১৮৩৪ সালের দরিদ্র সংস্কার আইনের বৈশিষ্ট্য লেখ এবং আইনের ভূমিকা আলোচনা কর

১৮৩৪ সালের দরিদ্র সংস্কার আইনের বৈশিষ্ট্য লেখ। এ আইনের ভূমিকা আলোচনা কর

প্রশ্ন ২.০৯/ ১৮৩৪ সালের দরিদ্র সংস্কার আইনের বৈশিষ্ট্য লেখ। এ আইনের ভূমিকা আলোচনা কর ।

অথবা, ১৮৩৪ সালের দরিদ্র সংস্কার আইনের বৈশিষ্ট্য উল্লেখপূর্বক এ আইনের ভূমিকা বর্ণনা কর ।

উত্তর ভূমিকা : ইংল্যান্ডের দারিদ্র্য সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য যে কয়টি আইন প্রণয়ন করা হয় তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ১৮৩৪ সালের দরিদ্র সংস্কার আইন। পরিবর্তিত সময়ের প্রেক্ষাপটে ১৬০১ সালের এলিজাবেথীয় দরিদ্র আইনের ব্যর্থতার প্রেক্ষাপটে প্রণয়ন করা হয় ১৮৩৪ সালের দরিদ্র সংস্কার আইন । ১৮৩৪ সালের দরিদ্র সংস্কার আইন মূলত ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনের সংস্কারিক রূপ। এ আইন তৎকালীন উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

     

১৮৩৪ সালের দরিদ্র সংস্কার আইনের বৈশিষ্ট্য লেখ। এ আইনের ভূমিকা আলোচনা কর
১৮৩৪ সালের দরিদ্র সংস্কার আইনের বৈশিষ্ট্য লেখ। এ আইনের ভূমিকা আলোচনা কর

১৮৩৪ সালের দরিদ্র সংস্কার আইনের বৈশিষ্ট্য : ১৮৩৪- সালের দরিদ্র সংস্কার আইনের বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো-

১. পূর্ববর্তী বিধানের পুনঃপ্রয়োগ : ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনের সংবিধিবদ্ধ আধুনিক রূপ হচ্ছে ১৮৩৪ সালের দরিদ্র সংস্কার আইন। এ আইনে ক্ষেত্র বিশেষ ১৬০১ সালের আইনের কতিপয় বিধানের কড়াকড়ি আরোপ করা হয়।

২. রাজকীয় কমিশন গঠন : ১৮৩৪ সালের দরিদ্র সংস্কার আইনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে দরিদ্র সাহায্য কার্যক্রম পরিচালনা, তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণের জন্য রাজকীয় কমিশন গঠন করা।

৩. আংশিক সাহায্য ব্যবস্থা বাতিল : ১৮৩৪ সালের দরিদ্র সংস্কার আইনের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে রাজকীয় কমিশনের সুপারিশক্রমে স্পিন হ্যামল্যান্ড অ্যাক্ট কর্তৃক প্রবর্তিত ১৭৯৫ সালের আংশিক সাহায্য ব্যবস্থা বাতিল করা হয়।

৪. নতুন প্রশাসনিক কাঠামো : ১৮৩৪ সালের সংস্কার আইনের বিধান বাস্তবায়ন করার জন্য প্রতিবেশী প্যারিশের সমন্বয়ে দরিদ্র আইন ইউনিয়ন গঠন করা হয়। এটি প্যারিশের পরিবর্তে একটি প্রশাসনিক ইউনিট হিসেবে কাজ করবে।

৫. দমন, নির্যাতন ও কঠোর নীতির পুনঃপ্রবর্তন : ১৮৩৪ সালের সংস্কার আইনে ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনের দমন ও নির্যাতনমূলক নীতির পুনঃপ্রবর্তন করা হয়।

৬. সরকারি ব্যয় হ্রাস করার বিধান : ১৮৩৪ সালের দরিদ্র সংস্কার আইনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল দরিদ্রদের জীবনমান উন্নয়নের চেয়ে দরিদ্র সাহায্য কার্যক্রমে সরকারের ব্যয় হ্রাস করাকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া। যার প্রতিফলন দেখা যায় এ আইনের বাস্তবায়নের পরে। এ আইন বাস্তবায়নে দরিদ্র সাহায্য ব্যয় এক-তৃতীয়াংশ কমানো হয় । সাহায্য ব্যবস্থার মান এতটা নিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে যে একান্ত নিরুপায় না হয়ে কেউ সাহায্যের জন্য আবেদন করতো না। 

৭. বহিঃসাহায্যের ব্যবস্থা করা : ১৮৩৪ সালের দরিদ্র সংস্কার আইন অনুযায়ী অসুস্থ, অক্ষম, নির্ভরশীল, বৃদ্ধ, শিশু, প্রতিবন্ধী প্রভৃতি শ্রেণির জন্য বহিঃসাহায্যের ব্যবস্থা করা হয় ।

৮. নিম্ন জীবনমান : ১৮৩৪ সালের সংস্কার আইনের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো এ আইনে সাহায্যপ্রার্থীদের জীবনমান ও সামাজিক মর্যাদা নিম্ন বেতনভুক্ত কর্মচারীদের তুলনায় নিম্ন পর্যায়ে রাখা হয় ।

৯. শ্রমাগারে প্রেরণ : ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনের মতো ১৮৩৪ সালের দরিদ্র সংস্কার আইনেও সক্ষম দরিদ্রদের শ্রমাগারে প্রেরণের ব্যবস্থা করা হয়।

১০. ভিক্ষাবৃত্তিকে নিরুৎসাহী করা : ১৮৩৪ সালের দরিদ্র সংস্কার আইন অনুযায়ী সাহায্য প্রার্থনা ভিক্ষাবৃত্তিকে নিরুৎসাহী করা হয়। কেউ সাহায্য প্রার্থনা করলে তার সামাজিক মর্যাদাহানি করার ব্যবস্থা ছিল। সাহায্যপ্রার্থীদের প্রতি কঠোর ও নির্যাতনমূলক ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়।

১১. পরনির্ভরশীলতা তৈরি : ১৮৩৪ সালের দরিদ্র সংস্কার আইনের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এ আইনে দারিদ্র্য সমস্যার স্থায়ী সমাধানের কম গুরুত্ব দেওয়ার নীতি অনুসরণ করে দরিদ্রকে আরও দরিদ করে তোলা হয়েছে। ১৮৩৪ সালের দরিদ্র সংস্কার আইনের ভূমিকা : ৯৩ পৃষ্ঠার ২.১২ নং প্রশ্নোত্তর দ্রষ্টব্য।

উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ১৮৩৪ সালের দরিদ্র সংস্কার আইন স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল একটি আইন। এ আইনে প্রবর্তন করা নতুন সাহায্য ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া কতকগুলো নতুন বৈশিষ্ট্য যোগ করে। তৎকালীন দারিদ্র্য সমস্যা মোকাবিলায় ও দরিদ্র সাহায্য কার্যক্রমে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে ১৮৩৪ সালের দরিদ্র সংস্কার আইন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সাহায্য কার্যক্রমে সমন্বয় ও যোগাযোগ রক্ষা করার জন্য এ আইনের সুপারিশের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত দরিদ্র আইন ইউনিয়ন প্রশাসনিক ব্যবস্থায় সম্পূর্ণ এক নতুন ধারার সূচনা করে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ