একজন সমাজসংস্কারক হিসেবে রাজা রামমোহন রায়ের পরিচয় দাও
একজন সমাজসংস্কারক হিসেবে রাজা রামমোহন রায়ের পরিচয় দাও
প্রশ্ন 3.08 | রাজা রামমোহন রায় সম্বন্ধে যা জান লেখ।
অথবা, একজন সমাজসংস্কারক হিসেবে রাজা রামমোহন রায়ের পরিচয় দাও ।
উত্তর ভূমিকা : উনিশ শতকে শিল্প, সাহিত্য, ধর্ম ও সমাজসংস্কারের ক্ষেত্রে বাংলায় যে নবজাগরণ ঘটে, তার অগ্রদূত ছিলেন রাজা রামমোহন রায়। কুসংস্কারাচ্ছন্ন হিন্দুসমাজে ধর্মের নামে যে কুপ্রথা প্রচলিত ছিল, তার মূলোৎপাটন করার ব্যাপারে রাজা রামমোহন রায়ের অবদান অতুলনীয়। সতীদাহ প্রথা উচ্ছেদ আইনকরণের মাধ্যমে তিনি ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছেন।
একজন সমাজসংস্কারক হিসেবে রাজা রামমোহন রায়ের পরিচয় দাও |
রাজা রামমোহন রায়ের পরিচয় : নিম্নে রাজা রামমোহন রায়ের পরিচয় সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলো-
জন্ম ও ব্যক্তিগত জীবন : রাজা রামমোহন রায় ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দের ২ নভেম্বর ভারতের হুগলি জেলার রাধানগর গ্রামে এক রক্ষণশীল হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই রাজা রামমোহন রায় অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। ছোটকাল থেকেই তিনি বিভিন্ন ধর্মের বই পড়াশোনা করতেন। আরবি, ফারসি ও ইংরেজি ভাষায় পড়াশোনা করে তিনি প্রগতিশীল চিন্তার অধিকারী হন। রাজা রামমোহন রায় তাঁর নিজ গ্রামেই প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি পাটনায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য গমন করেন। শিক্ষাজীবন শেষে তিনি ব্রিটিশ সরকারের সেরেস্তাদারের চাকরি নেন ।
১৮১৫ সাল থেকে তিনি স্থায়ীভাবে কলকাতায় বসবাস করা শুরু করেন। ব্যক্তিগত জীবনে রাজা রামমোহন রায় একজন উদারমনা ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি ধর্মীয় গোঁড়ামির প্রতিবাদে ১৮০৩-০৪ সালে 'তুহফাত উল মুয়াহিদ্দীন' (একেশ্বরবাদীদের উপহার) নামে বই প্রকাশ করেন। ১৮২১ সালে রাজা রামমোহন রায় তাঁর মতবাদ প্রচারের জন্য “সংবাদ কৌমুদী” নামক পত্রিকা প্রকাশ করেন। ১৮২২ সালে রাজা রামমোহন রায় ‘মীরাত উল আখবার' (খবরের আয়না) নামক আরেকটি পত্রিকা প্রকাশ করেন । ১৮৩৩ সালে রাজা রামমোহন রায় মৃত্যুবরণ করেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, রাজা রামমোহন রায় উপমহাদেশের সমাজসংস্কার আন্দোলন আকাশের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র। তিনি গোঁড়া হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করার পরেও হিন্দুসমাজের কুপ্রথা মেনে নিতে পারেননি। রাজা রামমোহন রায় তাঁর মেধা, দক্ষতা ও বিচক্ষণতার মাধ্যমে সমাজসংস্কারে যে অশেষ অবদান রেখেছেন যুগের পর যুগ তার জন্য তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন ।