চর্যাপদে বর্ণিত সমাজের পরিচয় দাও
চর্যাপদে বর্ণিত মানবগোষ্ঠীর পরিচয় দাও
অথবা, চর্যাপদে বিধৃত জনজীবনের যে পরিচয় পাওয়া যায় তা সংক্ষেপে লিখ ।
চর্যাপদে বর্ণিত মানবগোষ্ঠীর পরিচয় দাও |
উত্তর : চর্যাপদে মূলত অন্ত্যজ সমাজের চিত্রলিপিকৃত হয়েছে। জাতি পরিচয়ে আমরা দেখেছি শবর-শবরী (২৮ ও ৫০ সংখ্যক পদ), ছন্তাল (৪৭, ৪৯ ও ৫০ সংখ্যক পদ) ও ভোম (১০, ১৪, ১৮ ও ১৯ সংখ্যক পদ) জাতির কথা লিপিকৃত রয়েছে। এসব মানুষ আর্য-পূর্ব জাতির উত্তরাধিকারী। এসব অন্ত্যজ মানুষের পরিচয় বিভিন্ন পদ থেকে স্পষ্ট হয়ে উঠে ।
ক. খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থান : মানুষের খাদ্যের তালিকাটি ছিল এই রকম—ভাত, লাউ (১৭), মাছ-মাংস (৬), তেঁতুল (২) দুধ ও মধু। বিভিন্ন চর্যাপদে বিবিধ ধরনের খাদ্যদ্রব্যের পরিচয় পাওয়া গেছে। পোশাক-পরিচ্ছদের ক্ষেত্রে দেখা যায় চর্যাপদের মহিলারা তাঁতে বোনা শাড়ি পরিধান করতো। অনেকে বাড়িতে কার্পাস চাষ করতো। কার্পাস বস্ত্র সেকালের মানুষের পরিধেয় ছিল। তারা সব সময় সেজে থাকতে ভালোবাসত ।
১. “সোরঙ্গি পীচ্ছ পরিধান সবরী গিবত গুঞ্জরী মালী”
২. “প্রকেলী সরবী এ বন হিন্ডই কর্ণ কুন্তল বজ্রধারী (২৮ নং পদ)
অর্থাৎ, পুষ্প আভরণে সবরীর অঙ্গসজ্জা শোভিত থাকত। মাথায় ময়ূর পুচ্ছের চূড়া কানে বজ্র কুন্তল তার শোভা লড়াত। বাসস্থানের চিত্রে দেখি চর্যাপদের মানুষের দু'ধরনের বাসগৃহ ছিল। ধনী ব্যক্তিদের কারো কারো তিন-চারখানা করে বাড়ি ছিল। “তইলা বাড়ির পাশে জোড়াবাড়ি” (৫০নং পদ) আরবান হিসাবে কারে কারো তিন ধাতুর (সোনা-রুপা- কাস্ট) খাট পাতা থাকতে দেখা যায় ৷
‘চিতা বাঘ খাট গড়িলা মরো মহাসুহে সোজি ছাইলী' (২৮ নং পদ)
এরই পাশে অন্ত্যজ সমাজের মানুষের দেখি ‘কুঁড়েঘর’। বাসস্থানের জন্য নির্দিষ্ট (১০নং পদ) রয়েছে ভাড়ার ঘর ও আতুরঘরের কথা ।
খ. সামাজিক আচার : চর্যাপদে যে সমাজের কথা পাই তাতে দেখি জাতিভেদ প্রথা ছিল বেশ কঠোর। সমাজে উঁচু- নিচু ভেদ ছিল প্রবলরূপে। সমাজের উঁচু শ্রেণির লোক বাস করতো নগরের মধ্যে। কিন্তু অন্ত্যজ মানুষের নগরে প্রবেশের অধিকার ছিল না। তাঁদের নগরের বাইরে বাস করতে হতো। এই চর্যায় দেখি ডোম্বীর কুঁড়েঘর নগরের বাইরে :
নগর বাহিরে ডোম্বি তোহোরি কুড়িআ' । (১০ নং পদ)
সামাজিক আচার ক্রিয়ার মধ্যে দেখি মানুষ মারা গেলে বাঁশের খাটিয়াতে শব বহন করা হতো। দশ দিকে ‘কাকবলি' দেওয়া হতো ।
পরিশেষে বলা যায় যে, সব মিলিয়ে চর্যাপদে যে মানব সমাজের পরিচয় আছে তা নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ।