মধ্যযুগে ভারতীয় উপমহাদেশে সরকারি সমাজকল্যাণ কার্যক্রমগুলোর নাম লেখ
মধ্যযুগে ভারতীয় উপমহাদেশে সরকারি সমাজকল্যাণ কার্যক্রমগুলোর নাম লেখ
মধ্যযুগে ভারতীয় উপমহাদেশে সরকারি সমাজকল্যাণ কার্যক্রমগুলোর নাম লেখ |
মধ্যযুগে ভারতীয় উপমহাদেশে সরকারি সমাজকল্যাণ কার্যক্রমসমূহ : মধ্যযুগে ভারতীয় উপমহাদেশে সমাজকল্যাণ কার্যক্রম তিনটি যুগে বিভক্ত ছিল। যথা—
১. প্রাক সালতানাত যুগ : এসময়ের বিভিন্ন শাসক কর্তৃক সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রম নিম্নে উল্লেখ করা হলো—
ক. মামলুক বংশ ও মুহাম্মদ বিন কাসিমের সমাজকল্যাণ কার্যক্রম (৭১২ খ্রিস্টাব্দ) : মুহাম্মদ বিন কাসিম সুশাসনের অংশ হিসেবে কাজী উল-কুজ্জাতকে বিচার বিভাগের প্রধান নিযুক্ত করেন। তিনি সকল ধর্মের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য মন্দির, মসজিদের ন্যায় ধর্মীয় পবিত্র স্থানগুলো
খ. সুলতান মাহমুদের সমাজকল্যাণ কার্যক্রম (৯৯৭-১০৩০ খ্রিস্টাব্দ) : শিক্ষা ও সাহিত্য চর্চার প্রসারের জন্য কবি সাহিত্যিকদের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। তিনি বহু স্কুল, মাদ্রাসা, সৌধ, অট্টালিকা নির্মাণ করেছেন। তাছাড়া যুদ্ধের সময় মন্দির ধ্বংস করলে তার শাসনামলে তিনি সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করেছেন ।
২. সালতানাত যুগ : সালতানাত যুগের শাসন আমল কয়েকটি রাজবংশে বিভক্ত ছিল। এসব বংশের সমাজকল্যাণ/সমাজসেবামূলক কার্যক্রমের বিবরণ নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
ক. মামলুক বংশ ও কুতুবউদ্দিন আইবেকের সমাজকল্যাণ কার্যক্রম (১২০৬-১২৯৬ খ্রিস্টাব্দ) : কুতুবউদ্দিন আইবেকের শাসনামলে যেসব সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রম পরিচালিত হতো তার মধ্যে দান, স্থাপত্যের পৃষ্ঠপোষতা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। কুতুবউদ্দিন আইবেক তার দানের জন্য 'লাখবক্স' (লক্ষদাতা) উপাধিতে ভূষিত হন। কারণ তিনি তার সম্পদ থেকে লক্ষ লক্ষ মুদ্রা গরিব-দুঃখীদের কল্যাণে অকাতরে দান করতেন। স্থাপত্য শিল্পের মধ্যে কুতুব মিনার, কুয়াত-উল-ইসলাম উল্লেখযোগ্য ।
খ. খলজি বংশের সমাজকল্যাণ কার্যক্রম : খলজি বংশের সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রমের মধ্যে গিয়াসউদ্দিন ইওয়াজ খলজি ও আলাউদ্দিন খলজির নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। গিয়াস উদ্দিন ইওয়াজ খলজি জনকল্যাণের জন্য রাজধানী দেবকোট থেকে রাজধানী লক্ষ্ণৌতে স্থানান্তর করেন। যোগাযোগের উন্নয়নের জন্য রাস্তাঘাট নির্মাণ করেন, সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য প্রাসাদ নির্মাণ করেন। জনকল্যাণের জন্য আলাউদ্দিন খলজি দ্রব্যমূল্যের মূল্য নির্ধারণ করেন, যুবসমাজকে রক্ষা ও পরিবারের শান্তি রক্ষার জন্য মদ, জুয়া নিষিদ্ধ করেন, স্থায়ী ও বেতনভুক্ত সৈন্যবাহিনী গঠন করেন।ক্ষণাবেক্ষণ করেন।
গ. লোদী বংশ : ১৪৫১-১৫২৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত লোদী বংশ যেসব সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে তার মধ্যে সিকান্দার লোদী কর্তৃক জনকল্যাণের জন্য সেনানিবাস প্রতিষ্ঠিত হয় যা প্রশাসন ব্যবস্থার সংস্কার হিসেবে প্রশংসনীয় ছিল । তিনি প্রশাসনকে দুর্নীতিমুক্তকরণ, জনদুর্ভোগ লাঘবের জন্য অসংগতি কর লাঘব ও শিল্পী সাহিত্যিকদের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন ।
৩. মুঘল যুগ : ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কে মুঘল যুগ বলা হয়। মুঘল সম্রাটগণ কর্তৃক যেসব সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রম পরিচালিত হয় তার মধ্যে সম্রাট বাবর কর্তৃক জনকল্যাণে সেতু নির্মাণ, সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য বহু পার্ক, নর্দমা তৈরি, বৃহৎ আট্টালিকা, আগ্রা ও দিল্লিতে উদ্যান নির্মাণ, সম্রাট হুমায়ুন কর্তৃক বিশাল লাইব্রেরি স্থাপন; দিল্লিতে 'দিনপানাহ' ও 'বিশ্ববাসীদের আশ্রম' নামে একটি শহর নির্মাণ করেন ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ভারতীয় উপমহাদেশে মধ্যযুগে ব্যাপকভাবে জনকল্যাণের জন্য সমাজসেবা কার্যক্রম পরিচালিত হতো। আর এসব জনকল্যাণমূলক কাজ গরিব দুস্থ অসহায়দের জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাছাড়া এসময়কার জনকল্যাণমূলক সেবা ছিল বৈচিত্র্যময়।