুবধ, সেটাই সে করবে।

লক্ষণের একথা শোনার পর মেঘনাদ পূজার কোষা তুলে লক্ষ্মণের কপাল উদ্দেশ্য করে ছুঁড়ে মারে। মেঘনাদের কোষার আঘাতে লক্ষ্মণে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। রক্তস্রোত বয়ে যেতে লাগলো- মেঘনাদ লক্ষ্মণের দেবঅস্ত্র- ধনুক ইত্যাদি নিতে আপ্রাণ চেষ্টো করেও নিতে ব্যর্থ হয়। তাই সে যজ্ঞাগার থেকে অস্ত্র আনার জন্য বাইরে গিয়ে দেখে যে চাচা বিভীষণ দ্বার আগলে আছে। 

মেঘনাদ তার চাচা বিভীষণকে মিঠে-কড়া অনেক কথা বলে চাচাকে ভর্ৎসনা করে এবং পথ ছেড়ে দিতে অনুরোধ করে। সে অস্ত্র এনে লঙ্কার গৌরব রক্ষা করতে চায় । এমন সময় লক্ষ্মণ চেতন ফিরে পেয়ে পেছন থেকে মেঘনাদকে লক্ষ করে তীর ছুঁড়ে মেঘনাদের শরীরে তীর বিদ্ধ করে। যন্ত্রণায় ছটফটরত মেঘনাদ মন্দিরের শঙ্খ-ঘণ্টা সবকিছু একে একে লক্ষ্মণকে লক্ষ্য করে ছুঁড়তে থাকে। কিন্তু মায়াবলে দেবতার অদৃশ্য হাতে সেগুলো সরিয়ে দেয়, লক্ষ্মণের শরীরে লাগতে দেয় না। 

মেঘনাদ লক্ষ্মণের দিকে তেড়ে যায়। দেবতাদের মায়াবলে মেঘনাদ লক্ষ্মণের কোনো ক্ষতিই করতে পারে নি, বরং লক্ষ্মণ তীর ছেড়ে তরবারি ধরে মেঘনাদকে পেছন থেকে আঘাত করলে মেঘনাদ মাটিত লুটিয়ে পড়ে এবং শেষ পর্যন্ত মেঘনাদ মারা যায় ।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ