হিন্দু বিধবাবিবাহ আইন প্রণয়নে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা সম্পর্কে লেখ

হিন্দু বিধবাবিবাহ আইন প্রণয়নে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা সম্পর্কে লেখ

প্রশ্ন ৩.০৮ হিন্দু বিধবাবিবাহ আইন প্রণয়নে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা সম্পর্কে লেখ।

অথবা, বিধবাবিবাহ প্রচলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান উল্লেখ কর ।

উত্তর ভূমিকা : ভারতীয় উপমহাদেশে যে কয়েকজন সমাজ- সংস্কারক হিসেবে অবদান রেখেছেন তাদের মধ্যে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর অন্যতম। রাজা রামমোহন রায়ের মৃত্যুর পর সমাজে বিধবা হিন্দু মহিলাদের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং এতে সমাজে নানারকম সমস্যা দেখা দেয়। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সমাজে হিন্দু বিধবাবিবাহের প্রচলন করে এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।

হিন্দু বিধবাবিবাহ আইন প্রণয়নে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা সম্পর্কে লেখ
 হিন্দু বিধবাবিবাহ আইন প্রণয়নে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা সম্পর্কে লেখ

হিন্দু বিধবাবিবাহ আইন প্রণয়নে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা/অবদান : হিন্দু বিধবাবিবাহের প্রচলন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সবচেয়ে বড় সমাজসংস্কার। রাজা রামমোহন রায়ের যুগান্তকারী পদক্ষেপে সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ হলে সমাজে বিধবাদের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যায়। সে সময়ে অনেক কুলীন ব্রাহ্মণ একাধিক বিবাহ করতেন এবং তাদের স্ত্রীরা তাদের মৃত্যুর পর অস্পৃশ্য জীবনযাপন করতো। এর ফলে জীবিত থেকেও তারা মৃতের মতো অর্থহীন জীবনযাপন করতো। তখনকার হিন্দুসমাজে বিধবাদের দ্বিতীয়বার বিবাহ করার কোনো সুযোগ ছিল না। পুনঃবিবাহের সুযোগ না থাকায় এসব অকাল বিধবাদের দ্বারা সংঘটিত পাপাচারের সংখ্যাও আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পায়। এরই প্রেক্ষিতে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর হিন্দু বিধবাবিবাহ আন্দোলন শুরু করেন।

বিধবাবিবাহের পক্ষে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে তিনি ১৮৫৫ সালে তাঁর 'তত্ত্ববোধন' পত্রিকায় লেখনীর মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করে তোলেন। তিনি তাঁর লেখনীর মাধ্যমে জনগণকে একথা বুঝাতে সমর্থ হন যে, হিন্দু বিধবাবিবাহ কোনো শাস্ত্রবিরোধী কাজ নয় এবং এটি হবে সমাজের জন্য মঙ্গলজনক। পরবর্তীতে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর হিন্দু বিধবাবিবাহ প্রচলনে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন এবং এ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য ৯৮৭ জনের স্বাক্ষর সংবলিত একটি আবেদনপত্র ব্রিটিশ সরকারের নিকট পেশ করেন। এ আবেদনপত্রে বলা হয়, দেশাচার অনুসারে সমাজে হিন্দু বিধবাদের পুনঃবিবাহ নিষিদ্ধ। কিন্তু এ নিষেধ শাস্ত্রসম্মত নয়। এভাবে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৮৫৬ সালের ২৬ জুলাই হিন্দু বিধবাবিবাহ আইন পাস হয়।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর উপমহাদেশের সমাজসংস্কার আন্দোলন আকাশের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র। তৎকালীন হিন্দুসমাজে হিন্দু বিধবা মহিলাদের পুনঃবিবাহ না হওয়ার ফলে সমাজে বিভিন্ন সমস্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সমাজে হিন্দু বিধবা মহিলাদের পুনঃবিবাহের ব্যবস্থা করে সমাজসেবায় অসামান্য অবদান রাখেন। তিনি শুধু হিন্দু বিধবাবিবাহের প্রচলনই করেননি; বরং নিজের ছেলেকে হিন্দু বিধবা মহিলার সাথে বিবাহ দিয়েছেন।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ