মধ্যযুগে বাংলাদেশে সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রমগুলো উল্লেখ কর

মধ্যযুগে বাংলাদেশে সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রমগুলো উল্লেখ কর

প্রশ্ন ২.৩০। মধ্যযুগে বাংলাদেশে সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রমগুলো উল্লেখ কর ।

অথবা, মধ্যযুগে বাংলাদেশে সমাজকল্যাণ কার্যক্রম কী কী?

উত্তর ভূমিকা : মধ্যযুগে সমাজকল্যাণের কার্যক্রমের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এ অঞ্চলে সমাজকল্যাণমূলক প্রচেষ্টা হিন্দুধর্মের অন্তর্নিহিত ভাবধারা দ্বারা পরিচালিত হতো। মধ্যযুগে এসে প্রভাব বিস্তার করে ইসলাম ধর্ম। ৭১১ খ্রিস্টাব্দে আরবদের সিন্ধু অভিযানের পর এদেশে ইসলাম ধর্মের আবির্ভাব ঘটে এবং ইসলাম ধর্মের আদর্শ ও নীতি এদেশবাসীকে এক নতুন চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে।

মধ্যযুগে বাংলাদেশে সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রমগুলো উল্লেখ কর
মধ্যযুগে বাংলাদেশে সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রমগুলো উল্লেখ কর

মধ্যযুগে বাংলাদেশে সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রম : বাংলাদেশে মুসলমান শাসকদের আগমনের সময় থেকে ব্রিটিশ শাসন শুরুর পূর্ব পর্যন্ত সময়কে মধ্যযুগ ধরা হয়। নিম্নে মধ্যযুগে বাংলাদেশে সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রমসমূহ উল্লেখ করা হলো—

১. ধর্মপ্রচারক ও পির আওলিয়া কর্তৃক সেবা : মধ্যযুগে সমাজসেবার অগ্রদূত ছিলেন ধর্মপ্রচারক ও পির আওলিয়াগণ। তারা নিজেদের খানকা ও আবাসস্থলের আশেপাশে সরাইখানা ও লংগরখানা স্থাপন করে দরিদ্র, অসহায় ও অত্যাচারীদের সেবা করতো। 

২. কল্যাণমূলক কাজ : বাংলাদেশে ধর্মপ্রচারকগণ মানুষের সেবায় মাদ্রাসা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, দিঘি খনন, কূপ খনন, রাস্তাঘাট নির্মাণ ও হাসপাতাল স্থাপন এবং বসবাসের জন্য পাহাড় কেটে ও জঙ্গল পরিষ্কার করে

৩. ইসলামি আদর্শভিত্তিক সেবা: ইসলামি আদর্শের ভিত্তিতে বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ সমাজসেবায় আত্মনিয়োগ করেন। তাদের মধ্যে হযরত খানজাহান আলি (রহ.) বাগেরহাটে খলিফাতাবাদ প্রতিষ্ঠা করে কল্যাণ রাষ্ট্রের সূচনা করেন। তিনি পুকুর ও দিঘি খনন, রাস্তাঘাট ও মসজিদ নির্মাণ করেন। সিলেটে হযরত শাহজালাল (রহ.) জনসেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেন।

৪. সরকারি কার্যক্রম : মধ্যযুগে সরকারি পর্যায়ে প্রজাদের সুখশান্তির জন্য শাসকগণ ব্যাপক অবদান রাখেন। তাদের মধ্যে যারা চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন তারা হলেন কুতুবউদ্দিন আইবেক, ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজি, গিয়াসউদ্দিন ইওয়াজ খলজি, আলাউদ্দিন হুসেন শাহ, সম্রাট আকবর, সম্রাট জাহাঙ্গীর এবং আরও অনেকে। তারা মানব সেবায় রাজপথ নির্মাণ, খাল খনন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মসজিদ নির্মাণ প্রভৃতি কাজ করে গেছেন। এদেশে ব্রিটিশ শাসনামল শুরু হলে মধ্যযুগের অবসান ঘটে এবং আধুনিক যুগের শুরু হয় ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মধ্যযুগে এদেশে মুসলিম শাসকদের পাশাপাশি ফকির দরবেশগণ সেবার মহান ব্রত নিয়ে সাধারণ মানুষের বিশেষ করে অসহায়, অবহেলিত, দরিদ্র, রুগ্ন, নিরীহ মানুষের কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। অর্থাৎ মধ্যযুগে ইসলাম ধর্মের আদর্শ ও নীতি সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করে। মানুষের আবাসস্থল গড়ে তোলায় সাহায্য করতো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ