একজন ইঙ্গবঙ্গ এর বৈশিষ্ট্য তুলে ধর

 একজন ইঙ্গবঙ্গের বৈশিষ্ট্য তুলে ধর।
একজন ইঙ্গবঙ্গের বৈশিষ্ট্য তুলে ধর।
 একজন ইঙ্গবঙ্গের বৈশিষ্ট্য তুলে ধর।

উত্তর : ‘য়ুরোপ প্রবাসীর পত্র' গ্রন্থের পঞ্চম পত্রে রবীন্দ্রনাথ একজন ইঙ্গবঙ্গের বিচিত্র বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেছেন। একজন নবাগত ইঙ্গবঙ্গের জন্য বাড়ি খোঁজার সময় দেখা যায় ইঙ্গবঙ্গ বন্ধুগণ বাড়িওয়লীর সঙ্গে অতি অসংকুচিত স্বরে কথাবার্তা আরম্ভ করে। 

এ দৃশ্য দেখে নবাগত ইঙ্গবঙ্গের বিস্ময়ের আদি অন্ত থাকে না। যেমন এক সজীব বিবিসাহেব জুতো পরা, টুপি পরা, গাউন পরা। তখন ইঙ্গবঙ্গ বন্ধুদের উপর সে নবাগত বন্ধুযুবকদের ভক্তির উদয় হয়, কোন কালে যে এ অসমসাহসিকদের মতো তাঁদের বুকের পাটা জন্মাবে, তা তাদের সম্ভব বোধ হয় না। 

এ নবাগতদের যথাস্থানে প্রতিষ্ঠিত করে দিয়ে ইঙ্গবঙ্গ বন্ধুগণ স্ব-স্ব আলয়ে গিয়ে সপ্তাহকাল ধরে তাঁদের অজ্ঞতা নিয়ে অপর্যাপ্ত হাস্যকৌতুক করেন।

ইঙ্গবঙ্গদের ভালো করে চিনতে গেলে তাদের তিনরকম অবস্থায় দেখতে হয়। তারা ইংরেজদের সম্মুখে কী রকম ব্যবহার করেন, বাঙালিদের সম্মুখে কী রকম ব্যবহার করেন ও তাদের স্বজাতি ইঙ্গবঙ্গদের সম্মুখে কী রকম ব্যবহার করেন। একটি ইঙ্গবঙ্গকে একজন ইংরেজের সম্মুখে দেখলে, চোখ জুড়িয়ে যাবে। ভদ্রতার ভারে প্রতি কথায় ঘাড় নুয়ে নুয়ে পড়ে। 

তর্ক করবার সময় অতিশয় সাবধানে নরম করে প্রতিবাদ করেন ও প্রতিবাদ করতে হলো বলে অপর্যাপ্ত দুঃখ প্রকাশ করেন। অসংখ্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। কথা বলুক আর না বলুক, একজন ইংরেজের কাছে একজন ইঙ্গবঙ্গ চুপ করে বসে থাকলেও তার প্রতি অঙ্গভঙ্গি, প্রতি মুখের ভাবে বিনয়ের পরাকাষ্ঠা প্রকাশ হতে থাকে। 

কিন্তু তাকেই আবার তার স্বজাতিমণ্ডলে দেখলে দেখতে পাবে তার অন্য রকম মেজাজ। বিলেতে যিনি তিন বৎসর আছেন, এক বৎসরের বিলেতবাসীর কাছে তাঁর অত্যন্ত পায়াভারী। 

এ তিন বৎসর ও এক বৎসরের মধ্যে যদি কখনো তর্ক উঠে, তাহলে তুমি 'তিন বৎসরের' প্রতাপটা একবার দেখতে পাও। তিনি প্রতি কথা এমনভাবে, এমন স্বরে বলেন যে, যেন সে কথাগুলো সরস্বতীর সঙ্গে তাঁর বিশেষ বোঝাপড়া হয়ে একটা স্থির সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। যিনি প্রতিবাদ করছেন তাঁকে তিনি স্পষ্টাক্ষরে বলেন, 'ভ্রান্ত', কখনো বা মুখের উপর বলেন 'মূর্খ'।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ