ক্ষণিকা' কাব্যগ্রন্থের নামকরণের সার্থকতা বিচার কর

ক্ষণিকা' কাব্যগ্রন্থের নামকরণের সার্থকতা বিচার কর।
ক্ষণিকা' কাব্যগ্রন্থের নামকরণের সার্থকতা বিচার কর।
ক্ষণিকা' কাব্যগ্রন্থের নামকরণের সার্থকতা বিচার কর।

উত্তর :দুঃখের খাদ নিঃশেষে গলে গিয়ে জীবন যেখানে নিকষিত সুবর্ণের দিব্য মূর্তি গ্রহণ করে 'ক্ষণিকা'য় রবীন্দ্রনাথ ঠিক সেখানে অর্থাৎ একেবারে লোকালয়ে প্রবেশ করেছেন, যা জীবন দেবতার আদর্শলোক নয়, প্রাচীন ভারতের সৌন্দর্যলোকও নয় বরং বর্তমানের দিকচক্রের কালো মেঘখানা যেখানে অস্তমিত তপনের সুধাসেচনে অতীতের নন্দন ছায়া বিস্তার করে। 

না আছে তাতে জীবনরূপকে অতীতের সৌন্দর্যলোক হতে দেখার চেষ্টা, না আছে জীবন দেবতা অধিষ্ঠিত ভবিষ্যতের আদর্শ রূপের মধ্যে তাকে সঞ্চারিত করে দেবার প্রয়াস। বর্তমানের বাতায়ন হতে কিছুটা নিরাসক্তভাবে জীবনের মুহূর্তগুলোকে দেখা হয়েছে এবং অবশেষে শেষ যৌবনের সন্ধ্যাপ্রহরে সেগুলো একটি মালিকায় পরিণত হয়েছে। 

জীবনের বিচিত্র ক্ষণের এই মালিকাই ক্ষণিকা। এর কোনোটি বা সুখে উজ্জ্বল, দুঃখে স্নান, কোনোটি বা আনন্দের ভাবে ছিন্ন প্রায়, কোনোটি বেদনায় টন টন করছে, সুখ- দুঃখ, আশা-নৈরাশ্য, গভীর নিষ্ফলতা ও পরম পরিতৃপ্তি, দীর্ঘ বিরহ ও ক্ষণিক মিলন একত্র বিরাজিত, একই শাখায় নীড় রচনা করেছে। রবীন্দ্র কাব্যপ্রবাহে এমন অভিজ্ঞতা বিস্ময়জনক কিন্তু পথের বাঁকে বাঁকে শক্তির নব বিস্ময়ের দ্বারা মুগ্ধ করাতেই তো প্রতিভার অভ্রান্ত পরিচয়।

'ক্ষণিকা' পূর্ববর্তী কাব্যে প্রকৃতি ও মানুষকে বৃহৎ পটে চিত্রিত করলেও এ কাব্যে ছবিগুলো ছোট, দৃশ্যগুলো অতি পরিচিত, রঙের উগ্রতা নেই। মানুষকে বৃহৎ পটে সমগ্র মানুষের সাথে একত্রিত না করে ব্যক্তি মানুষকে বিচ্ছিন্ন করে আঁকা হয়েছে

‘ক্ষণিকা' পলায়নপর বর্তমান মুহূর্তের কাব্য। অতীত ও ভবিষ্যৎ নয়। বর্তমান কালই এ কাব্যে সত্য। যা প্রত্যক্ষ সত্য- তা সহজ। ঋতুর মধ্যে এ কাব্যে শরতের প্রাধান্য শরৎ শিশুর মতো সরল নির্মল। এতদসত্ত্বেও ক্ষণিকার কবিতাগুলোকে মোটামুটি মানুষ প্রধান, প্রকৃতি প্রধান, ক্ষণিকার ব্যতিক্রম ও জীবনদেবতা এ কয়ভাগে ভাগ করা যায়।

“উদবোধন' কবিতায় ক্ষণিক সুখের উৎসবে সকলের প্রতি কবির আহবান। মানুষের সাথে মানুষের সকল সম্পর্ককে কবি স্থিতরসের সাথে গ্রহণ করেছেন। ক্ষণিকায় কবি আর দশজনের মত মানুষ, কবিকে এখানে খোঁজা নিরর্থক। এখানে ভালোবাসার সময় স্বল্প, স্থান সংকীর্ণ। সামান্য বিরলতাতেই কবি খুশি। তা না মিললে কবি বনে গিয়ে বাস করবেন । 

পরকাল নিয়ে কবির ভাবনা নেই। চুলে পাক ধরলেও সেদিকে খেয়াল নেই, তাঁর কথা ইহকালের সুখ-দুখের সংগীত শোনানোই তাঁর কাজ। আজ কবি প্রেমকে অপার্থিব নয়, বরং জীবনের মধ্যে নিহিত দেখলেন । জীবনের আর আর বিষয়ের সাথে প্রেমও সমান আসনে অধিষ্ঠিত হল। এখানে বিরহেও বুকফাটা কান্না নেই। মিলন যেমন স্বাভাবিক, বিরহও তেমনি। নব নব দিগন্তের ধারে নুতন নুতন মুখচ্ছবি জেগে উঠে চিত্ত ভরে তোলে। 

জীবনের বারো আনা দুঃখের মূল কারণ মনের ভুল বোঝা। বহুযুগ ধরে একত্রে বাস করেও দেহ ও মনের বোঝাপড়া সম্পূর্ণ হয় না। ফলে হৃদয়ের ব্যথাকে হালকা করে জগতে চলতে পারাটাই কর্তব্য । তাছাড়া মন না পেয়েও কবি দুঃখ পান না – কারণ কেউ কারও মনের

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ