হঠাৎ বুঝি ভয় পেয়ে যায় ও ফুক করে নিভিয়ে দেয় মোমটা ব্যাখ্যা কর
হঠাৎ বুঝি ভয় পেয়ে যায় ও। ফুক করে নিভিয়ে দেয় মোমটা ব্যাখ্যা কর ।
![]() |
হঠাৎ বুঝি ভয় পেয়ে যায় ও। ফুক করে নিভিয়ে দেয় মোমটা ব্যাখ্যা কর |
শহীদুল্লাহ কায়সার বাংলা সাহিত্যের একজন শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক। তিনি নানামুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। সংশপ্তক উপন্যাসটি তার এক অনবদ্য সৃষ্টি। ১৯৪৭ পরবর্তী বাংলা সামন্তবাদী সমাজ, বুর্জোয়া সমাজ, উঠতি ফটকা ও ধনতান্ত্রিক সমাজের কাহিনি অবলম্বন করে সংশপ্তক উপন্যাসটি নেওয়া হয়েছে।
১৯৪৭ সালের পরবর্তী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা যে ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল সেটি ছিল 'সংশপ্তক' উপন্যাসের বিষয়বস্তু। ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগ পরবর্তী কলকাতা ও পূর্ব বাংলার থান তালতলী, বাকুলিয়া, ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানের মানুষের পটভূমি এখানে উঠে এসেছে। বাকুলিয়া সৈয়দ বাড়ির মুন্সির ছেলে মালু। সে শিল্পী। শিল্পী হিসেবে চাকরির জন্য সে কলকাতায় আসে।
কলকাতায় সে হিন্দু পরিচয়ে রাকিব সাহেবের হোটেলে উঠে। কলকাতার আরেক শিল্পী শচীন বাবুর সাথে তার পরিচয় হয়। কলকাতায় মালু যখন আসে তখন চারদিকে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, জ্বালাও পোড়াও। কলকাতার আকাশে যেন আগুনের ফুলকী ।
চারিদিকে অলিগলি মিছিল “বন্দেমাতরম”, “আল্লাহু আকবর" এই শব্দে কলকাতা শহর যেন লাশের মিছিলে এবং রক্তের বন্যায় বয়ে যাচ্ছে। চারদিকে হিন্দু মুসলমানের টানাপোড়েনের সম্পর্ক। মালু কলকাতায় হিন্দু পরিচয়ে উঠে রাকিব সাহেবের হোটেলে। চারদিকে শুধু পাশবিকতার হুংকার হয়ে যেন ধেয়ে আসছে স্তব্ধধ্বনি। উলঙ্গ হিংস্র এক মৃত্যু ঘোষণা যেন সে ধ্বনির আড়ালে।
মোমটা জ্বালিয়ে কাছে গিয়ে বসলেন শচীন বাবু। ভয়ে বুঝি কাঠ হয়ে বসে আছেন রাকিব সাহেব। শচীন বাবুকে কাছে পেয়ে ধড়ে যেন প্রাণটা ফিরে এসেছে। চারিদিকে মৃত্যুর খবর। বাইরের মৃত্যুটা যেন চুপিসারে ঢুকে পড়েছে ওদের পারে। মৃত্যুর মতো স্তব্ধতা ঘরময়। শুধু মোমের শিখাটি মৃদু কাঁপছে। মালুর মনে গোটা পাড়াটাই আসলে ভীতির কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে।
ভয় পেয়েছে বলে মানুষগুলো চেঁচিয়ে চিল্লিয়ে পরস্পর থেকে সাহস সংগ্রহ করার চেষ্টা করছে। ফিস ফিস গলাটা আর কিছুই নয়। শুধু পড়শির কাছে একটু ভরসা চাওয়া। পড়শিকে জানিয়ে দেওয়া আমিও আছি। জানালার পাশে বসে কখন মালু নাক ডাকতে শুরু করেছে।
ফু দিয়ে মোমটা নিভিয়ে দিলেন রাকিব সাহেব। বসে বসে বুঝি ঝিঁ ঝিঁ লেগে গেছে পায়ে। কলকাতার বিজ্ঞলী আলোকে নিষ্প্রভ করে দিয়ে বুঝি আগুনের আলো জ্বলছে আকাশে। সারা কলকাতার
পরিশেষে বলা যায় যে, সাতচল্লিশের দাঙ্গার সময় মানুষের জীবনে যে ভয়ঙ্কর চিত্র দেখা দিয়েছিল তা উক্ত কথার মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছে। হিন্দু মুসলমান সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কারণে অনেক মানুষের জীবনে ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল।