হুতোম প্যাঁচার নকশা সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ
হুতুম প্যাচার নকশা' সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ
হুতুম প্যাচার নকশা' সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ |
উত্তর : বাংলা গদ্যের পরীক্ষানিরীক্ষা পর্যায়ে প্যারীচাঁদ মিত্র গদ্যের ভাবে ও ভাষায় যে পরিবর্তন এনেছিলেন। কালীপ্রসন্ন সিংহ [১৮৪০-৭০] কর্তৃক ব্যবহৃত হয়ে তা পূর্ণতার পর্যায়ে উপনীত হয়েছিল। কলকাতার জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ধনবান ও সংস্কৃতিপোষক সিংহ পরিবারে তাঁর জন্ম।
তিনি অল্প বয়সেই সাহিত্য সাধনায় আত্মনিয়োগ করেন। তিনি ছিলেন বিদ্বান, বিদ্যোৎসাহী, স্বদেশ ও স্বজাতিবৎসল। মাত্র তেরো বছর বয়সে তিনি বাংলা ভাষা অনুশীলনের বিদ্যোৎসাহিনী সভার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সমকালীন সমাজের উচ্ছৃঙ্খলতা তাঁকে স্পর্শ করতে পারেনি।
কালীপ্রসন্ন সিংহ। তাঁর নকশাতে তৎকালীন সমাজের বিকৃত জীবনধারার পরিচয় তুলে ধরেছেন। ‘হুতুম প্যাঁচার নকশা’[১৮৬২] মূলত নকশ জাতীয় গদ্যগ্রন্থ। উনিশ শতকের মধ্যভাগে কলকাতাবাসী ধনীসমাজের ব্যঙ্গরসাত্মক চিত্র এই গ্রন্থে অঙ্কিত হয়েছে।
নব্য- সভ্য তথা নব্য ধনিক শ্রেণির নগরজীবনের স্বরূপ চিত্রিত হয়েছে আলোচ্য পুস্তকে। কলকাতার হুজুগপ্রিয় ধনী মধ্যবিত্ত ও সাধারণ সমাজ, উৎসব অনুষ্ঠানের বিকৃত রূপ, শিক্ষিত যুবক, ঘোর ব্রাহ্মণ, চড়ক, গাজন,দুর্গোৎসব, মাহেশের রথ, চাকুরে বাবু, মোসাহেব পরিবৃত জমিদার, পথের ভিখারী, কেরানি, দোকানী, হাটুরে, পুরুতঠাকুর ইত্যাদি হুতুম প্যাঁচার উপজীব্য।
‘হুতুম প্যাচা’য় সমাজের সব ধরনের মানুষই স্থান পেয়েছে সত্য, কিন্তু তিনি মূলত আক্রমণ করেছেন ‘হঠাৎ বাবু হয়ে উঠাদের' নিয়ে। নানা ধরনের ফন্দিফিকির ও জান জোচ্চুরি করে যারা হঠাৎ ধনী বনে যায় এবং ধনের জোরে পাপ, পঙ্কিলতায় গা ভাসিয়ে দেয়, কালীপ্রসন্ন সিংহ মূলত তাদেরই আক্রমণে জর্জরিত করেছেন।
‘হুতুম প্যাঁচার নকশা' গ্রন্থের বিষয়বস্তুর মতো ভাষারও বিশিষ্টতা বিদ্যমান। গ্রন্থে যে ভাষা ব্যবহৃত হয়েছে তা কথ্যরীতি আশ্রিত এবং এতে কলকাতা অঞ্চলের উপভাষার প্রভাব ব্যাপকতর। লেখক এ গ্রন্থে মুখের ভাষাকে একেবারে ভেঙেচুরে যেখানে যেভাবে ব্যবহার করা প্রয়োজন সেভাবে ব্যবহার করেছেন।
বাংলা ভাষায় নিরঙ্কুশ কথ্যভাষার সুষ্ঠু ব্যবহার তাঁর আগে আর কেউ দেখাতে পারেনি। ‘হুতুম প্যাঁচার নকশা'য় লেখক নিরঙ্কুশভাবে কথ্যরীতির ব্যবহার করেছেন। ফলে তাঁর রচনা কিছুটা লঘুরূপ ধারণ করলেও তাঁর প্রচেষ্টা মোটামুটিভাবে সফল হয়েছে।