চর্যাপদের নামকরণের বিষয়টি সংক্ষেপে লেখ
চর্যাপদের নামকরণের বিষয়টি সংক্ষেপে লেখ
চর্যাপদের নামকরণের বিষয়টি সংক্ষেপে লেখ |
উত্তর : চর্যাপদ বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন নিদর্শন। কিন্তু প্রথম দিকে এর নামকরণ নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে মতগার্থক্য ছিল।
তিনি চর্যাগানের পুথির নাম 'চর্যাচর্য্যবিনিশ্চয়' বলে উল্লেখ করেন। কিন্তু পুথির কোথাও এ নাম লিপিবদ্ধ ছিল না। ফলে পুথির নামকরণ নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপিত হয় ।
আচার্য বিধূশেখর শাস্ত্রী যুক্তি দেখান যে, পুথির মধ্যেই পুথির নাম থাকা প্রচলিত প্রথা। তিনি টীকাকার মুনি দত্তের পুথিতে সন্নিবেশিত একটি প্রারম্ভিক সংস্কৃত শ্লোকবাক্যের অন্তর্গত ‘আশ্চর্যচর্যাচয়' কথাটি শ্লোকবাক্যে পুথি নাম হিসেবে গণ্য করার পক্ষে যুক্তি দেন।
১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী সংকলিত ‘হাজার বছরের পুরান বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধ গান ওদোহা' প্রকাশিত হওয়ার আগে ১৯১৫ খ্রিষ্টাব্দে নেপালের রাজদরবার থেকে একটি পুথির তালিকা প্রকাশিত হয়েছিল।
ঐ তালিকায় দ্বিতীয় খণ্ডের দু’জায়গায় 'চর্যাচর্য্যটীকা' কথাটি পুথির নাম হিসেবে উল্লিখিত হয়। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী পুথির মলাটে এ নামটি দেখেছেন। কিন্তু শাস্ত্রী এ নামটি কেন বাদ দিলেন তা সুস্পষ্ট নয় । তিব্বতি ভাষা ও বৌদ্ধশাস্ত্র বিশারদ প্রবোধচন্দ্র বাগচী প্রথমদিকে হরপ্রসাদ প্রদত্ত নামের সমর্থক ছিলেন।
তবে তিনি রাখার হরপ্রসাদ শাস্ত্রী প্রস্তাবিত 'চর্যাচর্য্যবিনিশ্চয়' নামটিকে কিছুটা সংশোধন করে পরিশোধিত নাম 'চর্যাশ্চর্য্যবিনিশ্চয়' ; প্রস্তাব করেন। কিন্তু পুথির কোথাও এ নাম লিপিবদ্ধ না থাকায় এ নামটি গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। ড. সুকুমার সেন তাঁর।
সম্পাদিত পুথির নাম দেন ‘চর্যাগীতি পদাবলী'। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ চর্যাগানকে ‘চর্যাপদ' বলে অভিহিত করেন।
মনীন্দ্রমোহন বসু চর্যাপদের নামকরণ সম্পর্কে বলেছেন : “যেহেতু পুথির গায়ে যে নাম রয়েছে তাতে যখন বিষয়বস্তুর সাথে নামের সঙ্গতি মেলে- তখন নাম পরিবর্তন না করাই উচিত ছিল। কেননা গ্রন্থটিতে প্রোথিত বিষয়বস্তু বৌদ্ধ-সহজিয়ান মতের ধর্মীয় তত্ত্ব ও জীবনাচরণ। ‘
চয্যা' অর্থ ‘আচরণীয়’ এবং ‘অচয্যা' অর্থ অনাচরণীয়। অর্থাৎ স্পষ্ট যে গ্রন্থটি বলে দিচ্ছে মানব জীবনে কোনটি আচরণীয় এবং কোনটি অনাচরণীয়।”
প্রবোধচন্দ্র বাগচী ও শান্তিভিক্ষু শাস্ত্রী যৌথভাবে চর্যাগানের সংকলন বের করেন এবং তার নাম দেন ‘চর্যাগীতিকোষ’। এ প্রামাণিক তথ্য প্রাপ্তির পর গবেষকরা মনে করছেন, মূল পুথিটির নাম 'চর্যাগীতিকোষ' এবং এর সংস্কৃত টীকাগ্রন্থের নাম 'চর্যাচর্য্যবিনিশ্চয়'। তাঁরা চর্যাগানের সংকলনের নাম ‘চর্যাগীতিকোষ’ ও চর্যাগানের নাম ‘চর্যাগীতি' হিসেবে গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করেন।