ইয়েটস রিপোর্টের সুপারিশমালা আলোচনা কর

ইয়েটস রিপোর্ট কী | ইয়েটস রিপোর্টের সুপারিশমালা আলোচনা কর

প্রশ্ন ২.২৫ | ইয়েটস রিপোর্ট কী? ইয়েটস রিপোর্টের সুপারিশমালা আলোচনা কর।

অথবা, ইয়েটস রিপোর্ট কাকে বলে? ইয়েটস রিপোর্টের সুপারিশসমূহ বর্ণনা কর ।

উত্তর ভূমিকা : আমেরিকায় প্রতিষ্ঠিত দরিদ্রাগার ও ত্রাণ সাহায্য কার্যক্রমে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানের জন্য ম্যাসাচুসেটসের সাধারণ আদালত ১৮২১ সালে দরিদ্র সাহায্য কার্যক্রমে উদ্ভূত সমস্যা মোকাবিলা করে, সাহায্য ব্যবস্থার কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য তদন্ত করে প্রয়োজনীয় সুপারিশ করার জন্য একটি কমিটি গঠন করেন । উক্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ১৮২৪ সালে জে. ভি. এন. ইয়েটস যে রিপোর্ট প্রকাশ করেন তাই ইয়েটস রিপোর্ট। ইয়েটস রিপোর্ট অত্যন্ত সচিন্ত্রিত কতিপয় সুপারিশ প্রদান করেছে।

ইয়েটস রিপোর্ট কী  ইয়েটস রিপোর্টের সুপারিশমালা আলোচনা কর
ইয়েটস রিপোর্ট কী  ইয়েটস রিপোর্টের সুপারিশমালা আলোচনা কর

ইয়েটস রিপোর্ট : আমেরিকা ১৭৭৬ খ্রিস্টাব্দের ৪ জুলাই ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। নব্য স্বাধীন আমেরিকার জন্মলগ্নে ব্যাপক দারিদ্র্য সমস্যা একটি চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দেশের ভঙ্গুর অর্থনীতি, ব্যাপক বেকারত্ব, গণদারিদ্র্য কর্মসংস্থানের অভাব, ফসলহানি ও কম ফসল উৎপাদন এবং সর্বোপরি অধিক জনসংখ্যা বৃদ্ধি ইত্যাদি দারিদ্র্য সমস্যার ভয়াবহতার মাত্রাকে বাড়িয়েছে বহুগুণে। এ অবস্থায় প্রতিদিন নতুন নতুন সাহায্য গ্রহীতার সংখ্যা বাড়তে থাকে। এত ব্যাপক সংখ্যক লোকের ভরণপোষণে স্থানীয় প্যারিশ (Parish) প্রশাসন ও কাউন্টি (County) প্রশাসন অক্ষমতা প্রকাশ করতে থাকে। ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে আমেরিকায় নতুন নতুন সেবাকেন্দ্র গড়ে ওঠে এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে ত্রাণ ও সাহায্য কার্যক্রম পরিচালিত হতে থাকে। 

দরিদ্র জনগণের সংখ্যা ক্রমাগতভাবে বাড়তে থাকায় প্যারিশভিত্তিক দরিদ্রাগার ও সেবাকেন্দ্রগুলোর বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতি এবং ব্যয় বৃদ্ধির অভিযোগ ওঠে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, প্যারিশের ওভারসিয়ার ও প্রশাসকগণ স্বজনপ্রীতি ও রাজনৈতিক পরিচয়ের ভিত্তিতে সাহায্য অনুমোদন করায়। এমতাবস্থায় দরিদ্র সাহায্য ও ত্রাণ কার্যক্রমে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে এর কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করার প্রয়োজনীয়তা লক্ষকরা যায়। ঠিক এসময়ে ত্রাণ ও সাহায্য কার্যক্রমে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য ম্যাসাচুয়েটসের সাধারণ আদালত ১৮২১ সালে দরিদ্র সাহায্য কার্যক্রমের তদন্তের লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠন করেন। ব্যাপক তদন্ত ও অনুসন্ধানের পর এ কমিটি দরিদ্র সাহায্য ও ত্রাণ কার্যক্রমের পাঁচটি নীতি গ্রহণের সুপারিশ করে।

উক্ত সুপারিশ পেশের দুই বছর পর নিউইয়র্কের আইনসভা ১৮২৩ সালে স্টেট সেক্রেটারি জে. ভি. এন ইয়েটসকে দরিদ্র আইন ও সাহায্য কার্যক্রমে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে ব্যয় হ্রাস করে এসবের কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যসংগ্রহের নির্দেশ দেয়। যার প্রেক্ষিতে ১৮২৪ সালে জে. ভি. এন ইয়েটস তার অনুসন্ধানভিত্তিক একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেন, যা ইয়েটস রিপোর্ট নামে পরিচিত। ইয়েটস তার রিপোর্টে দরিদ্রদের দুটি শ্রেণিতে ভাগ করেন । যথা :

১. স্থায়ী দরিদ্র ও 

২. অস্থায়ী দরিদ্র।

তার রিপোর্টের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ ছিল যথাযথ অনুসন্ধান ছাড়া ভিক্ষুক ও ভবঘুরেদের জন্য ত্রাণ সাহায্য অনুমোদন না করা । 

• ইয়েটস রিপোর্টের সুপারিশমালা : ইয়েটস রিপোর্টের সুপারিশগুলো অত্যন্ত পরিকল্পিত ও সুচিন্তিত। ইয়েটস রিপোর্টের সুপারিশসমূহ নিম্নে উল্লেখ করা হলো—

১. প্রত্যেক কাউন্টির জন্য একটি কর্মসংস্থান কেন্দ্র স্থাপন করা। যা কৃষিকাজের জন্য খামার ব্যবস্থা ও শিশুদের জন্য

২. বাধ্যতামূলকভাবে কঠোর পরিশ্রম করানোর জন্য সক্ষম ভিক্ষুক ও ভবঘুরেদের জন্য শ্রমাগার ব্যবস্থা প্রচলন করা । 

৩. হুইস্কি তৈরির কারখানায় অতিরিক্ত আবগারি শুল্ক ধার্য করার মাধ্যমে দরিদ্র ত্রাণ সাহায্য কার্যক্রমের তহবিল বৃদ্ধি করা । 

৪. নিউইয়র্কের যেকোনো কাউন্টিতে এক বছর বসবাসের বিধান প্রবর্তন করে আইনগতভাবে বসতি স্থাপনের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।

৫. দরিদ্র আইনসংক্রান্ত বিষয়ে বহিষ্কার আদেশ ও আপিল পদ্ধতির বিলোপসাধন।

৬. ১৮-৫০ বছর বয়সী কোনো সক্ষম পুরুষকে সাহায্যের তালিকায় না রাখা ।

৭. রাজ্যে দরিদ্রতা সৃষ্টিকারী ও রাস্তায় ভিক্ষা করা ভিক্ষুকদের শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা করা।

উপসংহার : উপযুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ইয়েটস রিপোর্টের পরিকল্পিত ও সুচিন্তিত সুপারিশসমূহ আমেরিকার দরিদ্র সাহায্য ও ত্রাণ কার্যক্রমে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয় । ইয়েটস রিপোর্টে বিভিন্ন ধরনের প্রশাসনিক জটিলতা, আইনগত বাধা, কারাগারের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, কাজ করার সুষ্ঠু পরিবেশের অভাব, দরিদ্রদের প্রতি নির্মম আচরণ ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরা হয় । ইয়েটস রিপোর্টের বাস্তবসম্মত সুপারিশের ভিত্তিতে নিউইয়র্ক, ম্যাসাচুসেটসসহ আমেরিকার বড় বড় শহরে শ্রমাগার ও দরিদ্রগার প্রতিষ্ঠা করা হয় ।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ