কাবুলের পাহাড় ও প্রকৃতির বর্ণনা দাও

কাবুলের পাহাড় ও প্রকৃতির বর্ণনা দাও।
কাবুলের পাহাড় ও প্রকৃতির বর্ণনা দাও।

কাবুলের পাহাড় ও প্রকৃতির বর্ণনা দাও।

উত্তর : কাবুলের সবচেয়ে উঁচু পাহাড় থেকে বেলা বারোটার কামান দাগার শব্দ। সবাই আপন আপন ট্যাকঘড়ি খুলে দেখবেন- হাতঘড়ির রেওয়াজ কম ঘড়ি ঠিক চলছে কি না। কাবুলে এ রেওয়াজ অলঙ্ঘনীয়। 

ঘড়ি না-বের করা স্নবের লক্ষণ,-‘আহা যেন একমাত্র ওয়ার ঘড়িরই চেক-আপের দরকার নেই' যাঁদের ঘড়ি কাঁটায় কাঁটায় বারোটা দেখালো না, তাঁরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবেন। কাবুলের কামান নাকি ইহজন্মে কখনো ঠিক বারোটার সময় বাজে নি। 

কারো ঘড়ি যদি ঠিক বারোটা দেখাল তার তবে রক্ষে নেই। সকলেই তখন নিঃসন্দেহ যে, সে ঘড়িটা দাগি-খুনী-ওদের ঘড়ির মতো বেনিফিট অব ডাউট পেতে পারে না। গান্ধার শিল্পের বুদ্ধমূর্তির চোখেমুখে যে অপার তিতিক্ষা, তাই নিয়ে সবাই তখন সে ঘড়িটার দিকে করুণ নয়নে তাকাবেন।

যখন ঘুম ভাঙবে, তখন দেখবেন সমস্ত বাগান নাক ডাকাচ্ছে- একমাত্র হুঁকোটা ছাড়া। ঠাণ্ডা দেশ বলে আফগানিস্তানের তামাক জাতে ভালো, কিন্তু সে তামাককে মোলায়েম করার জন্য চিটে-গুড়ের ব্যবহার কাবুলিরা জানে না, আর মিষ্টি-গরম ধিকধিকি আগুনের জন্য টিকে বানাবার কায়দা তারা এখনো আবিষ্কার করতে পারে নি। 

পড়ন্ত রোদে দীর্ঘ তরুর দীর্ঘতর ছায়া বাগান জুড়ে ফালি ফালি দাগ কেটেছে। সবুজ কালোর ডোরাকাটা নাদুসনুদুস জেব্রার মতো বাগানখানা নিশ্চিন্দি মনে ঘুমোচ্ছে। নারগিস ফুল ফোটার তখনো অনেক দেরি, কিন্তু চারা-খেতের দিকে তাকিয়ে দেখা যায়, তারা যেন রোদ পড়ার সঙ্গে সঙ্গে চাঙা হয়ে উঠছে। 

কল্পনা না সত্যি বলতে পারা যাবে না, কিন্তু মনে হবে যেন অল্প অল্প গন্ধ সেদিক থেকে ভেসে আসছে। রাত্রে যে খুশবাইয়ের মজলিশ বসবে, তারি মহড়ার সেতারে যেন অল্প অল্প পিডিং পিডিং মিঠা বোল ফুটে উঠবে। জলে হাওয়ায়, মিঠে হাওয়ায় সমস্ত বাগান সুধাশ্যামলিমা, অথচ এ বাগানের গা ঘেঁষেই দাঁড়িয়ে রয়েছে হাজার ফুট উঁচু কালো নেড়া পাথরের খাড়া পাহাড়। 

তাতে এক ফোঁটা জল নেই, একমুঠো ঘাস নেই। বুকে একরত্তি দয়ামায়ার চিহ্ন নেই- যেন উলঙ্গ সাধক মাথায় মেঘের জটা বেঁধে কোনো এক মন্বন্তরব্যাপী কঠোর সাধনায় মগ্ন। পদপ্রান্তে গুলবাগের সবুজপরী কেঁদে কেঁদে কাবুল নদী ভরে দিয়েছে।

সমস্ত দিন দেখবেন, অজানা ফুল, অজানা গাছ, আধাচেনা মানুষ, আর অচেনার চেয়েও পীড়াদায়ক অপ্রিয়দর্শন শুষ্ক কঠিন পর্বত। হঠাৎ চেনা সপ্তর্ষি দেখে সমস্ত দেহমন জুড়ে দেশের চেনা ঘরবাড়ির জন্য কি এক আকুল আগ্রহের আঁকুবাঁকু ছড়িয়ে পড়বে। 

আফগানিস্তানের প্রকৃতি ও পাহাড়ের অপূর্ব সৌন্দর্য পাঠককে মুগ্ধ করে তোলে। 'দেশে বিদেশে' গ্রন্থে সৈয়দ মুজতবা আলী সে দেশের পাহাড় প্রকৃতির যে চিত্র মোহনীয় করে তুলে ধরেছেন, তাতে যে কোনো পাঠক মুগ্ধ না হয়ে পারে না।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ