ধান চাষ সম্পর্কে খনার বচনের বিধি-নিষেধ উল্লেখ কর

ধান চাষ সম্পর্কে খনার বচনের বিধি-নিষেধ উল্লেখ কর

ধান চাষ সম্পর্কে খনার বচনের বিধি-নিষেধ উল্লেখ কর
ধান চাষ সম্পর্কে খনার বচনের বিধি-নিষেধ উল্লেখ কর

অথবা, ধান চাষ সম্পর্কে খনার বচনে যে সুপারিশ করা হয়েছে তা আলোচনা কর 

উত্তর : বচন হচ্ছে মানবজীবনের দীর্ঘ অভিজ্ঞতার ফল। সে অভিজ্ঞতা একজনের হতে পারে বহুজনের হতে পারে আবার গোটা সমাজের হতে পারে। এটা দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ফল হলেও সংক্ষিপ্তভাবে প্রকাশিত হয়। 

বচন শব্দটির অর্থ ভাষণ, কথন, অনুশাসন, আদেশ। বচন বাংলার লোকসাহিত্যের আরেকটি প্রাচীনতম শাখা। বচনেও মানুষের অভিজ্ঞতা সঞ্চিত থাকে তবে তা কৃষক ও গৃহকার্যের সম্পর্ক নিয়ে রচিত।বচনে সাধারণভাবে কৃষিকর্মের নিয়ম, আবহাওয়ার লক্ষণ ও ফলাফল, তিথি গণনা ও শুভাশুভ দিনক্ষণের হিসাব প্রভৃতি। 

এছাড়া খনার বচনে শস্যরোপণ, কর্তন, আলবন্ধন, বন্যার গণনা, মড়ক, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, আবহাওয়া প্রভৃতির কথার স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশ স্থান পেয়েছে। খনার বচন এক ধরনের সুস্থির ও সুশৃঙ্খল চিন্তার প্রকাশ লক্ষ করা যায়। 

তাই অনেকে বচনকে 'বিজ্ঞান মনস্কতার ফসল' বলে আখ্যায়িত করেন। বচনগুলোতে কৃষি বিষয়ক ধান চাষ সম্পর্কে একাধিক উপদেশবাণী স্থান পেয়েছে। যেমন-ক. খনা ডেকে বলে যান।রোদে ধান ছায়ায় পান।খ. "আউস ধানের চাষ,লাগে তিন মাস।”

উপরিউক্ত উদাহরণ থেকে জানা যায় পান ছায়ায় হয় কিন্তু রোদে ধান ভালো হয়। সুতরাং সেখানেই ধান চাষ করা উচিত যেখানে ধান গাছে রোগ পর্যাপ্ত পরিমাণ পেয়ে থাকে। 

বচনে এই অভিজ্ঞতাও বর্ণিত হয়েছে যে আউশ ধানের চাষ মাত্র তিন মাস সময় লাগে। বচনে আরো বলা হয়েছে কোন জাতীয় আবহাওয়া এবং গরু চাষের জন্য উপযুক্ত বলে বিবেচিত। যেমন-

ক. “দিনে রোন রাতে জল।তাতে ধানের বল।"

খ. সবল গরু গভীর চাষ।তাতে পুরে মনের আশবচনগুলোতে আবহাওয়া সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা থাকে। 

দিনে রোদ এবং রাতে বৃষ্টি হলে ধান ভালো হয়। তাছাড়া ভালো খানের জন্য ভালো গরু নিয়ে গভীর চাষ করা জরুরি। এছাড়া যেমন-ক. "খোল চাষে মূলাতার অর্ধেক তুলাতার অর্ধেক ধানবিনা চাষে পান।"

খ, জ্যৈষ্ঠে শুকো আষাঢ়ে ধারা। শস্যের ভার না সহে ধরাঃ " 

গ. লাউ গাছে মাছের জল।ধেনো জমিতে ঝাল প্রবল।"

বচনগুলোতে কৃষি কাজের পাশাপাশি ব্যক্তি মানুষের ও কালের পরিচয় পাওয়া যায়। উপরিউক্ত বচনগুলো থেকে জানা যায়- খান ফলাতে হলে চার চাষ দিতে হয়; আবার সেই জমিতে কাল ভালো হয় যেখানে আগেরবার ধান লাগানো হয়। 

তাছাড়া বোঝা যায় জ্যৈষ্ঠ মাসে যতই খরা হোক না কোনো আষাঢ় মাসে যদি ভালো বৃষ্টি হয় তাহলে সেখানে ভালো ধান হয়। এছাড়া কোন ঋতুতে বা কোন সময়ে ফসলের ক্ষতি হতে পারে তা বচনগুলোতে উপস্থিত।"জ্যৈষ্ঠে শুকো আষাঢ়ে ধারা।শস্যের ভার না সহে ধরাঃ”বাংলাদেশের সমাজ কৃষিভিত্তিক। 

সুতরাং কৃষিজীবন বা কৃষিকর্ম এর জীবনচর্চার অন্তনিষ্ঠ এবং ঐতিহ্যের একটি প্রধান বিষয় অর্থাৎ কৃষিকর্ম তা অবলম্বন করে এটা রচিত হয়েছে এবং কৃষিকর্মের সাথে যারা প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত তাদের ব্যবহারিক জীবনের নানা প্রসঙ্গও বচনে লক্ষ করা যায়। 

আর এখানে অধিক পরিমাণে উঠে এসেছে কৃষকের ধান চাষের পদ্ধতির নিয়ম-রীতি এবং পরিণতির বিষয়। আর এসব কারণে বচনগুলো অধিক গুরুত্বপূর্ণ।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ