ইংল্যান্ডের দান সংগঠন সমিতির বৈশিষ্ট্য উল্লেখপূর্বক এর সফলতা আলোচনা কর
ইংল্যান্ডের দান সংগঠন সমিতির বৈশিষ্ট্য উল্লেখপূর্বক এর সফলতা আলোচনা কর
অথবা, ইংল্যান্ডের দান সংগঠন সমিতির বৈশিষ্ট্য ও সফলতা বর্ণনা কর ।
উত্তর ভূমিকা : চার্চভিত্তিক সংগঠন এবং মানবহিতৈষী ব্যক্তিদের মধ্যে দরিদ্র সাহায্য কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে এক ধরনের প্রতিযোগিতা ও মতপার্থক্য দেখা দেয়। এ ধরনের সমস্যা মোকাবিলা এবং সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ কার্যক্রমের মধ্যে সমন্বয়সাধন করার জন্য ইংল্যান্ডে গড়ে তোলা হয় দান সংগঠন সমিতি। দান সংগঠন সমিতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটা তৎকালীন ত্রাণ কার্যক্রমে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে গতিশীলতা | | আনয়ন করার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে ।নিম্নে ইংল্যান্ডের দান সংগঠন সমিতির সফলতা আলোচনা করা হলো-
ইংল্যান্ডের দান সংগঠন সমিতির বৈশিষ্ট্য উল্লেখপূর্বক এর সফলতা আলোচনা কর |
১. সাহায্য কার্যক্রমে পুনরাবৃত্তি রোধ : দান সংগঠন সমিতি সাহায্য ব্যবস্থার পুনরাবৃত্তি রোধ করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সফল। 'COS' সাহায্যগ্রহীতাদের নাম নিবন্ধনের পাশাপাশি অনুসন্ধানের মাধ্যমে সাহায্যগ্রহীতার প্রকৃত অবস্থা জানার চেষ্টা করে। ফলে একই সাহায্য একই ব্যক্তি একাধিকবার পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল না।
২. সরকারি ব্যয় হ্রাস : অনুসন্ধানের মাধ্যমে সাহায্যপ্রার্থীর প্রকৃত অবস্থা জেনে তার সাহায্য লাভের যোগ্যতা যাচাই করা হয়। অন্যদিকে, কেন্দ্রীয়ভাবে সাহায্য প্রার্থীর নাম নিবন্ধনের ব্যবস্থা করে। যার ফলে সে একাধিক জায়গা থেকে সাহায্য পায় না। ফলে ত্রাণ কার্যক্রমে সরকারি ব্যয় হ্রাস পায়। তাই বলা যায়, ত্রাণ কার্যক্রমে সরকারি ব্যয় হ্রাস করার ক্ষেত্রে 'ঈঙঝ' সফল ছিল
৩. ভুয়া সাহায্য প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদ : দান সংগঠন সমিতি অনুসন্ধানের মাধ্যমে ভুয়া ও নামমাত্র প্রতিষ্ঠান খুঁজে বের করে তা উচ্ছেদ করে দিতে সক্ষম হয় । এদিক থেকে 'COS' অনেক সফল ।
৪. সাহায্য ব্যবস্থায় প্রতিযোগিতা বন্ধ করণ : গির্জা ও মানবহিতৈষী সংস্থাসমূহের মধ্যকার সাহায্যসংক্রান্ত প্রতিযোগিতা বন্ধ করার ক্ষেত্রে দান সংগঠন সমিতি অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করে ।
৫. দরিদ্রদের মানসিক শক্তি বৃদ্ধি করা : দান সংগঠন সমিতি দরিদ্রদের ত্রাণ সাহায্য প্রদানের পাশাপাশি তাদের দারিদ্র্য সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য বিভিন্ন ধরনের আত্মকর্মসংস্থানমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করে। ফলে ব্যক্তি নিজের ও পরিবারের ভরণপোষণে সক্ষম হয়, যা তাদের মানসিক শক্তিকে বাড়িয়ে দেয়। তাই বলা যায়, দরিদ্রদের মনোবল চাঙ্গা করার ক্ষেত্রে 'COS' সফল ছিল।
৬. পেশাদার ভিক্ষুক উচ্ছেদ : পেশাদার ভিক্ষুকদের উচ্ছেদে দান সংগঠন সমিতি অত্যন্ত সফল ছিল। দান সংগঠন সমিতির অনুসন্ধান কার্যক্রম ভিক্ষুক ও সাহায্যপ্রার্থীর প্রকৃত অবস্থা যাচাই করে। যার কারণে অনেক পেশাদার ভিক্ষুকের আসল চরিত্র উন্মোচিত হয় । ৭. দরিদ্রদের পুনর্বাসন : দান সংগঠন সমিতি কার্যকর সাহায্য ব্যবস্থা প্রবর্তন করে দরিদ্রদের পুনর্বাসন করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সফল ছিল ।
৭. সমন্বিত সাহায্য ব্যবস্থা : দান সংগঠন সমিতি চার্চ এবং সরকারি- বেসরকারি ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের কাজের মধ্যে সমন্বয়সাধন করার লক্ষ্যে কাজ করে। এর ফলে সাহায্য ব্যবস্থায় প্রতিযোগিতা ও পুনরাবৃত্তি রোধ করা সম্ভব হয় ।
৮. ব্যয়সংকোচন নীতি : দান সংগঠন সমিতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সাহায্য ব্যবস্থায় পুনরাবৃত্তি রোধ করে দরিদ্র সাহায্য কার্যক্রমে সরকারি ব্যয় হ্রাস করা। এর ফলে সমাজের সবার দরিদ্রের জন্য অল্প খরচে সাহায্য নিশ্চিত করা যায় ।
৯. সমাজের সবার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ : দান সংগঠন সমিতি সমাজের অসুস্থ, অক্ষম, শিশু, বৃদ্ধ, পঙ্গু সবার জন্য কল্যাণ ব্যবস্থার প্রবর্তন করে।
১০. পেশাদার সমাজকর্মের ভিত্তি স্থাপন : দান সংগঠন সমিতির সংগঠিত ও পরিকল্পিত কার্যাবলির কারণে পেশাদার সমাজকর্মের মৌলিক পদ্ধতিগুলোর বিকাশসাধন করা সম্ভব হয় ।
● দান সংগঠন সমিতির সফলতা : তৎকালীন ইংল্যান্ডের ত্রাণ কার্যক্রমে সমন্বয়সাধন করে সাহায্য ব্যবস্থার পুনরাবৃত্তি রোধ করে দরিদ্রদের পুনর্বাসনে দান সংগঠন সমিতি সফলতা অর্জন করে ছিল ।
ইংল্যান্ডের দান সংগঠন সমিতির বৈশিষ্ট্য : নিম্নে ইংল্যান্ডের দান সংগঠন সমিতির বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হলো-
১. এলবার ফিল্ড ব্যবস্থা : দান সংগঠন সমিতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এটা সাহায্য ব্যবস্থার ক্ষেত্রে জার্মানির এলবার ফিল্ড ব্যবস্থা প্রবর্তন করে। এ ব্যবস্থায় প্রতিটি শহরকে কয়েকটি ছোট ছোট জেলায় বিভক্ত করে মনোনীত স্বেচ্ছাসেবকদের দ্বারা সাহায্য কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় ।
২. সাহায্য ব্যবস্থার পুনরাবৃত্তি রোধ : দান সংগঠন সমিতি কর্তৃক সাহায্য ব্যবস্থার পুনরাবৃত্তি রোধ করার জন্য সাহায্যার্থীর নাম নিবন্ধনের ব্যবস্থা করা হয় ।
৩. বহুমুখী সাহায্য ব্যবস্থা : 'COS' তার কার্যাবলির মাধ্যমে স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে সাহায্যগ্রহীতার সমস্যা সমাধানের জন্য বহুমুখী ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এ ব্যবস্থার আওতায় নগদ, খাদ্য, বস্ত্রসহ তাদের মানসিক অবস্থার পরিবর্তনের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।
৪. অনুসন্ধানভিত্তিক সাহায্য কার্যক্রম : দান সংগঠন সমিতির কাজের অন্যতম মূলনীতি ও বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সাহায্যের জন্য ব্যক্তিকে নির্বাচনের আগে তার প্রকৃত অবস্থা জানার জন্য অনুসন্ধান পরিচালনা করা ।
৫. ভিক্ষাবৃত্তি প্রতিরোধ : দান সংগঠন সমিতি তাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে ভিক্ষাবৃত্তিকে নিরুৎসাহী করে দরিদ্রদের কাজে উৎসাহী করে তোলা হতো।
৬. নিবন্ধনের ব্যবস্থাকরণ : দান সংগঠন সমিতির কার্যাবলির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সাহায্য ব্যবস্থায় পুনরাবৃত্তি রোধ করার জন্য ব্যাপক তথ্যভিত্তিক নিবন্ধন ব্যুরো প্রতিষ্ঠা করা। নিবন্ধন ব্যুরোতে নামের তালিকা থাকায় সাহায্য ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়েছিল।
৭. সমন্বিত সাহায্য ব্যবস্থা : দান সংগঠন সমিতি চার্চ এবং সরকারি- বেসরকারি ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের কাজের মধ্যে সমন্বয়সাধন করার লক্ষ্যে কাজ করে। এর ফলে সাহায্য ব্যবস্থায় প্রতিযোগিতা ও পুনরাবৃত্তি রোধ করা সম্ভব হয় ।
৮. সরকারি-বেসরকারি সাহায্য কার্যক্রমে সমন্বয়সাধন : দান সংগঠন সমিতি প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য ছিল সরকারি ও বেসরকরি সাহায্য সংস্থার মধ্যকার অনর্থক প্রতিযোগিতা বন্ধ করে তাদের কার্যক্রমের মাঝে সমন্বয়সাধন করা। এক্ষেত্রেও দান সংগঠন সমিতি অত্যন্ত সফল ছিল।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ত্রাণ কার্যক্রমে বিশৃঙ্খলার অবসান ঘটানো এবং সরকারি-বেসরকারি ও গির্জার ত্রাণ কার্যক্রমের মধ্যে সমন্বয়সাধন করে দরিদ্র সাহায্য কার্যক্রমে গতিশীলতা ফিরিয়ে আনা ছিল দান সংগঠন সমিতির মূল উদ্দেশ্য । দরিদ্র ত্রাণ কার্যক্রমে মতপার্থক্য দূরীভূত করা এবং সাহায্য কার্যক্রমে পুনরাবৃত্তি রোধে দান সংগঠন সমিতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দান সংগঠন সমিতি বিদ্যমান ত্রাণ কার্যক্রম ও ত্রাণ পরিচালনাকারী সংগঠনসমূহের মধ্যে সমন্বয় ও যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়।