নিমলার বাগানের সৌন্দর্য আলোচনা কর
নিমলার বাগানের সৌন্দর্য আলোচনা কর ।
নিমলার বাগানের সৌন্দর্য আলোচনা কর |
উত্তর : দূরে থেকেই সারি সারি চিনার গাছ চোখে পড়ল। সুপারির চেয়ে উঁচু সোজা আকাশ ফুঁনিমলার বাগানের সৌন্দর্য আলোচনা করড়ে উঠেছে। বুক অবধি ডালপাতা নেই, বাকিটুকু মসৃণ ঘন পল্লবে আন্দোলিত।
আমাদের বাঁশপাতার সঙ্গে কটি অশত্থ পাতার সৌন্দর্য মিলিয়ে দিয়ে দীর্ঘ বিনুনির মত যদি কোনো পল্লবের কল্পনা করা যায় তবে তাই হয় চিনারের পাতা। কিন্তু তার দেহটির সঙ্গে অন্য কোনো গাছের তুলনা হয় না।
ইরানি কবিরা উচ্ছ্বসিত হয়ে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে তম্বঙ্গী তরুণীর রূপভঙ্গিমা রাগভঙ্গিমার সঙ্গে চিনারের দেহসৌষ্ঠবের তুলনা করে এখনো তৃপ্ত হন নি। মৃদুমন্দ বাতাসে চিনার যখন তার পা থেকে মাথা পর্যন্ত ধীর মন্থরে আন্দোলিত করে, তখন রসকষহীন পাঠান পর্যন্ত মুগ্ধ হয়ে বারে বারে তার দিকে তাকায়।
সুপারির দোলের সঙ্গে এর খানিকটা মিল আছে কিন্তু সুপারির রঙ শ্যামলিমাহীন কর্কশ আর সমস্তক্ষণ ভয় হয়, এ বুঝি ভেঙে পড়ল। মনে হয়, মানুষ ছাড়া অন্য যে কোনো প্রাণী চিনারের দেহচ্ছন্দকে তরুণীর চেয়ে মধুর বলে স্বীকার করবে।
বেতারওয়ালা ভারতবর্ষের ইতিহাসের কোনো খবরই রাখেন না। সর্দারজীর কাছ থেকে বেশি আশা করাও অন্যায়, কিন্তু তিনিই বললেন, নিমলার বাগান আর তাজমহলের বাগান নাকি একই সময়কার। নিমলার বাগানে যে প্রাসাদ ছিল, সেটি অভিযান আক্রমণ সহ্য না করতে পেরে অদৃশ্য হয়েছে কিন্তু সারিবাঁধানো রমণীর চিনারগুলো নাকি শাহজাহানের হুকুমে পোঁতা।
সর্দারজীর ঐতিহাসিক সত্যতা এখানে অবশ্য উদ্ভিদবিদ্যা দিয়ে পরখ করে নেবার সম্ভাবনা ছিল, কিন্তু এ অজানা অচেনা দেশে শাহজাহানের তৈরি তাজের কনিষ্ঠ উদ্যানে ঢুকছি কল্পনা করাতে যে সুখ, উদ্ভিদতত্ত্বের মোহমুগ্ধর দিয়ে সে৩৮০দিকদর্শন প্রকাশনী লিমিটেডমায়াজাল ছিন্ন করে কি এমন চরম মোক্ষলাভ! বাগানে আর এমন কিছু চারুশিল্পও নেই যার কৃতিত্ব শাহজাহানকে দিয়ে দিলে অন্য কারো ভয়ংকর ক্ষতি হবে।
আর এ কথাও তো সত্য যে, শাহজাহানের আসন উঁচু করার জন্য নিমলার বাগানের প্রয়োজন হয় না এক তাজই তাঁর পক্ষে যথেষ্ট।তবু স্বীকার করতে হবে, অতি অল্প আয়াসের মধ্যে উদ্যানটি প্রাণাভিরাম। চিনারের সারি, জল দিয়ে বাগান তাজা রাখবার জন্য মাঝখানে নালা আর অসংখ্য নারগিস ফুলের চারা।
নারগিস ফুল দেখতে অনেকটা রজনীগন্ধার মতো, চারা হুবহু একই রকম অর্থাৎ ট্যুবরোজ জাতীয়। গ্রিক দেবতা নারসিসাস নাকি আপন রূপে মুগ্ধ হয়ে সমস্ত দিন নদীর জলে আপন চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকতেন।
দেবতারা বিরক্ত হয়ে শেষটায় তাঁকে নদীর পাড়ের ফুল গাছে পরিবর্তিত করে দিলেন। এখনো নারসিসাস ফুল ফারসিতে নারগিস ঠিক তেমনি নদীর জলে আপন ছায়ার দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকে ।