সমাজকর্মীর জন্য মনোবিজ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা কর

 সমাজকর্মীর জন্য মনোবিজ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা কর

 ১.১৪ | মনোবিজ্ঞান কী? সমাজকর্মীদের জন্য মনোবিজ্ঞানের জ্ঞান আবশ্যক কেন? ব্যাখ্যা কর।

অথবা, মনোবিজ্ঞান বলতে কী বুঝ? সমাজকর্মীর জন্য মনোবিজ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা কর।

উত্তর ভূমিকা : মানুষের কৌতূহলকে কেন্দ্র করেই অন্যান্য বিজ্ঞানের মতো মনোবিজ্ঞানের উৎপত্তি। মনোবিজ্ঞান ব্যক্তির মানসিক প্রক্রিয়াসমূহের ব্যাখ্যা করে। বিশেষত ব্যক্তির আবেগ, অনুভূতি, জ্ঞান, হতাশা, একাকিত্ব প্রভৃতির ওপর আধুনিক মনোবিজ্ঞান বিশেষ চর্চা করে। তাই প্রায়োগিক দিক থেকে জ্ঞানের বিভিন্ন শাখার মধ্যে মনোবিজ্ঞানের সাথে সমাজকর্মের সম্পর্ক তুলনামূলকভাবে বেশি । 

সমাজকর্মীর জন্য মনোবিজ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা কর
সমাজকর্মীর জন্য মনোবিজ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা কর

● সমাজকর্মীর জন্য মনোবিজ্ঞানের জ্ঞানের আবশ্যকতা : সমাজের সব দিক ও সমাজের মানুষের প্রয়োজনেই সৃষ্টি মনোবিজ্ঞানের । মনোবিজ্ঞানের এ জ্ঞান ও সেবা সমাজে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে ছড়িয়ে দেওয়া সমাজকর্মের মাধ্যমেই সম্ভব। তাই সমাজকর্মীদের জন্য মনোবিজ্ঞানের এ জ্ঞান সমাজকর্ম চর্চায় একান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচিত। নিম্নে সমাজকর্মীর জন্য মনোবিজ্ঞানের জ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হলো-

১. বিজ্ঞানভিত্তিক জ্ঞানলাভে : সমাজকর্ম একটি ব্যবহারিক সামাজিক বিজ্ঞান ও সাহায্যকারী পেশা। সমাজকর্মের কাজ হলো সমস্যাগ্রস্ত মানুষকে এমনভাবে সাহায্য সহযোগিতা করা যাতে করে ব্যক্তি নিজেই নিজের সমস্যা মোকাবিলা করতে পারে। এ প্রেক্ষাপটে সমাজকর্মীকে মানুষের আচরণ সম্পর্কিত বিজ্ঞানভিত্তিক জ্ঞান দরকার । মনোবিজ্ঞানের জ্ঞান সমাজকর্মের তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক শিক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এ জ্ঞানের পূর্ণতা ছাড়া সমাজকর্মের শিক্ষা অসম্পূর্ণ ।

২. পরিবর্তিত অবস্থার সঙ্গে খাপখাওয়াতে : সমাজকর্মের লক্ষ্য মানুষকে পরিবর্তিত অবস্থার সাথে খাপখাইয়ে চলতে সহায়তা করা। যাতে তারা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। মনোবিজ্ঞানীদের মতে দৈহিক, মানসিক, আর্থসামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইত্যাদি বিভিন্ন উপাদান মানুষের আচতাই মানুষকে পরিবর্তিত অবস্থার সঙ্গে খাপখাওয়াতে হলে সমাজকর্মীকে অবশ্যই মানব আচরণের কারণ ও মানুষের আচরণকে বাঞ্ছিত লক্ষ্যে পরিকল্পনা করার কৌশল জানতে হবে। সমাজকর্মীকে এক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞানের জ্ঞান ব্যাপক হারে অর্জন করতে হয়।

৩. জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে : সমাজকর্মে ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমস্যার প্রতিকার, প্রতিরোধ ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের দরকার জনগণের অংশগ্রহণ। অংশগ্রহণ যেহেতু একটি মানসিক বিষয় সেহেতু কার্যকর সমস্যা সমাধানের জন্য জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য সমাজকর্মীকে মনোবিজ্ঞানের জ্ঞান অর্জন করতে হয় ।

৪. সুপ্ত ক্ষমতার বিকাশে : সমাজকর্মে ব্যক্তি মানুষকে তার নিজস্ব ক্ষমতার ব্যবহারের মাধ্যমে তাকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলা হয় । এ ব্যাপারে ব্যক্তির সুপ্ত ক্ষমতা নিরীক্ষণ করার জন্য সমাজকর্মীর মনোবিজ্ঞানের অভীক্ষার ওপর নির্ভর করতে হয় । 

৫. সামাজিক মনোবিজ্ঞানের জ্ঞান জানতে : মনোবিজ্ঞান পুরোটাই আচরণ কেন্দ্রিক । সমাজকর্মেরও অন্যতম উদ্দেশ্য হলো সামাজিক সমস্যার সমাধান, সমাজসংস্কার ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য জনমত গঠন, দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন, সামাজিক আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গির নিয়ন্ত্রণ করা । এসব বিষয় নিয়ে মনোবিজ্ঞানের বিশেষ শাখা সামাজিক মনোবিজ্ঞান আলোচনা করে থাকে । তাই সমাজে গঠনমূলক পরিবর্তন আনয়নের জন্য সমাজকর্মীকে সামাজিক মনোবিজ্ঞানও অধ্যয়ন করতে হয় ।রণের ওপর প্রভাব বিস্তার করে থাকে।

৬. সমস্যা বিশ্লেষণে : অধিকাংশ সমস্যার মূলে রয়েছে মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব। এক্ষেত্রে সমাজকর্মীরা মনোবিজ্ঞানের জ্ঞানের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।

৭. সমস্যা সমাধানে : সমাজকর্মী যখন কোনো সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তির সাথে কাজ করেন তখন ঐ ব্যক্তির সুপ্ত ক্ষমতা ও মানসিক ক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা লাভ করার দরকার হয়। আর ব্যক্তির মানসিক ক্ষমতা বা সুপ্ত ক্ষমতা নির্ধারণের জন্য মনোবিজ্ঞানের আছে নিজস্ব প্রক্রিয়া কৌশল। সমাজকর্মীরা মনোবিজ্ঞানের এ কৌশল ও প্রক্রিয়া অবলম্বন করে সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তির মানসিক ক্ষমতা নির্ণয় সাপেক্ষে সে অনুযায়ী সমাধান ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন যাতে করে সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তির নিজস্ব সামর্থ্যের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত হয় ।

৮. মনোচিকিৎসার ক্ষেত্রে : সমাজকর্ম অস্বাভাবিক ও বেকারগ্রস্তদের চিকিৎসা ও উন্নয়নের জন্য কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকে। এক্ষেত্রে সমাজকর্মীরা অস্বাভাবিক আচরণ বিশ্লেষণে প্রয়াসী হয়। আর এক্ষেত্রে সমাজকর্মীগণ মনোবিজ্ঞানের বিশেষ শাখা অস্বাভাবিক মনোবিজ্ঞান এর জ্ঞান অর্জন করতে হয়।

৯. সামঞ্জস্যবিধানে : সমাজকর্মীগণ মানুষকে পরিবর্তিত আর্থসামাজিক পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে সামাজিক ভূমিকা পালনে সহায়তা করার জন্য মানুষের প্রেষণা, বুদ্ধি, আবেগ, ব্যক্তিত্বের কাঠামো ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হয়। আর এ সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জন মনোবিজ্ঞানের সাহায্যেই সম্ভব।

১০. ক্ষেত্রগত সম্পর্ক লাভে : সমাজকর্মীগণ নারী কল্যাণ, শিশু কল্যাণ, শ্রমকল্যাণ, স্কুল সমাজকর্ম, চিকিৎসা সমাজকর্ম ইত্যাদি ক্ষেত্র নিয়ে কাজ করে। এসব ক্ষেত্রে কাজ করতে গিয়ে সমাজকর্মীকে সামাজিক মনোবিজ্ঞান, শিশু মনোবিজ্ঞান, শিল্প মনোবিজ্ঞান, শিক্ষা মনোবিজ্ঞান ইত্যাদির সাহায্য নিতে হয়। এ ক্ষেত্রগত সম্পর্ক অর্জনে মনোবিজ্ঞানের জ্ঞান ব্যাপক প্রয়োজনীয়।

উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ব্যক্তির বিভিন্ন মনোসামাজিক সমস্যার সমাধান করে তাকে সমাজ পরিবেশে উপযোগী আচরণ করতে সাহায্য করাই সমাজকর্মীর উদ্দেশ্য । আর মনোবিজ্ঞান সমাজকর্মীদেরকে এ লক্ষ্যে পৌঁছাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই সমাজকর্মীদের জন্য মনোবিজ্ঞানের • জ্ঞান অর্জন করা আবশ্যক। তবেই সমাজকর্মীগণ সমাজের সার্বিক কল্যাণ আনয়নে সচেষ্ট হয়।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ