একজন সমাজসংস্কারক হিসেবে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের পরিচয় দাও
একজন সমাজসংস্কারক হিসেবে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের পরিচয় দাও
প্রশ্ন ৩.০৭ | ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের পরিচয় দাও।
অথবা, একজন সমাজসংস্কারক হিসেবে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের পরিচয় দাও ।
উত্তর ভূমিকা : রাজা রামমোহন রায়ের মৃত্যুর পর সমাজসংস্কার আন্দোলনে ভাটা পড়ে এবং উপমহাদেশের জনগোষ্ঠী আবার . শিক্ষাদীক্ষায়, অজ্ঞতায়, ধর্মীয় গোঁড়ামির বেড়াজালে এক অমানবিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। এ পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর সার্বিক উন্নয়ন সাধনের জন্য ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন । তিনি হিন্দু বিধবাবিবাহের প্রচলন, বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ রোধ, শিক্ষাবিস্তার ইত্যাদির মাধ্যমে সমাজসংস্কারে অশেষ অবদান রেখেছেন।
একজন সমাজসংস্কারক হিসেবে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের পরিচয় দাও |
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের পরিচয় : ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ১৮২০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তিনি একজন নিম্নশ্রেণির বেতনধারী কর্মচারী ছিলেন। বাংলায় এক ক্রান্তিলগ্নে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর জন্মগ্রহণ করলেও মেধা ও অধ্যবসায়ের বলে তিনি কলকাতার সংস্কৃতি কলেজ থেকে উচ্চশিক্ষা লাভে সমর্থ হন। তাঁর অসাধারণ মেধায় মুগ্ধ হয়ে কলেজের শিক্ষকরা তাকে বিদ্যাসাগর উপাধিতে ভূষিত করেন । অসাধারণ মেধার অধিকারী বিদ্যাসাগর ব্যাকরণ, জ্যোতিষ, ন্যায়শাস্ত্র, বেদান্ত, কাব্য প্রভৃতিতে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। ১৮৪১ সালে কলেজের লেখাপড়া শেষ করে তিনি ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে স্থায়ীভাবে কর্মজীবন শুরু করেন। তৎকালীন হিন্দুসমাজ ছিল কুসংস্কারাচ্ছন্ন ও ধর্মীয় গোঁড়ামিতে ভরপুর।
রাজা রামমোহন রায়ের যুগান্তকারী পদক্ষেপে সতীদাহ প্রথা হিন্দুসমাজ থেকে উচ্ছেদ হলেও হিন্দু বিধবা নারীরা অত্যন্ত অসহায়ভাবে দিনাতিপাত করতো। মানুষ বিধবা হিন্দু নারীদের ঘৃণার চোখে দেখত। তখনকার উচ্চশ্রেণির ব্রাহ্মণসহ পুরুষরা বহুবিবাহে অভ্যস্ত ছিল এবং কন্যাদায়গ্রস্ত পিতারা কুলীন ব্রাহ্মণদের হাতে কন্যা সম্পাদন করে ধন্য হতো। অনেক হিন্দুসমাজে কুল বা বংশরক্ষা করার জন্য ব্রাহ্মণদের সাথে অল্পবয়সি মেয়েদের বিবাহ দিত। এসমস্ত সমস্যা মোকাবিলার জন্য ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এছাড়া তিনি শুধু একজন সমাজসংস্কারকই ছিলেন না বরং তিনি ছিলেন একজন জনদরদি ব্যক্তিত্ব।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন বাংলার নবজাগরণের অন্যতম অগ্রদূত। তিনি ভারতীয় আদর্শের সাথে ইউরোপীয় যুক্তিবাদী মানসিকতার এক অসাধারণ সমন্বয় ঘটান। তাঁর ন্যায়নিষ্ঠা, সততা, আদর্শ ও আত্মমর্যাদাবোধ বাঙালি জাতিকে নতুন মূল্যবোধে উৎসাহিত করে। স্বীয় মেধা ও অধ্যবসায়ের জোরে তিনি যে মর্যাদায় আসীন হয়েছেন তা বাঙালি জাতির জন্য অনুকরণীয়।