হালচাষ সম্পর্কে খনার বচনে বিধি-নিষেধ উল্লেখ কর
হালচাষ সম্পর্কে খনার বচনে বিধি-নিষেধ উল্লেখ কর
অথবা, হালচাষ সম্পর্কে খনার বচনের সুপারিশ আলোচনা কর
উত্তর : বচন হচ্ছে মানবজীবনের দীর্ঘ অভিজ্ঞতার ফল। সে অভিজ্ঞতা একজনের হতে পারে বহুজনের হতে পারে আবার গোটা সমাজের হতে পারে। এটা দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ফল হলেও সংক্ষিপ্তভাবে প্রকাশিত হয়।
বচন শব্দটির অর্থ ভাষণ, কথন, অনুশাসন, আদেশ। বচনে সাধারণভাবে কৃষিকর্মের নিয়ম, আবহাওয়ার লক্ষণ ও ফলাফল, তিথি গণনা ও শুভাশুভ দিনক্ষণের হিসাব প্রভৃতি। এছাড়া খনার বচনে শস্যরোপণ, কর্তন, আলবন্ধন, বন্যার গণনা, মড়ক, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, আবহাওয়া প্রভৃতির কথার স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশ স্থান পেয়েছে।
বচনগুলো এক ধরনের সুস্থির ও সুশৃঙ্খল চিন্তার প্রকাশ লক্ষ করা যায়। তাই অনেকে বচনকে 'বিজ্ঞান মনস্কতার ফসল' বলে আখ্যায়িত করেন। বচনগুলোতে কৃষি বিষয়ক হাল-চাষ সম্পর্কে একাধিক উপদেশবাণী স্থান পেয়েছে।
যেমন- ক. “অমাবস্যা পূর্ণিমায় যে ধরে হালতার দুঃখ রয় চিরকাল।খ. "যে চাষা খায় পেট ভরে।গরুর পানে চায় না ফিরে"গরু বাছুর পায়না ঘাস সেই চাষার সর্বনাশ।"বচনগুলো অমাবস্য এবং পূর্ণিমায় হাল-চাষ না করার জন্য বলা হয়েছে।
আসলে অমাবস্য এবং পূর্ণিমার সময়ে হাল- চাষ করালে গরুগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে- আর এ থেকেই কৃষকের বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই এ সময়ে গরু দিয়ে হাল-চাষ করানো অনুচিত।
তাছাড়া চাষ দেওয়ার জন্য যেমন গরু কেনা উচিত এবং সেই গরু দিয়ে কেমন চাষ দেওয়া উচিত সে-সম্পর্কে বচনগুলোতে উপদেশবাণী বর্ষিত হয়েছে। যেমন-ক. “চিনিস বা চিনিস ।
খুঁজে দেখে গরু কিনিসঃ"খ. সবল গরু গভীর চাষ।তাতে পুরে মনের আশ ।কৃষিবিষয়ক অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করেই রচিত হয়েছে বচনগুলো। কোন জায়গায় এবং কোন সময়ে ভালো ফসল জন্যে তা বচনগুলো একটি সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা প্রদান করে।
মুলার জন্য গোল চাষ, তুলার জন্য আট চাষ, ধানের জন্য চার চাষ দিতে হয় বচনগুলোতে তারই প্রতিধ্বনি শোনা যায়। তাছাড়া সময়মতো চাষ না দিলে কৃষকের যে বারো মাস দুঃখ পেতেহয় তা বচনগুলোতে বলা হয়েছে। যেমন-
ক. "সময়ে না দেয় চাষ।তার মুখে বার মাস "
"খোল চাষে মূলাতার অর্ধেক তুলাতার অর্ধেক ধান বিনা চাষে পান।”
গ. "জ্যৈষ্ঠে শুকো আষাঢ়ে ধারা।শস্যের ভার না সহে ধরাঃ”বচনগুলোতে আবহাওয়া সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা থাকে।
কোন ঋতুতে বা কোন সময়ে ফসলের ক্ষতি হতে পারে বা লাভজনক হতে পারে তা বচনগুলোতে একাধিক উপদেশ বাণী স্থান পেয়েছে। কৃষির সাথে জড়িত বিভিন্ন সুবিধা অসুবিধা বচনগুলোতে তুলে ধরেছেন।
এতে কৃষক একদিকে যেমন হাল-চাষ সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারণা লাভ করে- তেমনি এ থেকে তারা উপকৃত হয়। তাছাড়া বাঙালির সংস্কৃতির একটি পরিচয়ও বিধৃত হয়েছে বচনগুলোতে। তাই বলা যায় বচনগুলো বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ।