ইংল্যান্ডে নাচের অনুষ্ঠানের চিত্র তুলে ধর

 ইংল্যান্ডে নাচের অনুষ্ঠানের চিত্র তুলে ধর।
ইংল্যান্ডে নাচের অনুষ্ঠানের চিত্র তুলে ধর।
 ইংল্যান্ডে নাচের অনুষ্ঠানের চিত্র তুলে ধর।

উত্তর : নাচ বা ডান্স ইংরেজ সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। বিভিন্ন উৎসব ও অনুষ্ঠানের নাচ অবিচ্ছেদ্য একটি অংশ। নাচ ছাড়া কোনো অনুষ্ঠানই তাদের পরিপূর্ণতা পায় না। নাচের পোশাকও খুব জাঁকজমকপূর্ণ ও হয়ে থাকে । নাচের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় থাকে। 

সে নির্ধারিত সময়েই আমন্ত্রিত অতিথিগণ এসে উপস্থিত হন। শুরু হবার আগে দুয়ারের কাছে অতিথিদের অভ্যর্থনা জানানোর জন্য গৃহকর্ত্রী দাঁড়িয়ে থাকেন । তিনি বিশেষ পরিচিতদের অনুষ্ঠান সঙ্গে শেকহ্যান্ড করেন। অপরিচিতদের প্রতি শিরঃকম্পন ও সকলকে অভ্যর্থনা জানান। গোরাদের দেশে নিমন্ত্রণসভায় গৃহকর্তার বড়ো উঁচু পদ নেই। 

তিনি সভায় উপস্থিত থাকুন বা শয়নগৃহে ঘুমিয়ে থাকুন তাতে কারও বড় কিছু আসে যায় না। গ্যাসের আলোয় নাচের ঘর উজ্জ্বল থাকে। শত শত রমণীর রূপের আলোকে গ্যাসের আলো যেন ম্রিয়মাণ হয়ে পড়ে। অতিথিদের আগমনে রূপের উৎসব পড়ে যায়। ঘরের ভিতরে প্রবেশ করামাত্রই চোখে ধাঁধা লেগে যায়। 

ঘরের একপাশে পিয়ানো, বেহালা, বাঁশি বাজছে, ঘরের চারধারে কৌচ চৌকি সাজানো। ইতস্তত দেয়ালের আয়নার উপর গ্যাসের আলো ও রূপের প্রতিবিম্ব পড়ে ঝকমক করে। নাচবার ঘরের মেঝে কাঠের। তার উপর কার্পেট প্রভৃতি কিছু পাতা থাকে না। সে কাঠের মেঝে এমন পালিশ করা যে, পা পিছলে যায়। ঘর যত পিছল হয় ততই নাচবার উপযুক্ত হয়। কেননা পিচ্ছিল ঘরে নাচের গতি সহজ হয়। এমন ঘরে পা কোনো বাধা পায় না, আপনা আপনি পিছলে আসে। 

ঘরের চারদিকে আশপাশে যে সকল বারান্দার মতো আছে, তাই একটু ঢেকেঢুকে, গাছপালা দিয়ে, দু-একটি কৌচ চৌকি রেখে তাকে প্রণয়ীদের কুঞ্জ নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে। সেখানে নাচে শ্রান্ত হয়ে বা কোলাহলে বিরক্ত হয়ে যুবক যুবতী নিরিবিলি মধুরালাপে মগ্ন থাকতে পারেন। ঘরে ঢোকবার সময় সকলের হাতে সোনার অক্ষরে ছাপা এক একখানি কাগজ দেয়া হয়, সে কাগজে কী কী নাচ হবে তাই লেখা থাকে । ইংরেজি নাচ দুই শ্রেণিতে ভাগ করা যায়, এক রকম হচ্ছে স্ত্রী পুরুষে মিলে ঘুরে ঘুরে নাচা, তাতে কেবল দু'জন লোক একসঙ্গে নাচে। 

আর একরকম নাচে চারটি জুড়ি নর্তকনর্তকী চতুষ্কোণ হয়ে মুখোমুখি দাঁড়ায় ও হাত ধরাধরি করে নানা ভঙ্গিতে চলাফেরা করে বেড়ায়। কোনো কোনো সময় চার জুড়ি না হয়ে আট জুড়িও হয়। ঘুরে ঘুরে নাচকে রাউন্ড ডান্স বলে ও চলাফেরা করে নাচার নাম স্কোয়্যার ড্যান্স। নাচ আরম্ভ হবার পূর্বে গৃহকর্ত্রী মহিলা ও পুরুষদের মধ্যে আলাপ করিয়ে দেন অর্থাৎ পুরুষ অভ্যাগতকে সঙ্গে করে কোনো এক অভ্যাগত মহিলার কাছে নিয়ে গিয়ে পরিচয় করিয়ে দেন। 

কোন মিসের সঙ্গে পরিচয় হবার পর নাচবার ইচ্ছে করলে পকেট থেকে সে সোনার জলে ছাপানো প্রোগ্রামটি বের করে তাঁকে জিজ্ঞাসা করতে হয়, “আপনি কি অমুক নৃত্যে বাগদত্তা হয়ে আছেন?” তিনি যদি না বলেন তা হলে তাকে বলতে হবে, “তবে আমি কি আপনার সঙ্গে নাচবার সুখভোগ করতে পারি?” তিনি “থ্যাঙ্ক যু” বললে বুঝা যাবে কপালে তাঁর সঙ্গে নাচবার সুখ আছে। সাথে সাথে সে কাগজটিতে সে নাচের পাশে তাঁর নাম এবং তাঁর কাগজে আবেদনকারীর নাম লিখে দিতে হয়। 

একটা ঘরে চল্লিশ পঞ্চাশ জুড়ি নাচছে, ঘেঁষাঘেঁষি, ঠেলাঠেলি, কখনো বা জুড়িতে জুড়িতে ধাক্কাধাক্কি। তালে তালে বাজনা বাজে, তালে তালে পা পড়ে, ঘর গরম হয়ে উঠে। একটা নাচ শেষ হলে বাজনা থেমে যায়। নর্তক তাঁর শান্ত সহচারীকে আহারের ঘরে নিয়ে যান, সেখানে টেবিলের উপর ফলমূল মিষ্টান্ন মদিরার আয়োজন থাকে। ইচ্ছে করলে নর্তকজুটি পানাহার করে দুজনে নিভৃত কুঞ্জে বসে রহস্যালাপ করতে পারেন। লেখক নাচের ব্যাপারে পারদর্শী নন। 

তাই নাচের নিমন্ত্রণগুলো তাঁর বড় ভালো লাগে না। যেমন তাস খেলবার সময় খারাপ জুড়ি পেলে তার পরে তার দলে লোক চটে যায়, তেমনি নাচের সময় খারাপ জুড়ির পরে মেয়েরা ভারি চটে যায় । তাই তিনি বলেন: “আমার নাচের সহচরী বোধ হয় নাচার সময় মনে মনে আমার মরণ কামনা করেছিলেন। 

নাচ ফুরিয়ে গেল, আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেম, তিনিও নিস্তার পেলেন।” ইংল্যান্ডের নাচের আসরগুলো খুবই জমজমাট আর প্রাণবন্ত থাকে। রবীন্দ্রনাথ ইংল্যান্ডের নাচের অনুষ্ঠান উপভোগ করে উল্লসিত হয়েছেন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ