দেওয়ানা মদিনা পালার রস বিচার কর
দেওয়ানা মদিনা' পালাটির রসবিচার কর
দেওয়ানা মদিনা' পালাটির রসবিচার কর |
উত্তর : দেওয়ানা মদিনা' পালার কাহিনি সাতটি অনুচ্ছেদে বর্ণিত হয়েছে। এই পালার অন্য নাম আলাল দুলালের পালা। পালাটি রচয়িতা মনসুর বয়াতি। তিনি নিরক্ষর হলেও অসাধারণ কবিত্ব শক্তির পরিচয় দিয়েছেন এই পালায়।
'দেওয়ানা মদিনা' পালায় মদিনা বিবি ও সোনাফর দেওয়ানের কাহিনি বর্ণিত হয়েছে। এ পালায় মোট তিনটি কাহিনি বর্ণিত হয়েছে। ক. কবুতর-কবুতরী কাহিনি, খ. সৎমার অত্যাচারের কাহিনি এবং গ. আলালের বানিয়াচঙ্গ জয়ের কাহিনি ।
ক. কবুতর-কবুতরী-কাহিনি : আলাল-দুলালের মা মৃত্যুপথযাত্রী। সে মৃত্যুশয্যায় তার স্বামী সোনাফরকে অনুরোধ জানায় তার মৃত্যু হলে সোনাফর যেন দ্বিতীয় বিয়ে না করে, কারণ সৎমা ঘরে এলে ছেলে দুটিকে বাঁচিয়ে রাখবে না। সে প্রসঙ্গে কবুতর-কবুতরীর কাহিনি বলে।
তাদের দীঘির দক্ষিণ পাড়ে কবুতর কবুতরীর বাসায় দু'টি ডিম রেখে কবুতরী মারা যায়। কবুতরের তা পেয়ে মুটি বাচ্চা হয়। এদের খাবারের সন্ধানে যায় কি করে, তাই কবুতর এক কবুতরীকে নিয়ে আসে। কবুতর বাচ্চাদের খাবারের সন্ধানে গেলে কবুতরী বাচ্চা দু'টিকে মেরে ফেলে।
খ. সৎমার অত্যাচারের কাহিনি : স্ত্রী বিয়োগের বেশ কিছুদিন পর লোকজনের পরামর্শে শেষ পর্যন্ত সোনাফার বিয়ে করে। কিন্তু পুত্র আলাল-দুলালকে তার সৎমার কাছে যেতে দেয় না। শেষ পর্যন্ত ছলে বলে কলে কৌশলে মিষ্টি কথা বলে বলে অভিনয় করে আলাল-দুলালকে কাছে পায়।
কিছুদিন অভিনয় করে সোনাফারের বিশ্বস্ততা অর্জন করে, ছেলে দুটিরও মায়ের উপর বিশ্বাস জন্মে। এদিকে জন্মাদকে জমির লোভ দেখিয়ে আলাল-দুলালকে জন্মাদের সাথে আড়ং দেখতে পাঠায়।
জল্লাদ তাদেরকে হত্যা না করে সাধুর ডিঙায় তুলে দেয়। কাজলকান্দা গ্রামে ইরাধরের বাড়িতে সাধু ধান কিনতে গিয়ে সামান্য টাকার বিনিময়ে ইরাধরের কাছে আলাল-দুলালকে বিক্রি করে দেয়।
গ. আলালের বানিয়াচঙ্গ জয়ের কাহিনি : দেওয়ান সেকেন্দার পাখি শিকার করতে গিয়ে আলালকে গাছতলায় পেয়ে বাড়িতে নিয়ে আসে। আলাল সেকেন্দারের বাড়িতে কাজ করে প্রাণপণে কিন্তু মাইনে নেয় না। মাইনের কথায় সে বলে সময় হলে চেয়ে নেবে।
সাধ্যমত কাজ করায় আলালের সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। দীর্ঘ বার বছর পর আলাল জানায় যে সে গৃহস্থ ঘরের ছেলে নয়, সে বানিয়াচঙ্গের দেওয়ান পুত্র। আলাল মাইনে স্বরূপ সেকেন্দারের কাছ থেকে পাঁচশ শ্রমিক এবং দু'শ সৈনিক নিয়ে বানিয়াচঙ্গে যায়।
সেখান গিয়ে পিতৃভিটায় পুনরুদ্ধার করে বসতি গড়ে। সেকেন্দার এ কথা শোনার পর বানিয়াচঙ্গ গিয়ে আলালের সাথে কন্যা সমর্পনের প্রস্তাব দিয়ে আলাল সেকেন্দারকে তার ভাই দুলালের সন্ধান দিতে বলে। আলাল খুঁজতে বের হয় ছোট ভাই দুলালকে।
ইরাধবের বাড়ি থেকে দুলালকে এক কৃষক তার বাড়িতে নিয়ে যায়। দুলাল মন প্রাণ দিয়ে কৃষি কাজ করে এবং কৃষক কন্যা মদিনার সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং তারা দাম্পত্য বন্ধনে বাঁধা পড়ে। তাদের একটি ছেলে হয় নাম তার সুরুজ। এমনিভাবে দুলালের সুখময় সংসার জীবন চলছিল।
আলাল তার ভাই দুলালকে খুঁজে বের করে- আলালের কথামতো দুলাল তার স্ত্রী মদিনাকে তালাক দিয়ে ভাইয়ের সাথে ফিরে আসে। সেকেন্দার দেওয়ানের দুই কন্যার সাথে আলাল ও দুলালের বিয়ে হয়। দুলালের বিরহে মদিনা মৃত্যুশয্যায় পতিত হয় এবং একসময় মারা যায়।
দুলাল তার ভুল বুঝতে পেরে ফিরে আসে মদিনার কাছে- কিন্তু ততদিনের মদিনা ইহকাল ত্যাগ করে পরকালে পাড়ি জমায় অনুশোচনায় দক্ষ হয় দুলাল।
দুলাল শেষ পর্যন্ত পাগলপ্রায় হয়ে মদিনার কবরের কাছে কুঁড়ে বাঁধে, আর সে বানিয়াচঙ্গে ফেরে না। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত মদিনার কবরের কাছে থেকে গিয়ে তার ভুলের মাশুল দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়।