শীতে শুষ্ক ত্বকের যত্নে কি করবেন? বিস্তারিত জানুন
শীতে শুষ্ক ত্বকের যত্নে কি করবেন? বিস্তারিত জানুন
শীতকাল এক মহনীয় ঋতু, যা প্রকৃতিতে আনে নতুন রূপের ছোঁয়া। প্রতিটি সকাল যেন এক একটি স্বর্গ ক্যানভাস। উজ্জ্বল সকাল, ঠান্ডা হিমেল হাওয়া এর মাঝে এক কাপ গরম চা এর অনুভূতি বলে বুঝানোর মতো নয়। এই ঋতুর পুরো সময়টি জুড়েই থাকে অলৌকিক সৌন্দর্যের স্পর্শ। এই সময় আমাদের জীবনে নিয়ে আসে ঠান্ডা হাওয়া, উষ্ণ পোশাক এর আরাম, আর অসাধারণ শান্তিময় মুহূর্ত। তবে এই মিষ্টি সময়টি সঙ্গে নিয়ে আসে শুষ্ক আবহাওয়ার চ্যালেঞ্জ।
শীতের এই আবহাওয়া আমাদের ত্বকের জন্য মোটেও সুখবর নয়! বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকার কারণে আমাদের ত্বক প্রাকৃতিক ময়েশ্চার হারিয়ে ফেলে, যার ফলে ত্বক হয়ে উঠে রুক্ষ, ফাটা ও অস্বস্তিকর। তবে, সঠিক কিছু নিয়ম মেনে চললেই এই ঋতুর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সাথে সাথে আমাদের ত্বকও থাকবে মসৃণ ও কোমল। আমাদের আজকের এই ব্লগে জানবেন ত্বক শুষ্কতার কারণ, এর থেকে প্রতিকার পাওয়ার উপায়, ও কিছু প্রয়োজনীয় টিপস।
শীতে ত্বক শুষ্ক হওয়ার প্রধান কারণ
শীতের সময়ের ঠান্ডা বাতাস ও কম আর্দ্রতা আমাদের ত্বক শুষ্ক করে এটা আমরা আগেই জেনেছি তবে এছাড়াও আরও অনেক কারণ আছে, যা আমাদের ত্বককে শুষ্ক করে ফেলে।
শীতের শুষ্ক বাতাস
শীতকালের বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ স্বাভাবিক ভাবে কম থাকায় আমাদের ত্বকের আর্দ্রতা খুব দ্রুত হারিয়ে যায়। এই সমস্যা আরো বেশি বেড়ে যায় যদি আপনি অনেক সময় এর জন্য বাইরে থাকেন। ঠান্ডা বাতাসের কারণে ত্বকের ময়েশ্চারাইজিং ক্ষমতা কমে যায়, যার ফলে ত্বক হয়ে উঠে খসখসে ও বিরক্তিকর।
ঘরের হিটার বা গরম পরিবেশ
শীতে বাসা-বাড়ি গরম রাখার জন্য হিটার ব্যবহার করা খুবই সাধারণ অভ্যাস, এটি আমাদের ঠান্ডায় আরাম দিলেও ত্বকের ক্ষেত্রে প্রচুর ক্ষতিকারক হতে পারে। হিটার বা অন্যান্য যেকোনো কিছু এর থেকে আসা গরম বাতাস ঘরের আর্দ্রতা কমিয়ে দেয়, যা ত্বকে অনেক বেশি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই হিটার ব্যবহার করলে, আমাদের ঘরের আর্দ্রতা বজায় রাখার জন্য কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
অতিরিক্ত গরম পানিতে গোসল
শীতকালে গরম পানি দিয়ে গোসল করা আমাদের সকলেরই সাধারণ একটি অভ্যাস। গোসল করতে আমাদের আরাম লাগলেও এটি আমাদের ত্বকের অনেক ক্ষতি করতে পারে। গরম পানি আমাদের ত্বকের প্রাকৃতিক ময়েশ্চার ধ্বংস করে, ত্বককে অনেক শুষ্ক করে, আমাদের ন্যাচারাল বেরিয়্যার কে দুর্বল করে তোলে। অতিরিক্ত গরম পানির কারণে ত্বক খসখসে হয়ে যায়। তাই আমাদের ত্বককে একটি সাধারণ পর্যায়ে রাখতে হলে শীতকালে হালকা গরম পানি বা কুসুম গরম পানি ব্যবহার করাই উত্তম।
পর্যাপ্ত যত্নের অভাব
সাধারণ সময়ের তুলনায় শীতকালে আমাদের ত্বক অতিরিক্ত যত্ন চায়, এবং আমরা অনেকেই যত্ন নিতে ভুলে যাই। যদি আপনি শীতকালে সঠিক ভাবে ত্বকের যত্ন না নেন তবে ত্বকের অনেক সমস্যার দেখা মিলবে, যেমন শুষ্ক হওয়া, ফেটে যাওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি। ত্বকের আর্দ্রতা ঠিক রাখার জন্য যদি উপযুক্ত ময়েশ্চারাইজার বা স্কিনকেয়ার পণ্য ব্যবহার না করেন তবে ত্বক অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই, ত্বকের গভীর যত্ন ও পুষ্টির নিশ্চিত করার জন্য সঠিক স্কিনকেয়ার (skincare) পণ্য ব্যবহার করা খুবই জরুরি।
শীতে শুষ্ক ত্বক প্রতিরোধের ৮ টি কার্যকর টিপস
শীতকাল ত্বকের জন্য খুবই চ্যালেঞ্জিং একটা সময়। কম আর্দ্রতা , শুষ্ক বাতাস আর ঠান্ডা পরিবেশ আমাদের ত্বককে রুক্ষ এবং অস্বস্তিকর করে তোলে, তবে শীতে শুষ্ক ত্বকের যত্ন নেয়ার জন্য সঠিক স্কিনকেয়ার রুটিন, স্কিনকেয়ার পন্য (Skincare Product) এবং কিছু সহজ টিপস অনুসরণ করলেই আপনি নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে পারবেন।
ত্বক পরিষ্কার করার সঠিক পদ্ধতি
শীতকালের আর্দ্রতা কম থাকবার কারণে আমাদের ত্বক প্রচুর ধূলাবালি আকর্ষণ করে, তাই এই সময়ে ত্বক পরিষ্কার রাখা খুবই জরুরি। তবে পরিষ্কার করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যে, ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক না হয়ে যায়। এক্ষেত্রে একটা হালকা ক্লিঞ্জার ব্যবহার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
একটি সালফেট-মুক্ত (sulfate-free) বা মাইল্ড ফর্মুলা ক্লিনজার ব্যবহার করতে পারেন, যা ত্বকের প্রাকৃতিক ময়েশ্চার ঠিক রেখে ত্বকের গভীর ভাবে পরিষ্কার করে। ত্বকের যত্নে অসাধারণ সকল অথেন্টিক বিউটি পণ্য এবং প্রসাধনী পেয়ে যাবেন বিউটি বুথে (Beauty Booth)।
ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার
শীতে আর্দ্রতা ধরে রাখতে ময়েশ্চারাইজার এর ব্যবহার গুরুত্ব প্রচুর বেশি। ময়েশ্চারাইজার ত্বকে আর্দ্রতা প্রদান করে যা আপনার ত্বককে শুষ্ক হওয়ার হাত থেকে বাঁচায়। এই শীতের জন্য আপনি ব্যবহার করতে পারেন একটি হাইড্রেটিং ময়েশ্চারাইজার যা আপনার স্কিনে গভীরভাবে মশ্চারাইজড করে ত্বককে রাখবে মলিন ও মসৃণ। সবসময় গোসলের পর ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
গরম পানির পরিবর্তে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করুন
শীতে স্বাভাবিক ভাবেই আমরা সবাই গরম পানি দিয়ে গোসল করতে পছন্দ করি। যদিও এটি কিছু সময় এর জন্য শরীরকে উষ্ণ রাখে, তবে শরীরের জন্য অনেক ক্ষতিকর। তবে গরম এর সময় সবচেয়ে ভালো উপায় হলো কুসুম গরম পানি ব্যবহার করা। এটি আপনার ত্বকের প্রাকৃতিক ময়েশ্চার নষ্ট না করেই পরিষ্কার করে। পাশাপাশি এটি শরীরকে উষ্ণ রাখতেও সাহায্য করে।
সানস্ক্রিনের ব্যবহার শীতকালেও প্রয়োজনীয়।
সানস্ক্রিন আমাদের সারা বছর ই ব্যবহার করা প্রয়োজন। শীতে সূর্যের তাপ কম অনুভূত হলেও UVA and UVB এর মতো ক্ষতিকারক রশ্মি আপনার ত্বককে গভীরে ক্ষতি করতে পারে। তাছাড়াও সানস্ক্রিন আমাদের ত্বকে অকাল বার্ধক্য এর লক্ষণ রোধ করতেও বিশেষ ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এটি ত্বকের হওয়া বয়সের দাগ ও ফাইন লাইন কমাতে সাহায্য করে, ত্বককে রাখে মসৃণ, দাগমুক্ত ও কোমল।
লিপ বাম এবং হাতের যত্ন।
শীতে লিপবাম ও হাতের যত্ন নেয়া খুব বেশি দরকারি, এই সময়ে বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকার কারণে ঠোঁট ও হাতের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়, সহজেই রুক্ষ হয়ে যায়, তাই শীতে এই অংশ গুলোর বিশেষ যত্ন নেয়া অত্যন্ত জরুরি।
ঠোঁটের যত্নে লিপ বাম
শীতে ঠোঁট ফাটা ও রুক্ষ হয়ে খুবই সাধারণ ব্যাপার। ঠোঁটের ত্বক খুবই সংবেদনশীল, তাই এই শীতে বাড়তি যত্ন নেয়া দরকার। এই যত্নের মধ্যে খুব বড় ভূমিকা পালন করে লিপ বাম। এটি ঠোঁটের আর্দ্রতা ধরে রেখে উপরে একটি প্রতিরক্ষামূলক স্তর তৈরি করে যা শীতের শুষ্ক বাতাসের হাত থেকে আপনার ঠোঁটকে সুরক্ষিত রাখে। তাছাড়াও অনেক লিপ বামে রয়েছে SPF, যা আপনার ঠোঁটকে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি হতে সুরক্ষিত রাখে এবং কালচে হওয়া থেকে রক্ষা করে। এর নিয়মিত ব্যবহার ঠোঁটকে কোমল এবং মসৃণ রাখে। এই শীতে আপনার লিপ বাম এর কালেকশনে রাখতে পারেন Vaseline Lip Balm এটি আপনার ঠোঁটকে হাইড্রেটেড ও ময়েশ্চারাইজড রাখে। Maybelline New York Baby Lips Lip Balm যা ঠোঁটে হাইড্রেশন এর পাশাপাশি ঠোঁটকে মসৃণ ও কোমল করে।
হাতের যত্ন
হাতের যত্নে আপনি অ্যালোভেরা সমৃদ্ধ হ্যান্ড ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন যা আপনার হাতকে নরম ও মসৃণ রাখতে সাহায্য করে। প্রতিবার হাত পরিষ্কার বা ধোয়ার পরে অবশ্যই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন, এতে হাতের ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া সম্ভাবনা কম থাকে ও হাতের প্রাকৃতিক আর্দ্রতা বজায় থাকে।
হিউমিডিফায়ার ব্যবহার।
শীতের শুষ্ক বাতাস ত্বকের জন্য প্রচুর ক্ষতিকর। যদি ঘরের হিটার চালু থাকে তবে বাতাস আরো শুষ্ক হয়ে যায়, যা ত্বককে অনেক বেশি রুক্ষ করে দেয়। এই সমস্যার সমাধান এর জন্য আপনি ব্যবহার করতে পারেন একটি হিউমিডিফায়ার, এটি বাতাসে আর্দ্রতা যোগ করে যা ত্বককে শুষ্ক ও রুক্ষ হওয়া থেকে রক্ষা করে
পর্যাপ্ত পানি পান করা
শীতকালে আমাদের স্বাভাবিক এর তুলনায় পিপাসা কম লাগে, তাই আমরা পানি কম পান করি। তবে এটি আমাদের ত্বকের জন্য অনেক ক্ষতিকর। পর্যাপ্ত পানির অভাবে আমাদের ত্বক ডিহাইড্রেটেড হয়ে পড়ে ও রুক্ষতা বৃদ্ধি পায়। পানি আমাদের শরীরের আর্দ্রতা ধরে রাখে, ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় ও নরম করে। তাই প্রতিদিন কমপক্ষে আমাদের ৮ গ্লাস বা ২ লিটার পানি পান করা জরুরী।
পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ
শীতকালীন সময়ে সঠিক পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা ত্বককে ভিতর থেকে সুরক্ষিত রাখে, ত্বকের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে। এই সময় ত্বকের আর্দ্রতা ও সুস্থতা বজায় রাখতে আপনার দৈনন্দিন ডায়েটে বিশেষ খাবার অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। শীতের সময় হরেক রকম শাক-সবজি বাজারে পাওয়া যায় যাতে থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা আপনার ত্বককে ডিটক্সিফাই করে, ত্বকের কোষগুলিকে পুনর্গঠন করতে সাহায্য করে। সঠিক খাবার আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও অনেক বেশি সাহায্য করে।
উপসংহার
শীতকাল ত্বকের জন্য খুবই চ্যালেঞ্জিং একটি সময়, এই সময়ে শুষ্কতা এবং রুক্ষতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে, তবে সঠিক যত্ন ও প্রয়োজনীয় পণ্য ব্যবহার করলে এই সমস্যা সহজেই সমাধান করা সম্ভব। ত্বকের যত্নে সঠিক ক্লিনজার, ময়েশ্চারাইজার, এবং সানস্ক্রিন ব্যবহার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়াও ঘরোয়া প্রতিকার এবং সহজ অভ্যাস ত্বকের শুষ্কতা কমাতে সাহায্য করবে। আপনার ত্বকের যত্নের এই সহজ ও কার্যকরী উপায়গুলো অভ্যাস করুন, এবং এই শীতে আপনার ত্বককে উজ্জ্বল ও মসৃণ রাখুন।