চর্যার ভাষা কীভাবে বাংলা গণ্য করা হলো

চর্যার ভাষা কীভাবে বাংলা গণ্য করা হলো

চর্যার ভাষা কীভাবে বাংলা গণ্য করা হলো
চর্যার ভাষা কীভাবে বাংলা গণ্য করা হলো

উত্তর : চর্যাপদের ভাষা প্রাচীন বাংলা। ভাষার প্রাচীনত্ব সম্পর্কে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, ড. সুকুমার সেন, ড. প্রবোধচন্দ্র বাগচী মনে করেন চর্যাপদ বারো শতকের মধ্যে রচিত হয়েছিল। 

এ সময় পর্যন্ত বাংলা ভাষা তার স্বকীয় মর্যাদা লাভ করেনি। তেরো শতকের পরে উড়িয়া ভাষা এবং ষোলো শতকের পরে আসামি ভাষা বাংলা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ বলেছেন, সেকালের বাংলা, আসামি ও উড়িয়া ভাষায় পার্থক্য ছিল সামান্যই। 

চর্যাপদ আবিষ্কারের পর ইন্দি-মৈথিলি, উড়িয়া, আসামি ও বাংলা ভাষাভাষী সবাই দাবি করে বসে যে, চর্যাপদ তাদের ভাষায় রচিত। বাঙালি পণ্ডিতরা অন্যান্য ভাষাভাষীদের দাবি অযৌক্তিক প্রমাণিত করে চর্যার ভাষা যে বাংলা তা প্রমাণ করেছেন।

হিন্দি ভাষার দাবি প্রত্যাখ্যান : হিন্দি, রাজস্থানি প্রভৃতি ভাষা নব্য ভারতীয় আর্য ভাষার মধ্যগোষ্ঠীর অন্তর্গত উড়িয়া, বাংলা, আসামি, প্রাচ্য গোষ্ঠীর অন্তর্গত গোষ্ঠীর লক্ষণগুলো চর্যায় আছে। সুতরাং হিন্দি ভাষাভাষীদের দাবি নাকচ করা হলো।

মৈথিলী ভাষার দাবি প্রত্যাখ্যান : মৈথিলী ভাষার বিশিষ্ট লক্ষণ অতীতকালে ‘অল' ভবিষ্যতে ‘অব’ বর্তমানকালের প্রথম পুরুষে ‘অথি' প্রভৃতি চর্যার একজন পদকর্তা শান্তিপাদের পদ ভিন্ন অন্যদের ভাষা মৈথিলী নয় ।

উড়িয়া ভাষার দাবি প্রত্যাখ্যান : উড়িয়া ভাষার বিশেষ লক্ষণ অধিকরণে এর ‘তাছ’ ধাতুর অতীতকালে ‘থিল’ প্রভৃতি আর্যদের ভাষা ব্যতীত অন্য কারো ভাষা উড়িয়া হতে পারে না ।

চর্যার ভাষা বাংলা : বাংলা ভাষার বিশিষ্ট লক্ষণ বহুবচনে 'রা' বিভক্তি, ক্রিয়াপদে অতীতকালে ‘ইল’ প্রত্যয়, অধিকরণে এ বিভক্তি, করণ ও কর্তৃকারকে এ বিভক্তি এবং প্রাচীন বাংলার রূপ লোএ ‘ক্ষুদ্রত্ববাচক' উলী প্রত্যয় চর্যার বেশিরভাগ পদকর্তার অধিকাংশ পদই বাংলা ভাষার লক্ষণসম্মত। 

ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ও ডি. বি এল গ্রন্থে বিস্তারিতভাবে ধ্বনিতত্ত্ব, ব্যাকরণ ও ছন্দ বিচার করে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, চর্যার পদ সংকলনটি আদিমতম বাংলা ভাষায় রচিত

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ