প্রহসন ও নাটকের মধ্যে পার্থক্য নিরুপণ কর
প্রহসন ও নাটকের মধ্যে পার্থক্য নিরুপণ কর
প্রহসন ও নাটকের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ কর |
উত্তর : প্রহসন একপ্রকার নাট্য সৃষ্টি যেখানে হাস্যরসময় জীবনের আলেখ্য রূপায়িত হয়। সমাজের কুরীতি সংশোধনের জন্য রহস্যময় ঘটনা সংবলিত হাস্যপ্রধান একাঙ্কিকা নাটককে প্রহসন বলে।
এতে চরিত্রের চেয়ে ঘটনা বিন্যাসের দিকে বেশি দৃষ্টি দেওয়া হয়। প্রহসনের মূল উদ্দেশ্য সমাজের নানান অসঙ্গতি, উচ্ছৃঙ্খলতা, কুপ্রথা, অনাচার ইত্যাদিকে ব্যঙ্গাত্মক রসঘন উপস্থাপনায় তুলে ধরা। রামনারায়ণ তর্করত্ন, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, দীনবন্ধু মিত্র, মীর মশাররফ হোসেন, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখ বাংলা প্রহসনের ধারাকে সমৃদ্ধ করেছেন।
অভিনয় এবং সংলাপের শিথিলতা সত্ত্বেও বলা যেতে পারে প্রহসন সামাজিক সংশোধনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। একাঙ্কিকা হওয়ায় স্বল্প পরিসরেই একটি দৃষ্টান্তমূলক পরিণতিকে উপস্থাপন সম্ভব ।
অভিনয় কুশলতাই নাটকের প্রাণ। পাত্র-পাত্রীর অভিনয়ে ফুটে উঠে মানবজীবনের ঘটনাবহুল বিচিত্র পটভূমি। রস ভাব ব্যঞ্জন সহযোগে আনন্দদান নাটকের উদ্দেশ্য। নাটকে সুসংবদ্ধ কাহিনি, জীবনবাস্তবতা, পরিবেশ পরিস্থিতি হবে জীবনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।
স্থান, কাল ও ঘটনার ঐক্য' নাটকের প্রধান বিবেচ্য বিষয়। সাধারণত পাঁচ অঙ্কে বিভাজিত হয় নাটক।
১. প্রারম্ভ,
২. প্রবাদ,
৩. উৎকর্ষ,
৪. গ্রন্থিমোচন এবং
৫. উপসংহার ।
প্রহসন ও নাটকের মধ্যে পার্থক্য :
- প্রহসনের পরিসর সীমিত।
- প্রহসন উদ্দেশ্যমূলক রচনা
- প্রহসন সাধারণত ব্যঙ্গরসাশ্রিত
- প্রহসনের ভিতরে সমাজ সংশোধনের জন্য কিছু চরিত্র তুলে ধরা হয়।
- প্রহসন এক অঙ্ক বিশিষ্ট।
- নাটকের পরিসর বিস্তৃত ।।
- নাটক জীবনঘনিষ্ঠ কাহিনির বর্ণনা।
- নাটকে যেকোনো রস থাকতে পারে।
- নাটকের ভিতরে মানবজীবনের বিচিত্র বিষয় তুলে ধরা হয়।
- নাটক সাধারণত পাঁচ অঙ্ক বিশিষ্ট।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, প্রহসন সমাজের প্রয়োজনে সৃষ্টি হয়েছে বাংলার নাট্যকারদের হাতে। এর মধ্যে বক্তব্য অভিনয়ের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়, তা সমাজশুদ্ধির জন্য আবশ্যক।
নাটক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কোনো শিল্পকর্ম নয়। নাটকের বিষয়বস্তু বাস্তব বিবর্জিত কোনো অলীক ঘটনার সমষ্টি নয়। বাংলা সাহিত্যে নাটকের জন্ম হয় অনেক পরে। বিশেষত মাইকেল মধুসূদন দত্তের পূর্বে কোনো নাটক ছিল না। যা ছিল তা নকশাজাতীয় কাহিনি।