বিভারিজ রিপোর্টের সুপারিশমালা ও নীতিমালা আলোচনা কর

বিভারিজ রিপোর্টের সুপারিশমালা ও নীতিমালা আলোচনা কর

প্রশ্ন ২.২১ | বিভারিজ রিপোর্টের সুপারিশমালা ও নীতিমালা আলোচনা কর।

অথবা, বিভারিজ রিপোর্টের সুপারিশ ও নীতিসমূহ বর্ণনা কর।

উত্তর ভূমিকা : ইংল্যান্ডের বর্তমান সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মূল রূপকার হচ্ছে বিভারিজ রিপোর্ট। বিভারিজ রিপোর্টে প্রদত্ত সুপারিশমালার ভিত্তিতে ইংল্যান্ডের সমাজসেবামূলক কার্যক্রম সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে উপস্থাপিত হয়। বিভারিজ রিপোর্টের সুপারিশমালা দীর্ঘ চিন্তা ও পরিকল্পনার ফসল। 

বিভারিজ রিপোর্টের সুপারিশমালায় ইংল্যান্ডের সব জনগণের জন্য কল্যাণমূলক ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয় । বিভারিজ রিপোর্টের সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করার জন্য কতকগুলো নীতিমালা অনুসরণ করা হয় ।

বিভারিজ রিপোর্টের সুপারিশমালা ও নীতিমালা আলোচনা কর
বিভারিজ রিপোর্টের সুপারিশমালা ও নীতিমালা আলোচনা কর

● বিভারিজ রিপোর্টের সুপারিশমালা : নিম্নে বিভারিজ রিপোর্টের সুপারিশমালা আলোচনা করা হলো-

১. একটি একীভূত, সর্বাত্মক ও পর্যাপ্ত সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি চালু করা ।

২. সামাজিক বিমা সুবিধা থেকে বঞ্চিত জনগণের জন্য জাতীয় ভিত্তিক কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারি সাহায্যের প্রবর্তন করা । 

৩. প্রথম শিশু বাদে পরবর্তী শিশুদের জন্য সাপ্তাহিক শিশু ভাতার (বর্তমানে পারিবারিক ভাতা) ব্যবস্থা করা ।

৪. জনগণের জন্য ব্যাপকভাবে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য ও পুনর্বাসন কার্যক্রম চালু করা ।

৫. অর্থনৈতিক বিপর্যয়কালীন গণ বেকারত্ব রোধকল্পে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।

বিভারিজ রিপোর্টের নীতিমালা : বিভারিজ রিপোর্টের সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য ৬টি মৌলিক নীতির কথা বলা হয়েছে। নীতিগুলো হলো—

১. একীভূত প্রশাসন : বিভারিজ রিপোর্টের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় একটি একীভূত প্রশাসনের মাধ্যমে যাবতীয় সেবা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করার জন্য কর্মসূচি গ্রহণ থেকে শুরু করে বাস্তবায়ন ও সমাপ্তি পর্যন্ত সব কাজ এ প্রশাসনিক কাঠামোর আওতায় সম্পাদন করা হবে।

২. কর্মসূচি ব্যাপকভাবে সম্প্রসারণ : বিভারিজ রিপোর্টের এ নীতির মূলকথা হলো— সমাজের সবাইকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনা । সমাজের সব স্তরের জনগণ সামাজিক বিমা কিংবা সামাজিক সাহায্য কর্মসূচির আওতায় আসবে। সামাজিক নিরাপত্তার মাধ্যমে রাষ্ট্রের প্রত্যেক নাগরিকের মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ ও ভরণপোষণের কর্মসূচি সম্প্রসারণ করতে হবে।

৩. সমহারে চাঁদা প্রদান : বিভারিজ রিপোর্টের নীতি অনুযায়ী সামাজিক বিমা কর্মসূচির আওতায় সুবিধা লাভের জন্য সবাইকে সমানহারে চাঁদা প্রদান করতে হতো। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে সবার উপার্জন সমান না থাকায় সবার পক্ষে সমানহারে চাঁদা প্রদান করা সম্ভব হয়নি। তাই পরবর্তীতে বিভারিজ রিপোর্টের এ নীতিমালা সংশোধন করে উপার্জনের ভিত্তিতে চাঁদা নির্ধারণ করা হয় ।

8. গ্রহীতার মৌল চাহিদা পূরণের জন্য সার্বিক সাহায্য দান : বিভারিজ রিপোর্টে বর্ণিত সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির উদ্দেশ্য ছিল সমাজের সবার ন্যূনতম মৌলিক চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা করা। বিভারিজ রিপোর্টে বর্ণিত সামাজিক বিমা, সামাজিক সাহায্য, জনস্বাস্থ্য সেবার আওতায় মৌল মানবিক চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতো ।

৫. জনসংখ্যার শ্রেণি বিভাজন : জনসংখ্যার শ্রেণি বিভাজনের ক্ষেত্রে বিভারিজ কমিটি ৬টি শ্রেণির কথা উল্লেখ করেছেন। যথা : চাকরিজীবী, নিয়োগকারী ও আত্মনিয়োজিত ব্যক্তি, গৃহিণী, বৃদ্ধ, অবসরপ্রাপ্ত কর্মজীবী এবং কর্মজীবী নয় এমন ছেলেমেয়ে ।

উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বিভারিজ রিপোর্টের সুপারিশমালার এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হচ্ছে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির প্রবর্তন। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিই বর্তমানে ইংল্যান্ডসহ সারাবিশ্বের জন্য এক অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় মডেল। 

বিভারিজ রিপোর্টের সুপারিশ সমাজের সব জনগণের ভরণপোষণের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করে । বিভারিজ রিপোর্টের সুপারিশের ভিত্তিতে প্রদত্ত সেবা ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য কতকগুলো নীতিমালা মেনে চলা হয়। এ নীতিমালাগুলো বিভারিজ রিপোর্টের পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ