১৬০১ সালের এলিজাবেথীয় দরিদ্র আইনের গুরুত্ব ও সীমাবদ্ধতা আলোচনা কর

১৬০১ সালের এলিজাবেথীয় দরিদ্র আইনের গুরুত্ব ও সীমাবদ্ধতা আলোচনা কর

প্রশ্ন ২.০৫ | ১৬০১ সালের এলিজাবেথীয় দরিদ্র আইনের সবল ও দুর্বল দিকগুলো আলোচনা কর ।

অথবা, ১৬০১ সালের এলিজাবেথীয় দরিদ্র আইনের গুরুত্ব ও সীমাবদ্ধতা আলোচনা কর ।

উত্তর ভূমিকা : ইংল্যান্ডে ১৬০১ সালের এলিজাবেথীয় দরিদ্র আইন কতকগুলো সুচিন্তিত ও পরিকল্পিত পদক্ষেপের সমষ্টি । এটি পূর্ববর্তী ৪২টি দরিদ্র আইনের দুর্বল দিকগুলো বাদ দিয়ে একগুচ্ছ ইতিবাচক দিক বা কল্যাণমূলক পদক্ষেপের প্রস্তাবনা । তবে একগুচ্ছ ইতিবাচক প্রস্তাবনা থাকার পরও দমন, নিপীড়ন ও নির্যাতনমূলক ব্যবস্থার কারণে ১৬০১ সালের এলিজাবেথীয় দরিদ্র আইনের সমালোচনা হয়েছে বেশ। শ্রমাগার ও দরিদ্রাগারগুলোতে সাহায্যপ্রার্থীর সাথে কয়েদিদের মতো অমানবিক ব্যবহার করা হতো ।

১৬০১ সালের এলিজাবেথীয় দরিদ্র আইনের গুরুত্ব ও সীমাবদ্ধতা আলোচনা কর
১৬০১ সালের এলিজাবেথীয় দরিদ্র আইনের গুরুত্ব ও সীমাবদ্ধতা আলোচনা কর

১৬০১ সালের দরিদ্র আইনের সবল বা ইতিবাচক দিক : নিম্নে ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনের সবল বা ইতিবাচক দিকসমূহ আলোচনা করা হলো-

১. সরকারি দায়িত্বের স্বীকৃতি : ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনে সর্বপ্রথম দরিদ্রদের কল্যাণের জন্য সরকারি দায়িত্বকে স্বীকার করে নেওয়া হয়। যার ফলশ্রুতিতে পরিকল্পিত উপায়ে দরিদ্রতা মোকাবিলা করার জন্য স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও জবাবদিহিতা এবং সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা হয় ।

২. দরিদ্রদের শ্রেণিবিন্যাস করা : ১৬০১ সালের দরিদ্র আইন সাহায্য ব্যবস্থার কার্যকারিতা বৃদ্ধি, অপচয় রোধ ও সাহায্যের পুনরাবৃত্তি রোধ করার জন্য সক্ষমতার ভিত্তিতে দরিদ্রদের শ্রেণিবিন্যাস করা হয়। এর ফলে যার জন্য যে সাহায্য প্রয়োজন তাকে সেই সাহায্য প্রদান করা হয় । ফলে স৩. কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা ১৬০১ সালের দরিদ্র আইন সক্ষম ভিক্ষুক ও ভবঘুরেদের জোরপূর্বক কাজে নিয়োগের বিধান করা হয়। অন্যথায় কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হয়। এ আইনের মাধ্যমে সক্ষম ভিক্ষুক ও ভবঘুরেদের কাজের ব্যবস্থা করে আয়ের সাথে জড়িত করা হয়।

৪. অক্ষম ও নির্ভরশীলদের ভরণপোষণ : ১৬০১ সালের দরিদ্র আইন অসুস্থ, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী, অন্ধ, বধির, শিশুদের ভরণপোষণের জন্য বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল।

৫. দারিদ্র্য মোকাবিলায় সচ্ছল অভিভাবকদের দায়িত্বের স্বীকৃতি ১৬০১ সালের দরিদ্র আইন দরিদ্রদের ভরণপোষণের জন্য সরকারি দায়িত্বের আগে সচ্ছল অভিভাবক ও আত্মীয়স্বজনের দায়িত্বকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

৬. ভিক্ষাবৃত্তি নিষিদ্ধ করা : ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনে সক্ষম ভিক্ষুকদের ভিক্ষা দিতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অনুরূপ আদেশ ভঙ্গ করলে শাস্তির বিধান করা হয়।

৭. ভিক্ষুকদের নিবন্ধন : ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনের একটি কল্যাণকর দিক হচ্ছে নির্দিষ্ট প্যারিশে ভিক্ষা করার জন্য ভিক্ষুকদের লাইসেন্স গ্রহণ বাধ্যতামূলক

৮. পারিবারিক দায়িত্ব : ১৬০১ সালের দরিদ্র আইন অনুযায়ী পরিবারের অক্ষম পিতামাতার ভরণপোষণের দায়িত্ব সচ্ছল সন্তানের। আবার অক্ষম, নির্ভরশীল ও প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়েদের ভরণপোষণের দায়িত্ব সচ্ছল পিতামাতার। এ আইনের মাধ্যমে, দারিদ্র্য মোকাবিলায় পারিবারিক দায়িত্বকে স্বীকৃতি দেওয়া হয় ।ম্পদের অপচয় হয় না ।

৯. জরিমানার ব্যবস্থা করা : ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনের কোনো বিধান ভঙ্গ করা হলে জরিমানাসহ শাস্তির বিধান করা হয় । ফলে এ আইন মানতে সবাই বাধ্য থাকে ।

১০. সাহায্যের প্রকৃতি নির্ধারণ : ১৬০১ সালের আইন অনুসারে ওভারসিয়ার সাহায্যপ্রার্থীর শারীরিক সক্ষমতা ও আর্থসামাজিক অবস্থা যাচাই করে সাহায্যের প্রকৃতি নির্ধারণ করেন ।

• ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনের দুর্বল দিক বা সীমাবদ্ধতা : নিম্নে ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনের সীমাবদ্ধতা বা দুর্বল দিকসমূহ আলোচনা করা হলো-

১. সমস্যার সাময়িক সমাধান : ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনের সাহায্য ব্যবস্থাগুলো সাহায্যপ্রার্থীর সাময়িক অনুভূত প্রয়োজন পূরণকেন্দ্রিক ফলে দরিদ্র সমস্যার কার্যকর ও স্থায়ী সমাধান লক্ষ্য করা যায়নি । 

২. অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ : ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনের বিধান অনুযায়ী প্যারিশের পুরাতন অব্যবহৃত ও পরিত্যক্ত বাড়িগুলো দরিদ্রাগার ও শ্রমাগার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পরিত্যক্ত হওয়ায় বাড়ির অস্বাস্থ্যকর স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ ও আলো বাতাসের ঘাটতি থাকে যা নানা ধরনের রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটায় 

৩. পারিবারিক ভাঙন : ১৬০১ সালের দরিদ্র আইন পরিবার ব্যবস্থায় ভাঙন ধরিয়ে দেয়। কেননা এ আইনের বিধান অনুযায়ী একই পরিবারের সক্ষম, অক্ষম ও নির্ভরশীলদের জন্য আলাদা আলাদা ব্যবস্থা বিদ্যমান ছিল ।

৪. বালক-বালিকাদের ভরণপোষণে ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থা : ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনের বিধান অনুযায়ী ৮ বছর বা তার বেশি বয়সের বালক-বালিকাদের গৃহস্থালী কাজ করার জন্য চুক্তিভিত্তিক দত্তক দেওয়া হয়। শিক্ষানবিশ হিসেবে এদের দত্তক দেওয়া হলে এরা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে বিরত থাকে ফলে এরা স্থায়ীভাবে দরিদ্র থেকে যায়।

৫. নতুন করারোপ : ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনের ব্যয় নির্বাহের জন্য দরিদ্রকর নামক নতুন কর আরোপ করা হয় । ফলে জনজীবনে করের নতুন বোঝা চাপে ।

৬. কয়েদিদের মতো আচরণ : ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনের বিধান অনুযায়ী সক্ষম ভিক্ষুক ও ভবঘুরেদের জোরপূর্বক কাজ করতে বাধ্য করা হতো। শ্রমাগার ও সংশোধনাগারগুলোতে তত্ত্বাবধায়কগণ কয়েদির মতো আচরণ করতো।

৭. প্রশাসনিক দুর্বলতা : দরিদ্রদের সাহায্যের জন্য গৃহীত বিভিন্ন ব্যবস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতা এ আইনের প্রশাসনিক দুর্বলতাকে ইঙ্গিত করে ।

৮. শাস্তি ও জরিমানা : ১৬০১ সালের বিধানে অনেকটা অমূলকভাবেই জরিমানা ধার্য করা হয়। দরিদ্রদের পক্ষে জরিমানার অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হলে শাস্তির সম্মুখীন হতে হতো।

৯. মৌল মানবিক চাহিদার অপূরণ : ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনে দরিদ্র জনগণের মৌল মানবিক চাহিদা পূরণের কোনো নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়নি।

> ১৬০১ সালের এলিজাবেথীয় আইনের গুরুত্ব : ১১৩ পৃষ্ঠার ২.০৫ নং প্রশ্নোত্তর দ্রষ্টব্য।

উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ১৬০১ সালের এলিজাবেথীয় দরিদ্র আইন তৎকালীন সামগ্রিক সমস্যা মোকাবিলায় কার্যকর ভূমিকা পালন করেছে। দরিদ্র আইনের কল্যাণকর বা ইতিবাচক দিকগুলো দরিদ্রদের আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলে দারিদ্র্য সমস্যার স্থায়ী সমাধান দিয়ে থাকে। ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনের ইতিবাচক দিকগুলো আধুনিক সমাজকল্যাণমূলক ব্যবস্থার পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করে। তবে পরবর্তীতে পরিবর্তিত সময়ের চাহিদা পূরণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় এ আইন ব্যাপক সমালোচনার মুখোমুখি হয় ।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ