ব্যালাড কি ও ব্যালাড এর বৈশিষ্ট্য

ব্যালাড কি ও ব্যালাড কাকে বলে এবং ব্যালাড এর বৈশিষ্ট্য 

ব্যালাড কী  সংক্ষেপে আলোচনা কর
ব্যালাড কী  সংক্ষেপে আলোচনা কর 

অথবা, গীতিকাব্য গাথা কী? গীতিকার পাঁচটি বৈশিষ্ট্য লেখ।

উত্তর : ‘গীতিকা'র ইংরেজি প্রতিশব্দ 'Ballad'। ড. দীনেশচন্দ্র সেন গীতিকা শব্দটিকে ব্যালাডের বাংলা প্রতিশব্দ হিসেবেই গ্রহণ করেছেন। আশুতোষ ভট্টাচার্যও ব্যালাডকে ‘গীতিকা' বলে অভিহিত করেছেন। 

সুকুমার সেন ব্যালাডকে অভিহিত করেছেন ‘গাথা' বলে। ‘গীতিকা'র সাথে 'লোক' শব্দটি যুক্ত করে ড. মযহারুল ইসলাম লোককবিদের রচিত ফোক ব্যালাডকে আলাদা করে বুঝাতে চেয়েছেন। 

ইংরেজি ব্যালাডের প্রতিশব্দ হিসেবে আমরা গীতিকা অথবা লোকগীতিকা দুটোই ব্যবহার করতে পারি। এর মধ্যে মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই। গীতিকা শব্দের বিকল্প হিসেবে আমরা গাথা শব্দটি ব্যবহার করতেই পারি।

অনেকের মতে ব্যালাড হচ্ছে এক ধরনের নৃত্য সংগীত। প্রাচীনকালে নৃত্য বা নাচের সাথে এ কবিতা গীত হতো বলেই তাকে গাথাকবিতা বা গীতিকাহিনিকাব্য বলা হয়। 

বাংলা জারিগান, যা মুখে মুখে ফিরছে, যা গান হয়েও কাহিনি বর্ণনা করে এবং যার আঙ্গিক কবিতার অবয়বে বা ঢঙে বাঁধা, সেগুলোকে ব্যালাড বা গীতিকা বা গাঁথা বলা যায় ।

Dr. Murry, "A single spirited poem in short stanzas in which some popular story isgratically told." অর্থাৎ, একটি সরল, তেজোদীপ্ত, ক্ষুদ্র স্তবক সমন্বিত কবিতা, যাতে কোনো জনপ্রিয় কাহিনি লৌকিক চিত্রের ন্যায় বর্ণিত তাই গীতিকা। 

ড. মুরে প্রদত্ত সংজ্ঞাটি খুবই সংক্ষিপ্ত। সাধারণভাবে নিরক্ষর কবিদের রচিত মাধ্যানমূলক গাথাকে লোকগীতিকা বা গীতিকা বলে।

একশ্রেণির আখ্যানমূলক লোকগীতি বাংলা সাহিত্যে 'গীতিকা' নামে অভিহিত। গীতিকা কাহিনি প্রধান গতিশীল রচনা এবং তা নাটকীয় গুণ সম্পন্ন। 

সুর সহযোগে গীত হলেও গীতিকায় কথাই প্রধান, সুর গৌণ মাত্র। একটি বিশিষ্ট কাহিনী নড়বন্ধ হয়ে এতে স্থান পায় বলে একে কাহিনিপ্রধান রচনা হিসেবে বিবেচনা করা চলে। 

চরিত্রগুলো সাধারণত নাটকের মতো সুস্পষ্ট ও স্বাতস্থাযুক্ত না হয়ে বিশেষ আদর্শ অনুযায়ী রূপায়িত হয়। ক্রিয়া বা Action-ই গীতিকার মূল আকর্ষণ। অপ্রাসঙ্গিক বর্ণনা বাহুল্য হিসেবে পরিত্যাজ্য হয়ে মূল ঘটনাপ্রবাহ পরিণতির দিকে ধাবিত হয়।

গীতিকার বৈশিষ্ট্য :

ক. গীতিকা বর্ণনাধর্মী যার মধ্যে লোকধর্মিতা অক্ষুন্ন থাকে)। উল্লেখ্য, ভারতীয় গীতিকা ঐতিহ্যগতভাবে বর্ণনাধর্মী 

. গীতিকা গীত আকারে পরিবেশিত হয়। গীতের সাথে প্রায়শই দেশীয় বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার করা হয়।

গ. গীতিকার শিল্প কৌশলের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটা প্রায়ই কাহিনির মধ্যভাগ থেকে শুরু হয় । এর ফলে কাহিনি দ্রুত পরিণতির দিকে নাটকীয় স্ফুর্তিতে এগুতে পারে।

ঘ. বাংলা কতিপয় গীতিকা ছাড়া বেশিরভাগ গীতিকার কাহিনি প্রলম্বিত, শাখানির্ভর, ছন্নছাড়া এবং সেজন্য নাটকীয়তার অভাব লক্ষণীয়, ফলে তা উপন্যাসধর্মী ।

ঙ. লোকগীতিকার কাহিনি শিথিল বিন্যস্ত। এতে শাখাকাহিনি বিদ্যমান এবং কাহিনির পরিসর মোটেই সংক্ষিপ্ত নয় । এ গাথাকাব্যের মূল রচয়িতা নিরক্ষর গ্রাম্য কৰি ।

চ. কবিতা ও গান গাঁথাকাব্যের অপরিহার্য অঙ্গ হলেও কাহিনি অংশই এখানে প্রধান ।

ছ. কাহিনিকাব্যের রচনাগুণ যৎসামান্য। এগুলো অলংকার বর্জিত এবং সরল গ্রাম্য ভাষায় রচিত। এর কাহিনি অংশে জটিলতা সামান্যই।

জ. কাহিনির অন্তর্গত পাত্রপাত্রিগণের রূপ বর্ণনা এবং প্রকৃতি বর্ণনায় গ্রাম্যকবিগণের স্বাভাবিক কাব্যশক্তি ও মার্জিত রুচিজ্ঞানের পরিচয় পাওয়া যায়।

গীতিকা গ্রাম্য জনসাধারণের সাহিত্য। এটি আমাদের চোখের সামনে গ্রামের চিত্রকে উপস্থাপন করে।

গীতিকাগুলো গান হিসেবে গাওয়ার জন্যই রচিত। গীতিকা সাংস্কৃতিক জীবনের উৎকর্ষের পরিচায়ক। অনুন্নত মানসিকতা থেকে তার উদ্ভব হতে পারে না। ছোটোগল্পের মতো একটি মাত্র কাহিনির ধারা অনুসরণ করে গীতিকা অগ্রসর হয়ে থাকে। 

উৎপত্তির দিক থেকে এগুলোকে দলগত প্রয়াস বলে বিবেচনা না করে ব্যক্তিগত প্রতিভার ফল মনে করা হয়। জাতির স্থায়িত্ব ও ঐতিহ্যের ধারক হিসেবে গীতিকার অবদান অপরিসীম। তাই এগুলোর পরিচর্যা ও সংরক্ষণ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ