সমকালীন অবস্থার প্রেক্ষাপটে ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনের ভূমিকা আলোচনা কর
সমকালীন অবস্থার প্রেক্ষাপটে ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনের ভূমিকা আলোচনা কর
প্রশ্ন ২.০৭] সমকালীন অবস্থার প্রেক্ষাপটে ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনের ভূমিকা আলোচনা কর ।
অথবা, সমকালীন অবস্থার প্রেক্ষাপটে ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনের কার্যক্রমসমূহ বর্ণনা কর।
উত্তর ভূমিকা : ১৬০১ পূর্ববর্তী দরিদ্র কল্যাণ আইনসমূহের ব্যর্থতা ও সমালোচনার প্রেক্ষিতে প্রণয়ন করা হয় ১৬০১ সালের এলিজাবেথীয় দরিদ্র আইন। এ আইন ইংল্যান্ডের ৪৩তম দরিদ্র কল্যাণ আইন। এ আইন ইংল্যান্ডের দরিদ্র কল্যাণের ইতিহাসে সম্পূর্ণ এক ভাবধারা, আদর্শ ও মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করে। ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনের কল্যাণমুখী ভূমিকা ও ইতিবাচক প্রভাবের কারণে সমকালীন অবস্থার বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে এর প্রয়োগযোগ্যতা রয়েছে।
সমকালীন অবস্থার প্রেক্ষাপটে ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনের ভূমিকা আলোচনা কর |
• সমকালীন অবস্থার প্রেক্ষাপটে ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনের ভূমিকা : ইংল্যান্ডের তৎকালীন সমাজে অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা দূরীভূত করে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিম্নে সমকালীন অবস্থার প্রেক্ষাপটে ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনের ভূমিকা উল্লেখ করা হলো-
১. অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে : তৎকালীন ইংল্যান্ডসহ সারা বিশ্বের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রধান উৎস ছিল কৃষিকাজ। ফ্রান্সের শতবর্ষব্যাপী যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব, প্লেগ রোগের কারণে দুই- তৃতীয়াংশ লোকের মৃত্যু, সমাজতন্ত্রের অবসান, কৃষি উৎপাদন হ্রাস প্রভৃতি ইংল্যান্ডের অর্থনীতিতে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে। ফলে দরিদ্রদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ক্রমবর্ধনশীলদরিদ্রদের জন্য সরকারের বিদ্যমান কার্যক্রম অপ্রতুল প্রমাণিত হওয়ায় ইংল্যান্ডের আর্থসামাজিক জীবনব্যবস্থা একেবারে ভেঙে পড়ে। ঠিক এ পরিস্থিতিতে ১৬০১ সালের দরিদ্র আইন প্রণয়ন করে সক্ষমদের কাজের ব্যবস্থা করে অর্থনৈতিক জীবনের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা হয় ।
২. সামাজিক ক্ষেত্রে : মহামারি, দুর্ভিক্ষ, কৃষি উৎপাদন হ্রাস, শ্রমিক সংকট ইত্যাদি সমাজের দরিদ্রদের ভোগান্তিকে বাড়িয়েছে বহুগুণে। এসবের ফলে সমাজের নিম্নশ্রেণির আয়ের পথ বন্ধ হওয়ায় উচ্চবিত্ত শ্রেণির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। ফলে উচ্চবিত্তরা দরিদ্রদের নানাভাবে শোষণ বঞ্চনার শিকারে পরিণত করতো। সামাজিকভাবে দরিদ্রদের কোনো পরিচিতি ও মর্যাদা ছিল না। এ অবস্থায় ১৬০১ সালের আইন প্রণয়ন করে সরকারের পাশাপাশি সচ্ছল অভিভাবক ও আত্মীয়স্বজনদের দরিদ্রদের ভরণপোষণে আইনগতভাবে বাধ্য করা হয়। যার ফলে দরিদ্ররা ধনীদের নির্যাতন থেকে রেহাই পায় ।
৩. মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ : এ আইন প্রণীত হওয়ার আগে প্যারিশের দরিদ্র জনগণ তাদের মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ করার জন্য এক প্যারিশ থেকে অন্য প্যারিশে গমন করতো। ১৬০১ সালের আইন স্থানীয় ভিত্তিতে প্যারিশের মাধ্যমে অক্ষম, নির্ভরশীলদের মৌল মানবিক চাহিদা পূরণে অত্যন্ত গুরু
৪. ধর্মীয় ক্ষেত্রে : ১৬০১ সালের দরিদ্র আইন যখন প্রণয়ন করা হয় তখন ইংল্যান্ডের খ্রিস্টানধর্মের জয়জয়কার। খ্রিস্টধর্মের আদর্শ ও দর্শনে অনুপ্রাণিত হয়ে পরকালীন মুক্তিলাভের আশায় গির্জাভিত্তিক দানশীলতা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। সংগত কারণেই গির্জাভিত্তিক ও জাতীয় দানশীল কার্যক্রমে খ্রিস্টানধর্মের অনুসারীরা প্রাধান্য পেত। অন্য ধর্মের লোকদের দান কার্যক্রমে গুরুত্ব প্রদান করা হতো। এমতাবস্থায় জাতিধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সবার মৌল মানবিক চাহিদা পূরণের গ্যারান্টি দিয়ে প্রণয়ন করা হয় ১৬০১ সালের দরিদ্র আইন।
৫. রাজনৈতিক ক্ষেত্রে : তৎকালীন রাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় প্রণীত দরিদ্র আইনগুলো রাজার মনগড়া ইচ্ছে অনুযায়ী সাহায্য ব্যবস্থা প্রবর্তন করে। এ অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য দরিদ্রদের সব প্রয়োজন পূরণ করার জন্য জনকল্যাণমুখী আইন হিসেবে। প্রণয়ন করা হয় ১৬০১ সালের দরিদ্র আইন
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনটি অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় সব দিক থেকে সমানভাবে প্রযোজ্য ও গ্রহণযোগ্য ছিল। সমকালীন প্রেক্ষাপটে দারিদ্র্য সমস্যা মোকাবিলায় ১৬০১ সালের দরিদ্র আইন ছিল অত্যন্ত কার্যকর। অস্থিতিশীল সামাজিক পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ লাভের জন্য ১৬০১ সালের দরিদ্র আইন ছিল একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত ।ত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।