সমাজকর্মের সাথে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সম্পর্ক আলোচনা কর
সমাজকর্মের সাথে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সম্পর্ক আলোচনা কর
১.১৫ | সমাজকর্মের সাথে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সম্পর্ক আলোচনা কর।
অথবা, সমাজকর্ম ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মধ্যকার সাদৃশ্য দেখাও।
উত্তর ভূমিকা : সমাজকর্ম হচ্ছে একটি সমন্বিত সামাজিক বিজ্ঞান । সমাজকর্ম জ্ঞানের উৎস হলো বিভিন্ন সামাজিক বিজ্ঞানের বিষয়বস্তু। অর্থাৎ বিভিন্ন সামাজিক বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা থেকে জ্ঞানাহরণ করে সমাজকর্ম একটি প্রায়োগিক সামাজিক বিজ্ঞানের রূপান্তরিত হয়েছে। সমাজকর্ম জ্ঞানের অন্যতম উৎস হলো রাষ্ট্রবিজ্ঞান। আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমাজে মানুষের ভূমিকা, কার্যাবলি, দায়িত্ব, কর্তব্য প্রভৃতি নিয়ে বিশদ আলোচনা করে। সমাজকর্ম জ্ঞানের একটি বিশাল অংশ রাষ্ট্রবিজ্ঞান সংগৃহীত হয়েছে। আর তাই রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং সমাজকর্মের মধ্যে যথেষ্ট বিদ্যমান।
সমাজকর্মের সাথে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সম্পর্ক আলোচনা কর |
● সমাজকর্মের সাথে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সম্পর্ক : নিম্নে সমাজকর্মের সাথে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সম্পর্ক/সাদৃশ্য আলোচনা করা হলো-
১. উদ্দেশ্য : সমাজকর্মের উদ্দেশ্যের সাথে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের উদ্দেশ্যের বেশ মিল পরিলক্ষিত হয়। কেননা সমাজকর্ম বিভিন্ন কার্যসম্পাদনের মাধ্যমে জাতিধর্মবর্ণ, শ্রেণি নির্বিশেষে সকল মানুষের কল্যাণ করতে চায় । অনুরূপভাবে রাষ্ট্রবিজ্ঞান রাষ্ট্র ও সরকারের মাধ্যমে জনগণের কল্যাণ করতে চায়। সুতরাং উভয়ের উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন
২. উৎসস্থল : সমাজকর্ম ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান উভয়ই সামাজিক বিজ্ঞানের দুটি প্রধান শাখা। প্রকৃতপক্ষে এ দুটি বিজ্ঞানের মূল উৎসস্থল এক ও অভিন্ন । সমাজ ও মানুষের জীবনের সঙ্গে জড়িত কার্যাবলিই তাদের আলোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দু। সুতরাং সমাজকর্ম ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান।
৩. জনকল্যাণ : জনগণের যাবতীয় মৌল প্রয়োজন ও কল্যাণ চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে আধুনিক কল্যাণরাষ্ট্র বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে থাকে। সমাজের সর্বাঙ্গীণ কল্যাণের জন্য রাষ্ট্র সামাজিক নীতি পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে থাকে । কাজেই জনকল্যাণমূলক জ্ঞানের জন্য সমাজকর্মকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের
৪. সমাজসংস্কার : সমাজকর্মের অন্যতম বিষয় সমাজসংস্কার হচ্ছে সমাজে প্রচলিত ক্ষতিকর প্রথা উচ্ছেদ সাধনে সমাজকর্ম সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলে। এ আন্দোলন ফলপ্রসূ করতে রাষ্ট্র আইন প্রণয়ন করে থাকে। এজন্য সমাজসংস্কারের ক্ষেত্রে সমাজকর্ম ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান অত্যন্ত নিবিড় সম্পর্কে আবদ্ধ।
৫. সামাজিক সম্পর্ক : সমাজকর্ম মানুষের অধিকার ভোগ, চিন্তা ও কর্মের স্বাধীনতা নিশ্চয়তা বিধানের মাধ্যমে সবাইকে সামাজিকভাবে সচেতন করে তোলে। অন্যদিকে, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হলো সামাজিকভাবে নাগরিকদের সচেতন করে তোলা। এদিকে দিয়ে উভয়ের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সাদৃশ্য রয়েছে।
৬. অধিকার ও কর্তব্য : সমাজকর্ম যেমন মানুষকে নাগরিক অধিকার ও কর্তব্য সম্বন্ধে সজাগ করে সামাজিক ভূমিকা সুষ্ঠুভাবে পালনে সক্ষম করে তোলে, তেমনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানও মানুষকে নাগরিক অধিকার ও কর্তব্য সম্বন্ধে সচেতন করে। সুতরাং নাগরিক অধিকার ও কর্তব্যের দিক থেকে উভয়ের মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে।
৭. কল্যাণরাষ্ট্র গঠন : সমাজকর্ম ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান উভয়ই তাদের নিজস্ব কর্মপ্রচেষ্টার দ্বারা কল্যাণরাষ্ট্র গঠন প্রয়াসী। সমাজকর্ম সামগ্রিক কল্যাণ সাধনের মাধ্যমে কল্যাণরাষ্ট্র গঠনে নিরলসভাবে কাজ করে থাকে। অপরদিকে, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজকর্মের কাজকে দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করতে প্রচেষ্টা চালায়।
৮. জীবনমান উন্নয়ন : সমাজকর্ম ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের উভয়ই তাদের নিজ নিজ কার্যক্রমের দ্বারা সমাজস্থ সদস্যদের জীবনমান উন্নয়নে নিয়োজিত। সমাজকর্মের ক্ষেত্রে সমাজকর্মীদের সার্বিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানের মধ্য দিয়ে জীবনমান উন্নয়নের প্রচেষ্টা চালানো হয়। অন্যদিকে, রাষ্ট্রবিজ্ঞানে জনপ্রতিনিধি দ্বারা সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানের চেষ্টা করা হয় ।
৯. জনমত গঠন : জনমত গঠনে সমাজকর্ম রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে সহায়তা করে থাকে । বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে সমাজকর্ম বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকে। অন্যদিকে, রাষ্ট্রবিজ্ঞানও জনমত গঠনের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন কল্যাণমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে ।
১০. নির্ভরশীলতা : সমাজকর্ম ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান অভিন্ন সামাজিক কার্যক্রম গ্রহণ করে তাদের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছার চেষ্টা করে। সমাজকর্মের বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রম রাষ্ট্রের মাধ্যমে দ্রুত বাস্তব রূপ লাভ করে।ষ্ট্রবিজ্ঞানের জ্ঞানের ওপর নির্ভর করতে হয়।
১১. সভ্যতার রক্ষাকবচ : রাষ্ট্রবিজ্ঞান মূলত রাষ্ট্রের মানুষের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করে। ভবিষ্যৎ সুখী- সমৃদ্ধিশালী সমাজ গঠনে রাষ্ট্রবিজ্ঞান মূল দায়িত্ব পালন করে। সমাজকর্মও সমাজস্থ মানুষের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করে। ভবিষ্যৎ উন্নয়নে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
১২. পরিকল্পনা ও উন্নয়ন : সমাজকর্ম ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান উভয়ই সুপরিকল্পিতভাবে কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে উন্নয়নের নীতিতে বিশ্বাসী। উভয়েই সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার ভিত্তিতে উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে। তাছাড়া সমাজকর্মের গৃহীত পরিকল্পনা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মাধ্যমে ফলপ্রসূ হয় ।
১৩. সামাজিক দায়িত্ব : সমাজকর্ম ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান উভয়েরই কিছু কিছু সামাজিক দায়দায়িত্ব রয়েছে। তাই মানবিক অধিকারের ন্যায় সামাজিক দায়দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করে তোলাও সমাজকর্ম ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান উভয়েরই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বিষয়বস্তুর দৃষ্টিকোণ থেকে সমাজকর্ম ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মধ্যে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। উভয়ের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, উৎপত্তি, অধিকার ও কর্তব্য, সামাজিক দায়দায়িত্ব, পদ্ধতি, কৌশল প্রভৃতি বিষয়ের মধ্যে যথেষ্ট মিল রয়েছে। ফলে দেখা যায় সার্বিকভাবে উভয়ে একে অন্যের সহায়ক ও পরিপূরক। রাষ্ট্রবিজ্ঞান নাগরিকদের . মধ্যে যে সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতা সৃষ্টি করে তা-ই মানুষকে সমাজকর্ম সাধনে উদ্যোগী ও সফল করে তোলে । সুতরাং সমাজকর্মের সাথে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের গভীর সম্পর্ক রয়েছে।