দান সংগঠন সমিতি কী? দান সংগঠন সমিতির পটভূমি আলোচনা কর
দান সংগঠন সমিতি কী? দান সংগঠন সমিতির পটভূমি আলোচনা কর
প্রশ্ন ২.১৬ | দান সংগঠন সমিতি কী? দান সংগঠন সমিতির পটভূমি আলোচনা কর।
অথবা, দান সংগঠন সমিতির পরিচয় উল্লেখপূর্বক এর পটভূমি বর্ণনা কর।
উত্তর ভূমিকা : ১৮৬৯ সালে ইংল্যান্ডে ত্রাণ কার্যক্রমে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী প্রতিষ্ঠানের নাম হলো ‘দান সংগঠন সমিতি'। দান সংগঠন সমিতি সনাতন সমাজকল্যাণ ধারাকে আধুনিক পেশাগত সমাজকর্মের মর্যাদায় উন্নীত করার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। দান সংগঠন সমিতি একটি প্রশাসনিক ও সেবাদানকারী সংগঠনের নাম, যা সরকারি ও বেসরকারি সাহায্য কার্যক্রমের মধ্যে সমন্বয়সাধন করে সাহায্য ব্যবস্থার পুনরাবৃত্তি রোধ করে দরিদ্র সাহায্য সংক্রান্ত ব্যয় হ্রাস করতে সক্ষম হয় ।
দান সংগঠন সমিতি কী দান সংগঠন সমিতির পটভূমি আলোচনা কর |
দান সংগঠন সমিতি : দান সংগঠন সমিতির ইংরেজি নাম 'Charity Organization Society' সংক্ষেপে 'COS' বা দান সংগঠন সমিতি বলা হয়। এটি ১৮৬৯ সালে ইংল্যান্ডে প্রথম গড়ে ওঠে। ঊনবিংশ শতাব্দীর সত্তরের দশকে ইংল্যান্ডের ব্যাপক বেকারত্ব, অর্থনৈতিক মন্দা ইত্যাদির কারণে দারিদ্র্যের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। এসময় দরিদ্রদের সাহায্য করার জন্য অনেক বেসরকারি ও স্বেচ্ছাসেবী ত্রাণ ও দান সংগঠন গড়ে ওঠে। এ সময় ইংল্যান্ডে খ্রিস্টানধর্ম রাপায়। ইংল্যান্ডের সব গির্জা, চার্চ ও বেসরকারি ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করায় সমিতি উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় ত্রাণ বিতরণ করে। ফলে সমমনা এসব প্রতিষ্ঠানের মাঝে সাহায্য পরিচালনাসংক্রান্ত ব্যাপারে একটা প্রতিযোগিতা তৈরি হয়।
পরবর্তীতে দেখা যায়, প্রতিযোগিতার কারণে একই সাহায্য একই ব্যক্তি একাধিক প্রতিষ্ঠান থেকে পেয়েছে। আবার অন্যদিকে কেউ ত্রাণ পর্যাপ্ত না থাকায় কোনো ধরনের সাহায্যই পাচ্ছে না। এ জাতীয় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি বিদ্যমান ত্রাণ কার্যক্রমে এক অস্থিতিশীলতার জন্ম দেয়। এতে ত্রাণ কার্যক্রমে পুনরাবৃত্তি ও সাহায্য দ্রব্যের অপচয় বৃদ্ধি পেতে থাকে। এ জাতীয় পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য সরকারি ও বেসরকারি সাহায্য সংস্থার সমন্বয়সাধনের জন্য একটি বোর্ড গঠনের সুপারিশ করা হয় । রিচার্ড গ্রিন, এডওয়ার্ড ডেনিসন, ওকট্যাভিয়া হিল, স্যামুয়েল বার্নেট, স্যার স্টুয়ার্ট লুচ প্রমুখ ব্যক্তির প্রচেষ্টায় ১৮৬৯ সালে লন্ডনে "The Society for Organizing Charitable Relief and Repressing Mendccity," পরবর্তীতে নামকরণ করা হয় দান সংগঠন সমিতি 'Charity Organization Society'
দান সংগঠন সমিতি চার্লমাসের নীতির ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠা করা হয়। দান সংগঠন সমিতি তার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি অনুসন্ধান বিভাগ চালু করে। দান সংগঠন সমিতি সাহায্য প্রার্থীদের নাম নিবন্ধনের ব্যবস্থা করে। 'COS' তার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে গিয়ে জার্মানির এলবার ফিল্ড ব্যবস্থা অনুসরণ করে। এ সমিতি পরিদর্শনের মাধ্যমে দারিদ্র্যের কারণ অনুসন্ধান ও কার্যকর ভূমিকা রাখে। দান সংগঠন সমিতি পাঁচটি প্রধান উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য পরিচালিত হয়। দান সংগঠন সমিতি সরকারি-বেসরকারি সাহায্যের মধ্যে সমন্বয়সাধন করে সরকারি পর্যায়ে সাহায্যের পুনরাবৃত্তি রোধ করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং ভুয়া সাহায্য সংস্থা চিহ্নিতকরণ ও বিলোপসাধনে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
দান সংগঠন সমিতির কার্যক্রম ব্যক্তি সমাজকর্ম ও সমষ্টি সমাজকর্মের ধারণা প্রতিষ্ঠা করতে সহায়ক ভূমিকা রাখে ইংল্যান্ডে ১৩৪৯-১৮৩৪ সাল পর্যন্ত। প্রায় পাঁচশত বছর যাবৎ দরিদ্র কল্যাণে বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করা হলেও এসব আইন দরিদ্র সমস্যা মোকাবিলায় উল্লেখযোগ্য কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। ফলে সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে সেবা প্রবর্তনের প্রয়োজনীয়তা পরিলক্ষিত হয়। ঊনবিংশ শতাব্দীর সত্তরের দশকের উদ্ভূত সমস্যা মোকাবিলা, করতে গিয়ে গির্জা ও মানবহিতৈষী ব্যক্তি দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। এ জাতীয় দ্বন্দ্বমূলক পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য গড়ে তোলা হয় দান সংগঠন সমিতি।
● দান সংগঠন সমিতির পটভূমি : লন্ডনে দান সংগঠন সমিতি বা 'COS' এর পটভূমি রচনায় বিদ্যমান দরিদ্র সমস্যাসংক্রান্ত আইনগুলোর ব্যর্থতা ও ত্রাণ কার্যক্রমে গির্জা এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মতবিরোধ ও অনর্থক প্রতিযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিম্নে দান সংগঠন সমিতি প্রতিষ্ঠার পটভূমি আলোচনা করা হলো-
১. ১৮৩৪ সালের দরিদ্র সংস্কার আইনের ব্যর্থতা : ১৮৩৪ সালের দরিদ্র সংস্কার আইনের দমন, নিপীড়ন, ও নির্যাতনমূলক ব্যবস্থা দরিদ্র সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হয়। দরিদ্র জনগণ শ্রমাগার ও দরিদ্রাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন করতে থাকে। এমতাবস্থায় একটি শৃঙ্খলিত ও সময়োপযোগী ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করা হয় ।
২. অর্থনৈতিক মন্দা : ইংল্যান্ডে অর্থনৈতিক মন্দা বিদ্যমান ত্ৰাণ কার্যক্রমকে অস্থিতিশীল করে তোলে। ফলে বেকারত্ব, দরিদ্রদের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বাড়তে থাকে, যা বিদ্যমান আইনগত কর্মসূচি দ্বারা মোকাবিলা করা সম্ভব ছিল না।
৩. কৃষি উৎপাদন হ্রাস : শিল্পবিপ্লবকালে শৃঙ্খলিত শ্রমিকের চাহিদা বাড়তে থাকে। গ্রামীণ শ্রমিকরা কাজের আশায় শহরে ভিড় করতে থাকায় গ্রামে শ্রমিক সংকট দেখা দেয়। ফলে কৃষি উৎপাদন মারাত্মকভাবে কমে যায়। অতিরিক্ত বেকার জনগণের চাহিদা পূরণ ও ভরণপোষণে বিদ্যমান সাহায্য কার্যক্রম অপ্রতুল প্রমাণিত হওয়ায় নতুন ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব হয় ।
৪. সাহায্য কার্যক্রমে সমন্বয়হীনতা : ইংল্যান্ডের তৎকালীন সমস্যা মোকাবিলায় গির্জা কেন্দ্রীয় সাহায্য ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গির্জার পাশাপাশি এ সময় ব্যক্তিগত উদ্যোগে ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমেও সাহায্য কার্যক্রম পরিচালিত করা হতো। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাসমূহের একটা অনর্থক প্রতিযোগিতা তৈরি হয়ে যায়। এমনকি এক গির্জা অন্য গির্জার সাথে প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠে। সাহায্য কার্যক্রমে এ জাতীয় সমন্বয়হীনতা দূর করার জন্য দান সংগঠন সমিতি গঠন করা হয় ।
৫. অপচয় হ্রাস : গির্জা ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলোর মাঝে ত্রাণ কার্যক্রমের প্রতিযোগিতা ও পুনরাবৃত্তির ফলে ত্রাণ কার্যক্রমে অর্থের অপচয় হয়। এ জাতীয় অপচয় দূর করে সাহায্য কার্যক্রমে গতিশীলতা আনয়ন করার জন্য দান সংগঠন সমিতির মতো প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য হয়ে পড়ে। সরকারি- বেসরকারি সাহায্য প্রতিষ্ঠান এবং গির্জাসমূহের ত্রাণ কার্যক্রমে যে সমন্বয়হীনতা তৈরি হয় তা মোকাবিলা করার জন্য ১৮৬৯ সালে লন্ডনে 'Society for Organization Charitable Relief and Repressing Mendicity' গঠিত হয়। যা পরবর্তীতে নামকরণ করা হয় 'Charity Organization Society (COS) ' বা দান সংগঠন সমিতি ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধে শিল্পবিপ্লবের সমৃদ্ধির যুগে ইংল্যান্ডের সমাজব্যবস্থায় কতকগুলো নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের জন্ম হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় দানশীল বেসরকারি সংগঠন, চার্চ বা গির্জা ও সরকারি প্রতিষ্ঠান সাহায্য কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে। কিন্তু এসব চার্চ বা গির্জা এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে পরিচালিত সাহায্য ব্যবস্থায় দ্বৈততা ও পুনরাবৃত্তি তৈরি করে। তাই দরিদ্র সাহায্য কার্যক্রমে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার সংগঠিত ব্যবস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয় দান সংগঠন সমিতি সাহায্য ব্যবস্থার পুনরাবৃত্তি রোধ করে ব্যয় হ্রাসে অত্যন্তষ্ট্রধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠা প্রায়। ইংল্যান্ডের সব নিল