ইংল্যান্ডের দান সংগঠন সমিতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং কার্যক্রম বর্ণনা কর

ইংল্যান্ডের দান সংগঠন সমিতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং কার্যক্রম বর্ণনা কর

প্রশ্ন ২.১৭ | ইংল্যান্ডের দান সংগঠন সমিতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং কার্যক্রম বর্ণনা কর।

অথবা, ইংল্যান্ডের দান সংগঠন সমিতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য উল্লেখপূর্বক এর কার্যক্রম আলোচনা কর।

উত্তর ভূমিকা : ইংল্যান্ডে শিল্পবিপ্লব পরবর্তী সময়ে আর্থসামাজিক সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এগিয়ে আসে। এ সময় গির্জাভিত্তিক ত্রাণ কার্যক্রম ব্যাপক প্রসার লাভ করে। গির্জার পাশাপাশি দানশীল ব্যক্তি ও সংগঠনগুলো ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করে। ফলে গির্জা এবং দানশীল ব্যক্তি ও সংগঠনের মধ্যে মতভেদ ও প্রতিযোগিতা তৈরি হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতি তৎকালীন ত্রাণ কার্যক্রমে এবং বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করে । এ বিশৃঙ্খলা দূর করে ত্রাণ কার্যক্রমকে সংগঠিত ও সমন্বয় সাধনের লক্ষ্যে গড়ে তোলা হয় দান সংগঠন সমিতি ।

ইংল্যান্ডের দান সংগঠন সমিতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং কার্যক্রম বর্ণনা কর
ইংল্যান্ডের দান সংগঠন সমিতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং কার্যক্রম বর্ণনা কর

ইংল্যান্ডের দান সংগঠন সমিতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য : ইংল্যান্ডের ত্রাণ কার্যক্রমে শৃঙ্খলা বিদ্যমান ফিরিয়ে আনা এবং সাহায্য ব্যবস্থার পুনরাবৃত্তি রোধ করে অপচয় হ্রাস করার লক্ষ্যে দান সংগঠন সমিতি গঠন করা হয়। দান সংগঠন সমিতির উদ্দেশ্য সম্পর্কে Fink বলেন, কোনো ধরনের পুনরাবৃত্তি ও প্রতিযোগিতা ছাড়া দ্রুত ও অল্প ব্যয়ে ত্রাণ দেওয়ার কৌশল ও উপায়ের উন্নয়নসাধনই 'COS' এর মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। এছাড়া James HS Bossard 'COS' এর পাঁচটি উদ্দেশ্যের কথা উল্লেখ করেছেন। যেমন-

১. ত্রাণ কার্যক্রমে পরিচালনাকারী বিভিন্ন সমিতির কার্যাবলির মধ্যে সমন্বয়সাধন করে ত্রাণ কার্যক্রমের পুনরাবৃত্তি রোধ করা । 

২. প্রতিটি সাহায্য সংস্থার কার্যাবলির সাথে অনুরূপ সংস্থার অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের সমন্বয় ঘটানো।

৩. সব ধরনের সাহায্যপ্রার্থীর জন্য একটি নিবন্ধন ব্যুরো প্রতিষ্ঠা করা।

৪. ব্যক্তিস্বাধীনতা ও আত্মনির্ভরশীলতার চেতনা জাগ্রত করার জন্য বস্তুগত সাহায্যদানের পরিবর্তে ব্যক্তিগত সেবা প্রদান করা । 

৫. দারিদ্র্য মোকাবিলায় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা । ত্রাণ কার্যক্রমে বিশৃঙ্খলার অবসান ঘটানো ও সরকারি-বেসরকারি ও গির্জার ত্রাণ কার্যক্রমের মধ্যে সমন্বয়সাধন করে দরিদ্র সাহায্য কার্যক্রমে গতিশীলতা ফিরিয়ে আনা দান সংগঠন সমিতির মূল উদ্দেশ্য। দরিদ্র ত্রাণ কার্যক্রমের মধ্যে পার্থক্য দূরীভূত করা এবং সাহায্য কার্যক্রমের পুনরাবৃত্তি রোধে দান সংগঠন সমিতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দান সংগঠন সমিতি বিদ্যমান ত্রাণ কার্যক্রম ও ত্রাণ পরিচালনাকারী সংগঠনসমূহের মধ্যে সমন্বয় ও যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়।

ইংল্যান্ডের দান সংগঠন সমিতির কার্যক্রম : নিম্নে ইংলেন্ডের দান সংগঠন সমিতির কার্যক্রম আলোচনা করা হলো— 

১. অনুসন্ধান বিভাগ প্রতিষ্ঠা : দান সংগঠন সমিতি সাহায্য ব্যবস্থায় পুনরাবৃত্তি রোধ করে শৃঙ্খলা আনয়ন করার জন্য অনুসন্ধান, বিভাগ প্রতিষ্ঠা করে। এখানে সাহায্যগ্রহীতার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হতো। যেসব বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হতো তা ছিল সাহায্যপ্রার্থীর বয়স, শিক্ষাগত যোগ্যতা, শারীরিক অবস্থা, পারিবারিক ইতিহাস, আর্থসামাজিক অবস্থা, কোনো সাহায্যসেবা পাচ্ছে কি না ইত্যাদি। এতে সাহায্য ব্যবস্থায় পুনরাবৃত্তি রোধ করা সম্ভব হয়।

২. এলবার ফিল্ড ব্যবস্থা : 'COS' এর কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে জার্মানিও এলবার ফিল্ড ব্যবস্থা অনুসরণ করা হয়। এলবার ফিল্ড জার্মানির সমাজকল্যাণমূলক ব্যবস্থা। এলবার ফিল্ড ব্যবস্থায় প্রতিটি শহরকে কয়েকটি জেলায় বিভক্ত করা হয় । ত্রাণ কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার দায়িত্ব জেলার মনোনীত স্বেচ্ছাসেবকদের ওপর অর্পণ করা হয়। এসব স্বেচ্ছাসেবক দরিদ্রদের প্রয়োজন বিবেচনায় নিয়ে নগদ অর্থ, খাদ্য, বস্ত্রসহ তাদের মানবিক অবস্থা পরিবর্তনের লক্ষ্যে কাজ করে। এসব স্বেচ্ছাসেবী দরিদ্রদের সাহায্যের প্রতি নির্ভরশীলতা হ্রাস করার জন্য নানাভাবে উদ্বুদ্ধ করে । 

৩. ভিক্ষাবৃত্তি প্রতিরোধ : দান সংগঠন সমিতির অন্যতম কার্যাবলি ছিল ভিক্ষাবৃত্তি প্রতিরোধ করা। এলবার ফিল্ড ব্যবস্থার মাধ্যমে তাদের কাজে উৎসাহী করা হতো। দান সংগঠন সমিতির মাধ্যমে দরিদ্রদের বিভিন্ন সংস্থার আওতায় ত্রাণ সাহায্য প্রদান করে ভিক্ষাবৃত্তি রোধ করা হয়।

৪. নিবন্ধন ব্যুরো প্রতিষ্ঠা : দরিদ্র সাহায্য ব্যবস্থায় পুনরাবৃত্তি রোধ করার জন্য দান সংগঠন সমিতি দরিদ্রদের ব্যাপক তথ্যভিত্তিক নিবন্ধন ব্যুরো প্রতিষ্ঠা করেছিল ।

৫. সাহায্য কার্যক্রমে সমন্বয়সাধন : দান সংগঠন সমিতির অন্যতম কাজ ছিল চার্চ এবং সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের কাজের মধ্যে সমন্বয়সাধন করা। এর ফলে সাহায্য ব্যবস্থায় প্রতিযোগিতা ও পুনরাবৃত্তি রোধ করা সম্ভব হয় ।

৬. ব্যয়ভার হ্রাস : দান সংগঠন সমিতি দরিদ্র সাহায্য কার্যক্রমে সরকারি ব্যয় হ্রাসে সফল হয়েছিল। দান সংগঠন সমিতির স্বেচ্ছাসেবকরা বিভিন্ন ধরনের অনুদান সংগ্রহ করে কেন্দ্রীয়ভাবে সাহায্য কার্যক্রম পরিচালনা করতো। দান সংগঠন সমিতির এ জাতীয় কার্যাবলির কারণে দরিদ্র সাহায্যের পুনরাবৃত্তি রোধ করা সম্ভব হয়। যার ফলে ত্রাণ কার্যক্রমে সরকারি ব্যয় হ্রাস পায় । 

উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ইংল্যান্ডে শিল্পবিপ্লবোত্তর কালে দরিদ্র সাহায্য কার্যক্রমে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে সাহায্যের অপচয় রোধ করার জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয় দান সংগঠন সমিতি। দান সংগঠন সমিতির মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল দরিদ্র সাহায্য কার্যক্রমে প্রতিযোগিতা বন্ধ করে সাহায্যের পুনরাবৃত্তি রোধ করা। দান সংগঠন সমিতির কার্যক্রম উদ্ভূত বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি মোকাবিলা করে সাহায্য ব্যবস্থাকে সংগঠিত করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ