আলীগড় আন্দোলনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য গুলো কি ছিল
আলীগড় আন্দোলনের উদ্দেশ্যসমূহ লেখ | আলীগড় আন্দোলনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলো কী
প্রশ্ন ৩.১১ | আলীগড় আন্দোলনের উদ্দেশ্যসমূহ লেখ।
অথবা, আলীগড় আন্দোলনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলো কী?
উত্তর ভূমিকা : ভারতীয় উপমহাদেশে সমাজসংস্কারে যেসব গুণী ব্যক্তি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আজও স্মরণীয় হয়ে আছেন তাদের মধ্যে স্যার সৈয়দ আহমদ খান অন্যতম। তার সংস্কারমূলক কাজের মধ্যে আলীগড় আন্দোলন উল্লেখযোগ্য। এ আন্দোলন ছিল মুসলিম জনসমাজকে তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থায় উপযোগী করে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা। মুসলমানদের আধুনিক ও সময় উপযোগী শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে আলীগড় আন্দোলন গড়ে ওঠে ।
আলীগড় আন্দোলনের উদ্দেশ্যসমূহ লেখ | আলীগড় আন্দোলনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলো কী |
● আলীগড় আন্দোলনের উদ্দেশ্যসমূহ : স্যার সৈয়দ আহমদ খান ছিলেন আলীগড় আন্দোলনের প্রবক্তা। এ আন্দোলনের জন্য তিনি আজও স্মরণীয় হয়ে আছেন। তিনি কতকগুলো লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এ আন্দোলন গড়ে তোলেন। নিম্নে আলীগড় আন্দোলনের উদ্দেশ্যসমূহ উল্লেখ করা হলো—
আলীগড় আন্দোলনের অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল মুসলমানদের মধ্য থেকে বিভিন্ন অজ্ঞতা ও কুসংস্কার দূর করা। কেননা তৎকালীন মুসলমানরা ইংরেজ বিদ্বেষী হয়ে আধুনিক সংস্কৃতিকে মেনে নেয়নি। যার কারণে মুসলিম সমাজ পিছিয়ে পরে। আলীগড় আন্দোলনের আরও একটি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল মুসলমানদেরকে সমকালীন শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলা । আর এজন্য তিনি ১৮৬৩ সালে সাহিত্য ও বিজ্ঞান সমিতি নামে একটি সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন এবং মুসলমানদের ইংরেজি শিক্ষা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করেন । তৎকালীন মুসলমানগণ পির পূজার প্রচলন করেছিল । স্যার সৈয়দ আহমদ খান আলীগড় আন্দোলনের মাধ্যমে পির মুরিদ ও দাস প্রথার উচ্ছেদের মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া মুসলিম সমাজকে আধুনিক ধ্যান ধারণায় উদ্বুদ্ধ করনের প্রচেষ্টা চালান ।
● ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের পরিচয় : ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ১৮২০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তিনি একজন নিম্নশ্রেণির বেতনধারী কর্মচারী ছিলেন। বাংলায় এক ক্রান্তিলগ্নে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর জন্মগ্রহণ করলেও মেধা ও অধ্যবসায়ের বলে তিনি কলকাতার সংস্কৃতি কলেজ থেকে উচ্চশিক্ষা লাভে সমর্থ হন। তাঁর অসাধারণ মেধায় মুগ্ধ হয়ে কলেজের শিক্ষকরা তাকে বিদ্যাসাগর উপাধিতে ভূষিত করেন । অসাধারণ মেধার অধিকারী বিদ্যাসাগর ব্যাকরণ, জ্যোতিষ, ন্যায়শাস্ত্র, বেদান্ত, কাব্য প্রভৃতিতে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। ১৮৪১ সালে কলেজের লেখাপড়া শেষ করে তিনি ফোর্ট উইলিয়াম তৎকালীন কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে স্থায়ীভাবে কর্মজীবন শুরু করেন।
হিন্দুসমাজ ছিল কুসংস্কারাচ্ছন্ন ও ধর্মীয় গোঁড়ামিতে ভরপুর। রাজা রামমোহন রায়ের যুগান্তকারী পদক্ষেপে সতীদাহ প্রথা হিন্দুসমাজ থেকে উচ্ছেদ হলেও হিন্দু বিধবা নারীরা অত্যন্ত অসহায়ভাবে দিনাতিপাত করতো। মানুষ বিধবা হিন্দু নারীদের ঘৃণার চোখে দেখত। তখনকার উচ্চশ্রেণির ব্রাহ্মণসহ পুরুষরা বহুবিবাহে অভ্যস্ত ছিল এবং কন্যাদায়গ্রস্ত পিতারা কুলীন ব্রাহ্মণদের হাতে কন্যা সম্পাদন করে ধন্য হতো। অনেক হিন্দুসমাজে কুল বা বংশরক্ষা করার জন্য ব্রাহ্মণদের সাথে অল্পবয়সি মেয়েদের বিবাহ দিত। এসমস্ত সমস্যা মোকাবিলার জন্য ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এছাড়া তিনি শুধু একজন সমাজসংস্কারকই ছিলেন না বরং তিনি ছিলেন একজন জনদরদি ব্যক্তিত্ব।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন বাংলার নবজাগরণের অন্যতম অগ্রদূত। তিনি ভারতীয় আদর্শের সাথে ইউরোপীয় যুক্তিবাদী মানসিকতার এক অসাধারণ সমন্বয় ঘটান। তাঁর ন্যায়নিষ্ঠা, সততা, আদর্শ ও আত্মমর্যাদাবোধ বাঙালি জাতিকে নতুন মূল্যবোধে উৎসাহিত করে। স্বীয় মেধা ও অধ্যবসায়ের জোরে তিনি যে মর্যাদায় আসীন হয়েছেন তা বাঙালি জাতির জন্য অনুকরণীয়।