কমলাকান্তের দপ্তর প্রবন্ধে আত্মগত উপলব্ধি মূলক রচনা গুলির বর্ণনা দাও

কমলাকান্তের দপ্তর' প্রবন্ধের আত্মগত উপলব্ধিমূলক রচনাগুলোর বর্ণনা দাও।
কমলাকান্তের দপ্তর' প্রবন্ধের আত্মগত উপলব্ধিমূলক রচনাগুলোর বর্ণনা দাও

উত্তর : আত্মগত উপলব্ধিমূলক রচনাগুলোর মধ্যে প্রথমেই উল্লেখ করতে হয় ‘একা’র কথা। এর মর্মবাণীটি একাকিত্বের এক অনির্দেশ্য বেদনার হাহাকার থেকে উৎসারিত। বহুপূর্বশ্রুত সংগীতের সুর কমলাকান্তের হৃদয়ের তরে নাড়া দিল; এক অনির্বচনীয় সুখে তার শরীর শিহরিত হয়ে উঠল।

সে জানে না কেন এ শিহরন! ‘আমি একা তাই এ সংগীতে আমার শরীর কণ্টকিত হইলো। ... আমি একা। কেউ একা থাকিও না। এরপরই বিগত যৌবনের সুমধুর স্মৃতি থেকে সূক্ষ্ম হাহাকার উত্থিত হয়, সে প্রফুল্লতা, সে সুখ আর নাই কেন? ... তবে বয়সে স্ফূর্তি কমে কেন? পৃথিবী আর তেমন সুন্দর দেখা যায় না কেন?'

কিন্তু এ আক্ষেপ প্রশমিত হয়ে আসে এ বোধে ‘প্রীতি সংসারে সর্বব্যাপিনী ঈশ্বরই প্রীতি। প্রীতিই আমার এক্ষণকার সংসার সংগীত। একাকিত্বের বেদনা দিয়ে যার শুরু, মানবপ্রীতিতে আত্মোৎসর্গের মধ্যে তার সমাপ্তি।'

আমি ‘আমার মন’ -এ কমলাকান্ত তার হারানো মনের অনুসন্ধানে ব্যাপৃত, ‘আমার মন কোথায় গেল? কে লইলো? কিন্তু মন অনুসন্ধান অচিরেই এ উপলব্ধিতে বিলীন হয় যে, আমি কখনো কিছুতে মন বাঁধি নাই- এজন্য কিছুতেই মন নাই। চিরকাল আপনার রহিলাম- পরের হইলাম না, এজন্যই পৃথিবীতে আমার সুখ নাই।

পরের জন্য আত্মবিসর্জন ভিন্ন পৃথিবীতে স্থায়ী সুখের অন্য কোন মূল্য নাই ।... আমি সুখী নহি । কেন হইব? আমি পরের জন্য দায়ী নই, সুখে আমার অধিকার কি?

‘আমার মন’- এ শুধু মন ও সুখের অনুসন্ধানের কথা নেই, আছে ধনতন্ত্রের সর্বব্যাপী শক্তির প্রসঙ্গও। মানুষে মানুষে প্রণয় সঞ্চারের কথা বলতে গিয়ে কমলাকান্ত প্রস্তাব করেছে, তোমরা এত কল করিতেছে, মনুষ্যে মনুষ্যে প্রণয় বৃদ্ধির জন্য কী একটা কিছু কল হয় না?'

‘বসন্তের কোকিল’-এ শুরুতে বসন্তের কোকিলের রূপকের আড়ালে সুদিনের সঙ্গীদের তীব্র কটাক্ষ করা হয়েছে। কিন্তু পরক্ষণেই হৃদয়ের বেদনার সুর মন্ত্রিত হয়েছে, অনন্ত সুন্দরের সন্ধানে কোকিলকে সঙ্গী করে কমলাকান্ত বলেছে, “এখন আয় পাখী! তোতে আমাতে একবার পঞ্চম গাই ৷ 

তুই পঞ্চম স্বরে কারে ডাকিস? আমিই বা কারে?... যে সুন্দর তাকেই ডাকি; যে ভালো তাকেই ডাকি।”এ রোমান্টিক সন্ধান একটি কামনার রূপ পেয়ে যায়,“যদি কোকিলের কণ্ঠ পাই অমানুষী ভাষা পাই, আর নক্ষত্রদিগকে শ্রোতা পাই, মনের কথা বলি।”

“পুনরায় রোমান্টিক কল্পনা উঁকি দেয়, ঐ নীলাম্বর মধ্যে প্রবেশ করিয়া, ঐ নক্ষত্রমণ্ডলী মধ্যে উড়িয়া কখন কী কুহু বলিয়া ডাকিতে পাইব না?” এছাড়া ‘আমার কমলাকান্তের দপ্তর' প্রবন্ধের আত্মগত উপলব্ধিমূলক রচনাগুলোর বর্ণনা দাও।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ