মহাকাব্য কাকে বলে | মহাকাব্যের বৈশিষ্ট্যসমূহ লেখ

মহাকাব্য কাকে বলে ? মহাকাব্যের বৈশিষ্ট্যসমূহ লেখ

মহাকাব্য কাকে বলে  মহাকাব্যের বৈশিষ্ট্যসমূহ লেখ
 মহাকাব্য কাকে বলে  মহাকাব্যের বৈশিষ্ট্যসমূহ লেখ

উত্তর : মহাকাব্য আদি, মধ্য ও অন্ত্য সংবলিত বর্ণনাত্মক কাব্য। মানবজীবনের গভীর ও সমগ্র অনুভবের শিল্পরূপ হচ্ছে মহাকাব্য। সাহিত্যের এ প্রাচীন ফর্মটি জীবনের সমগ্রতা সন্ধানী। 

মানুষের চিরায়ত শিল্প অন্বেষার কাছে মহাকাব্যের "মূল্য অপরিসীম। শিল্পতাত্ত্বিক ও সাহিত্যরসিকদের কাছে মহাকাব্যের আবেদন অনিঃশেষ। 

সেজন্যেই এরিস্টটল থেকে শুরু করে এ কালের কাব্যতাত্ত্বিকরাও মহাকাব্য বিষয়ে আলোচনা অব্যাহত রেখেছেন ।মহাকাব্য বলতে যে অতিকায় কবিকৃতি বুঝায় এককথায় তার যথার্থ সংজ্ঞা নির্ণয় করা সম্ভব নয়। 

এ সুপ্রাচীন সাহিত্য সৃষ্টি প্রাচ্যে পাশ্চাত্যে স্বতন্ত্রভাবে বিকাশলাভ করেছিল বলে এর সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য ভিন্নতা বিদ্যমান। বাংলা মহাকাব্য রচনায় প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য উভয় শ্রেণির মহাকাব্যের আদর্শ প্রভাব বিস্তার করেছে বলে তাদের সম্পর্কে অবহিত হওয়া প্রয়োজন ।

সাধারণত বীররসাত্মক আখ্যানকাব্যকে মহাকাব্য বলে, ইংরেজিতে বলে Epic । প্রাচীন সংস্কৃতে বাল্মীকি রামায়ণ ও বেদব্যাস রচিত মহাভারত এবং প্রাচীন গ্রিসে কবি হোমার রচিত 'ইলিয়াড' ও 'অডিসি'- পৃথিবীতে মোট ৪টি সুপ্রাচীন মহাকাব্য লেখা হয়েছে। 

বাংলা ভাষায় যে দু একজন কবি মহাকাব্য রচনা করার চেষ্টা করেছেন, তাঁদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য মাইকেল মধুসূদন দত্ত। তাঁর রচিত 'মেঘনাদবধ কাব্য' বাংলা ভাষায় শ্রেষ্ঠ মহাকাব্য ।

পাশ্চাত্য আলংকারিক এরিস্টটলের মতে, মহাকাব্য আদি, মধ্য ও অন্ত্য সংবলিত বর্ণনাত্মক কাব্য। এতে বিশিষ্ট কোনো নায়কের জীবনকাহিনী অথগুরূপে একই বিরোচিত ছন্দে কীর্তিত হয়। 

An epic should be on based on a single action. One that is a complete whole in itself, with a begining middle and end, so as to enable the work to produce its own proper pleasure with all the organic unity of a living creature. As for the metre the heroic has been assigned it from experience." 

অর্থাৎ, এর কাহিনি ট্র্যাজেডির মতো নাটকীয় ধারায় নির্মিত হবে, কাহিনি গড়ে উঠবে আদি-মধ্য-অস্ত সম্বলিত সম্পূর্ণ এবং পরিপূর্ণ একটিমাত্র ঘটনাকে কেন্দ্র করে, যাতে একটি পরিপূর্ণ একক জীবদেহের মতো কবিতা তার নিজস্ব বিশেষ ধরনের আনন্দ সৃষ্টি করবে।

এরিস্টটল মহাকাব্যের সঙ্গে ট্র্যাজেডির সাজুয্যের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, “মহাকাব্য ট্র্যাজেডির মতোই একইভাবে বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত হবে। যেমন- সরল, জটিল, চরিত্র নির্ভর এবং যন্ত্রণাদায়ক। সংগীত এবং দৃশ্য সজ্জার বিষয়টি বাদ দিয়েও এর অপরিহার্য অঙ্গগুলোর সংখ্যা হবে সমান। 

কারণ এর বৈপরীত্য এবং আবিষ্কার এবং ট্র্যাজিক ঘটনা থাকবে, তদুপরি এর মান ও রচনাশৈলী হবে উন্নতমানের।"

বাংলা মহাকাব্যের বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপ : 

১. মহাকাব্য বড় একটা ঘটনাকে আশ্রয় করে রচিত হবে এবং সে ঘটনা হবে ঐতিহাসিক বা পৌরাণিক ।

২. মহাকাব্যের নায়ক হবে সদৃশজাত ধীরোদ্ধত গুণ সম্পন্ন ব্রাহ্মণ অথবা ক্ষত্রিয়।"

৩. শৃঙ্গার, বীর বা শান্ত এ জাতীয় রস কাব্যের প্রধান রস বলে বিবেচিত হবে।

৪. কাব্যের সর্গ সংখ্যা থাকবে অষ্টাধিক।

৫. ছন্দ বৈচিত্র্যসহ সর্গটি এক ছন্দে রচিত হবে। 

৬.পটভূমি হতে হবে সর্গ, মর্ত্য ও পাতাল প্রসারী এবং তাতে যুদ্ধ, মৃগয়া, প্রকৃতি ও সমুদ্রের বর্ণনা থাকবে। 

৭. গ্রন্থের শুরুতে থাকবে আশীর্বাদ, নমস্কার ও বস্তু নির্দেশ। 

৮. মহাকাব্য পাঠে ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ এ চতুবর্গ ফল লাভ হবে।

৯. বিষয় অনুযায়ী সর্গের নামকরণ করতে হবে এবং নায়কের নাম বা কাব্যের বর্ণনীয় বিষয় অনুসারে মহাকাব্যের নামকরণ করতে হবে।

মহাকাব্য মানুষের ইতিহাস, যুগের ইতিহাস, জাতির ঐতিহ্যের ইতিহাস। রসাত্মক কাহিনির মধ্য দিয়ে একটা যুগকে বিধৃত করে তার পরিপূর্ণ পরিচয় উদ্ঘাটনের মধ্য দিয়ে মহাকাব্যের চরম ও পরম সার্থকতা।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ