ব্যঙ্গ কবিতা বলতে কি বুঝ

ব্যঙ্গ কবিতা বলতে কি বুঝ

ব্যঙ্গ কবিতা বলতে কী বুঝ
ব্যঙ্গ কবিতা বলতে কী বুঝ

উত্তর : 'ব্যঙ্গ কবিতা'র ইংরেজি প্রতিশব্দ 'Satire'। এই 'Satire' শব্দটি ল্যাটিন 'Satura lanx' নামক শব্দ হতে উদ্ভূত। প্রাচীনকালে গ্রিকদেবী Ceres-এর পূজাকে কেন্দ্র করে এ শ্রেণির কবিতার উদ্ভব হয়েছে। 

সেকালে গ্রীসে বর্ষার পূর্বে 'Satura lanx' নামে একটি খালায় করে সদ্যোজাত ফসলাদির দ্বারা নৈবেদ্য সাজিয়ে Ceres দেবীর পূজা করা হতো। 

আর, এ অনুষ্ঠান থেকে গদ্যে-পদ্যে মেশানো এক শ্রেণির তীব্র শ্লেষাত্মক কবিতার সৃষ্টি হতো। এই শ্রেণির কবিতাকে পরবর্তীকালে 'ব্যঙ্গ কবিতা' ('Satire') নামে অভিহিত করা হয়েছে। 

বর্তমান কালে, মানুষের জীবনাচরণের ক্ষেত্রে বিবিধ অসংগতিকে কেন্দ্র করে 'ব্যঙ্গ কবিতা' রচিত হয়। অতএব, যে কবিতা রচনায় আলোচ্য বিষয়কে লঘু ও তুচ্ছ করে তার প্রতি অবজ্ঞা, ঘৃণা, ক্রোধ বা কৌতুকের মনোভাব জাগিয়ে তোলা হয়, অর্থাৎ মানব চরিত্র, আচার ব্যবহার ও রীতিনীতি সংশোধনের উদ্দেশ্যে যে গীতিকবিতা লিখিত বা রচিত হয় তাকেই 'স্যাটায়ার' বা 'ব্যঙ্গ কবিতা' নামে অভিহিত করা হয়। 

এ জাতীয় কাব্য কবিতায় জীবনের নানাপ্রকার ত্রুটিবিচ্যুতি ও অসংগতিকে আক্রমণ করা হয়। তাই, এ জাতীয় কবিতা লোক শিক্ষা, লোকচরিত্র সংশোধন, সমাজের দুর্নীতি স্খলনের জন্য এক উৎকৃষ্ট চাবুক। 

এর উপজীব্য রস হচ্ছে 'হাস্যরস'। এই 'হাস্যরস' বা 'কমিক' রচনা থেকে 'ব্যঙ্গ কবিতা' বা 'Satire -এর পার্থক্য এই যে, যেখানে 'কমিক' রচনায় 'নিছক হাস্যরস'-ই প্রধান এবং যার পিছনে “আর কোনো উদ্দেশ্য' নেই। 

সেখানে 'Satire' বা 'ব্যঙ্গ কবিতা' 'হাস্যরস'-কে ব্যবহার করা হয় 'অস্ত্রে'-র মতো, তার উদ্দেশ্য পরিহাসাত্মক চুরি চালিয়ে কোনো অন্যায়, অবিচার বা অসংগতিকে আক্রমণ করা।'

'ব্যঙ্গ রচনার রচয়িতাগণ 'Satire' বা 'বাঙ্গকে বিবেচনা করেছেন মানুষের নির্বুদ্ধিতা ও অন্যায় আচার আচরণের সংশোধন রূপে। এ প্রসঙ্গে Pope মন্তব্য করেন- "Those who are ashamed of nothing else are so of being ridiculous." 

এ ধরনের ব্যঙ্গ-রচনায় ব্যক্তিবিশেষ আক্রমণের লক্ষ্য নয়, আক্রমণের মূল লক্ষ্য হচ্ছে কোনো 'সামাজিক ত্রুটি বিচ্যুতি, কাপট্য, অসাধুতা, মিথ্যা, অহমিকা, বড়লোকের মোসাহেবি বা তেলায়েতি' করার প্রবৃত্তি প্রভৃতি। '

ব্যঙ্গ রচয়িতা' এসব ত্রুটিবিচ্যুতিকে আক্রমণ করে সামজকে উন্নত করতে চান, সমাজসংস্কারের কল্যাণে কাজ করতে চান। তবে, সবসময় ব্যঙ্গরচয়িতাগণ এই উন্নত আদর্শ রক্ষা করতে পারেন না। 

কখনো কখনো তাঁদের ব্যঙ্গের মধ্যে অশোভন তীব্রতা এবং বিদ্বেষের প্রকাশ তাঁদের রচনার শৈল্পিক মানকে ক্ষুণ্ণ করে থাকে। ইংরেজি সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ ব্যঙ্গ রচয়িতাদের মধ্যে রয়েছেন ড্রাইডেন, সুইফট, স্যানুয়্যাল বটলার, আলেকজান্ডার পোপ প্রমুখ, আর, বাংলা সাহিত্যের বিবাহ'। 

যতীনসেনের 'পাকাল-বন্দনা' এবং রবীন্দ্রনাথের 'উন্নতি লক্ষণ', 'হিংটিংছট্‌' ও 'দুরন্ত আশা' মোহিতলাল মজুমদারের 'দ্রোণগুরু' 'সরস্বতী' এ শ্রেণির পর্যায়ভুক।

ব্যঙ্গকবিতা নানাপ্রকারের। যেমন- 'সামজিক ব্যঙ্গ কবিতা' যেমন- হেমচন্দ্রের 'বাঙ্গালি মেয়ে', ঈশ্বরগুপ্তের 'অনাচার, রবীন্দ্রনাথের 'নব্যবঙ্গদম্পতির প্রেমালাপ', রাষ্ট্রনৈতিক ব্যঙ্গ কবিতার মধ্যে হেমচন্দ্রের 'নেভার নেডার', রবীন্দ্রনাথের “

উন্নতি লক্ষণ: ধর্ম সংক্রান্ত ব্যঙ্গ কবিতার মধ্যে যতীন সেনের 'পাকাল বন্দনা', রবীন্দ্রনাথের 'হিংটিংছট'; 'ব্যক্তিগত ব্যঙ্গ কবিতার মধ্যে সত্যেন দত্তের 'অ' (হরপ্রসাদ শাস্ত্রী), 'নাপ্পি-পীরিতি কথা' (দীনেশ সেন) এবং প্রতিষ্ঠানমূলক ব্যঙ্গ কবিতার মধ্যে কালিদাস রায়ের 'প্রবেশ নিষেধ এর নাম করা যেতে পারে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ