লঙ্কাপুরীর বিবরণ দাও

লঙ্কাপুরীর বিবরণ দাও ।
লঙ্কাপুরীর বিবরণ দাও ।

লঙ্কাপুরীর বিবরণ দাও ।


উত্তর:লংকারাজ রাবণ। লংকার পঞ্চবটী বনে অযোধ্যার রামসীতা বনবাসে, সাথে লক্ষ্মণ। রাবণের বালবিধবা ভগ্নি সূর্পণখা লক্ষ্মণকে দেখে মুগ্ধ হয়- তাকে ভালোবাসে । লক্ষ্মণ ধ্যান করে তার ফেলে আসা স্ত্রী উর্মিলার। বারবার নিষেধ সত্ত্বেও সূর্পণখা লক্ষ্মণকে বিরক্ত করলে লক্ষ্মণ সূর্পণখার নাক ছেদন করে দেয়। এ অপমানের প্রতিশোধে রাবণ ছলছলনা করে রামপত্নী সীতাকে হরণ করে লঙ্কায় নিয়ে আসে। সীতা উদ্ধারে রাম-লক্ষ্মণ হনুমান বাহিনীকে নিয়ে লঙ্কায় প্রবেশ করে।

দৈবঅস্ত্রে সুসজ্জিত লক্ষ্মণ যখন ইন্দ্রজিতকে বধ করবার উদ্দেশ্যে বিভীষণকে সাথে নিয়ে লঙ্কাপুরীতে যাত্রা করে, তখন প্রথমেই সবিস্ময়ে রামানুজ দেখিলা চৌদিকে চতুরঙ্গ বল দ্বারে। স্বর্ণসৌধ কিরীটিনি লঙ্কার ঐশ্বর্য বর্ণনায় কবি কল্পনার যে বর্ণাঢ্য সমারোহ আমরা লক্ষ করি, তা মধুসূদনের ন্যায় প্রতিভাধর কবির পক্ষেই সম্ভব। কাব্যের আরম্ভেই স্বর্ণলঙ্কার ঐশ্বর্যের একটি অপূর্ব বর্ণনা রয়েছে।

প্রাসাদ শিখরে উঠে রাবণ দেখছে-কাঞ্চন সৗধ কিরীটিনি লঙ্কা মনোহরা পুরী।হেলহÚ সারি সারি পুষ্পবন মাঝে, কমল আলয় সরঃ উৎস রজঃছটা,তরুরাজী, ফুল কুল চক্ষু বিনোদন,যুবতী যৌবন যথা, হীরাচূড়া শিরঃ দেবগৃহ, নানা রাগে রঞ্জিত বিপণি বিবিধ রতনে পূর্ণ।

রাবণের স্বর্ণলঙ্কাকে স্বর্গের চেয়ে অধিকতর ঐশ্বর্য ও সৌন্দর্যে মণ্ডিত করে কবি একদিকে যেমন তাঁর কল্পনার বর্ণাঢ্যতা দেখিয়েছেন, অনদিকে তেমনি তাঁর অন্তরের ঐশ্বর্য ও সৌন্দর্যপ্রিয়তার ও আভাস দিয়েছেন। রাবণকে বড় করে দেখাবার এটাই প্রকৃষ্ট উপায় । লক্ষ্মণ ইতোপূর্বে লঙ্কার ঐশ্চর্যময় রূপ প্রত্যক্ষ করেন নি। 

তাই বিভীষণের সাথে পুরীর প্রাচীরে উঠে চারদিকে চেয়ে তার বিস্ময়ের সীমা রইলো না। লঙ্কা শুধু মর্ত্যের অমরাবতী নয়, এর অপার্থিব সৌন্দর্যের সাথে মিশে আছে অজেয় পুরুষ ও বীরত্ব। রাবণের স্বর্ণলঙ্কা শুধু সৌন্দর্যের স্বর্গ হতে পারে না- এটা মনে করে কবি লক্ষ্মণের দৃষ্টি পথে যে চিত্র উদ্ঘাটিত করেছেন তা দেখে রামানুজনের বিস্ময় লাগবার কথা। লঙ্কাপুরীর দ্বার দেশে চতুরঙ্গ বল :

“মাতঙ্গে নিষাদীতুরঙ্গমে নাদীবৃন্দ, মহারথী রথেভূতলে শমনদূত পদাতিক যত-ভীমাকৃতি ভীমবীর্য্যঃ অজেয় সংগ্রামে।”সভয়ে সেই দ্বারদেশ অতিক্রম করে লক্ষ্মণ অগ্রসর হলো। যতই লক্ষ্মণ অগ্রসর হতে থাকে, ততোই তার দৃষ্টিপথে লঙ্কার সৌন্দর্য ফুটে উঠতে লাগলো। নীরবে লক্ষ্মণ তার দুপাশে স্বর্ণপুরীর অপার সৌন্দর্য নয়নমন দিয়ে দেখতে লাগলো। 

লক্ষ্মণ দেখলো-শত শত হেম হৰ্ম্ম দেউল বিপণিউদ্যান, সরসী, উৎস, অশ্ব আশ্বালয়েগজালয়ে গজবৃন্দ স্যন্দন অগণ্য অগ্নিবর্ণ, অস্ত্রশালা, চারু নাট্যশালা মণ্ডিত রতনেশেষ পর্যন্ত লক্ষণের মুখ দিয়ে বের হয়েছে- “ এহেন বিভব, আহা, কার ভবতলে, এবং নিজে লঙ্কার বিভব যত কে পারে বর্ণিতে'- একথা বলে রাবণের স্বর্ণলঙ্কার যে ইংগিত প্রদান করলেন, তার মধ্যে লক্ষ্মণ স্বর্ণসৌধ- কিরীটিনী লঙ্কাপুরীর সমগ্র ঐশ্বর্যকে এক কথায় পাঠকের কাছে মেলে ধরেছে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ