কণ্ঠ শুকাইল মোর পয়োনিধি কূলে ব্যাখ্যা করো
কণ্ঠ শুকাইল মোর পয়োনিধি কূলে।”- ব্যাখ্যা করো।
![]() |
কণ্ঠ শুকাইল মোর পয়োনিধি কূলে।”- ব্যাখ্যা করো। |
উত্তর : লায়লী মজনু ছেলেবেলায় পাঠশালায় পড়তে গিয়েই দুজন দুজনের প্রেমাসক্ত। বাল্যে তারা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ- তাদের প্রেম কেউ কখনো বিস্তৃত হবে না। দুজন দুজনের জন্য জীবনপাত করবে। সমাজ-সংসার তাদের মিলন পথে চিরপ্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। লায়লীকে তার মা অন্যের সাথে বিয়ে দেয় কিন্তু বাসর রাতেই সে স্বামীকে লাথি মেরে তাড়িয়ে দেয়।
মজনু নজদ বনে অবস্থান করে বেদনাদীর্ণ বিরহ উন্মাদ-উদ্ভ্রান্ত জীবন, কাটায়। দীর্ঘ-বিরহ অনলে পুড়ে পুড়ে দুজন থাক। লায়লীও নানা চড়াই-উত্রাই পার করিয়ে মজনুকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে। লায়লী সপরিবার শ্যামদেশে যেতে পথে সবাইকে ফাঁকি দিয়ে নজদ বনে প্রবেশ করে মজনুকে খুঁজে ফেরে এবং শেষ পর্যন্ত ক্ষীণ জরাজীর্ণ মৃতপ্রায় মজনুকে খুঁজে পায় এবং মজনুকে পরিণয়ের প্রস্তাব দেয়। মজনুর পাশে থেকে তাকে সুস্থ্য করে তুলতে চায়।
কিন্তু মজনু তাতে স্বীকৃত নয়, তার কথা গোপনে লায়লীকে বিয়ে করলে আরব সমাজ তাকে কলঙ্ক দেবে। লায়লীর সাথে মজনুর প্রেমের বিষয় সংসারে ব্যক্ত, ফলে গোপনে বিয়ে করা যথার্থ হবে না। গোপনে পেয়ে এমন কাজ করলে সেটা অধর্ম হবে। প্রভু আজ্ঞা ছাড়া মজনু এ কাজ করতে পারবে না। তাই সে লায়লীকে উটে চড়িয়ে বনের বাইরে এনে বিদায় দিয়ে ব্যথিত মনে নজদ বনে ফিরে যায়।
লায়লীকে বিদায় দিয়ে মজনু কাঁদতে কাঁদতে অচেতন হয়ে পড়ে। বলবুদ্ধি হারিয়ে সে কেবলই বিলাপ করে। কী না তার দুভাগ্য যে প্রভু তার হাতে রত্ন দিয়েও তা কেড়ে নিল । হাতের কাছে সব। সমুদ্রের কূলে দাঁড়িয়েও মজনুর তৃষ্ণায় কণ্ঠ শুকিয়ে কাঠ সে এমনই হতভাগা যে— জলপানের সুযোগ নেই তার। সমুদ্রকূল থেকে সে জল পান না করে তৃষ্ণার্ত অবস্থায় নয়নের জলে ভিজে তাকে ফিরে আসতে হলো।
এমনই দুর্ভাগা সে যে— সারাজীবন পশুপক্ষীর সাথে তাকে কেঁদে কেঁদে তার যৌবনকে ব্যর্থ করে দিতে হবে। তার সব থাকতেও সে নিঃস্ব রিক্ত।
-