বৈষ্ণব পদাবলী বৈষ্ণবতত্ত্বের রসভাষ্য আলোচনা কর
বৈষ্ণব পদাবলী বৈষ্ণবতত্ত্বের রসভাষ্য।” – আলোচনা কর ।
![]() |
বৈষ্ণব পদাবলী বৈষ্ণবতত্ত্বের রসভাষ্য।” – আলোচনা কর |
উত্তর: প্রাচীন বাংলা সাহিত্যে ‘পদাবলী' একটি বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছে। বিশ্ব সাহিত্যেও ‘পদাবলী' বাঙালির অন্যতম অবদান। মূলত বৈষ্ণব কবিতা ধর্মমূলক কবিতা। বৈষ্ণব কবিদের ধর্ম— প্রেমধর্ম।
যে প্রেমের কোন হেতু নেই, যে প্রেম কোন বাধা মানে না, যে প্রেম কোন প্রতিদান চায় না, যে প্রেমে আত্মসুখের কোন কামনাই নেই, যে প্রেম ইন্দ্রসম ঐশ্বর্যকেও তুচ্ছজ্ঞান করে, যে প্রেম মৃত্যুকেও ভয় করে না, যে প্রেম মরণজয়ী, বৈষ্ণব কবিদের প্রেম সেই প্রেম।
শ্রীচৈতন্য প্রবর্তিত গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্মের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ভগবানের মাধুর্যের সংবাদ। কারণ, শ্রীকৃষ্ণ জীবের একমাত্র প্রিয়, তাই জীবও শ্রীকৃষ্ণের প্রিয়, কারণ প্রিয়ত্ব ভাবটি পারস্পরিক। এজন্যই ভগবান ভক্তবাঞ্ছা কল্পতরু। জীবের মধ্যে যে সুখ বাসনা আছে, তা ইন্দ্রিয়জ বা সাংসারিক সুখ ভোগে চরিতার্থতা পায় না। ভগবানের প্রেম হৃদয়ে লাভ করতে পারলেই মানুষ যথার্থ আনন্দিত হতে পারে।
তাই শ্রীকৃষ্ণকে ভগবানের অর্থাৎ পরমাত্মার এবং রাধাকে জীবাত্মার প্রতীকে বৈষ্ণবেরা এ প্রেম ব্যক্ত করেছেন।শ্রীকৃষ্ণের অনুগ্রহ ভিন্ন মানুষের মোক্ষলাভ সম্ভব নয়। বৈষ্ণবদের মতে প্রভুর অনুগ্রহ পাওয়া যাবে ভক্তি দিয়ে। জাগতিক মায়া থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার একমাত্র উপায় ভগবানের শরণাগত হওয়া।
প্রেম সহযোগে ভক্তির সাথে ভজনা করে কৃষ্ণের চরণে তন্ময় আত্মসমর্পণ করতে পারলেই জীব মায়ামুক্ত হতে পারে। শ্রদ্ধাভক্তি সাধনায় চিত্ত বিশুদ্ধ হয়, চিত্ত বিশুদ্ধ হলে চিত্তে উদয় হয় প্রেমের। কিন্তু প্রথমেই কৃষ্ণপ্রেম পূর্ণতা পায় না। স্তর অতিক্রম করে করেই প্রেম পূর্ণতা পায়। প্রেম পূর্ণতা পাওয়ার স্তরগুলো হচ্ছে- রতি, প্রেম, স্নেহ, মান, রাগ, প্রণয়, অনুরাগ, ভাব ও মহাভাব।
চৈতন্যোত্তর বৈষ্ণব পদকর্তারা কৃষ্ণপ্রেমের পূর্ণতা প্রাপ্তিতে পূর্বরাগ, অভিসার, মান, কলহান্তরিতা, প্রেমবৈচিত্র্য, আক্ষেপানুরাগ, মাথুর, ভাবসম্মেলন। এভাবে গাঢ়তা অনুসারে স্তর নির্দেশ করেছেন।