ইংল্যান্ডের দান সংগঠন সমিতির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও

 ইংল্যান্ডের দান সংগঠন সমিতির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও

প্রশ্ন ২.১০ | দান সংগঠন সমিতি কী? 

অথবা, ইংল্যান্ডের দান সংগঠন সমিতির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও। 

উত্তর ভূমিকা : ইংল্যান্ডে দরিদ্র ও দুঃস্থদের সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সাহায্যদানের জন্য ১৫৩৬ সাল থেকে ১৮৩৪ সালের দরিদ্র সংস্কার আইন প্রণন করার পরও অক্ষম, বিকলাঙ্গ ও দরিদ্রদের অবস্থা শোচনীয় হয়ে ওঠে। তাছাড়া ইংল্যান্ডের অর্থনৈতিক সংকট, গণ বেকারত্ব প্রকৃতি মোকাবিলা করার জন্য সুষ্ঠুভাবে সাহায্য দান প্রক্রিয়া পরিচালনায় লক্ষ্যে ১৮৬৯ সালে দান সংগঠন সমিতি গঠন করা হয়।

ইংল্যান্ডের দান সংগঠন সমিতির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও
ইংল্যান্ডের দান সংগঠন সমিতির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও

● দান সংগঠন সমিতি : দান সংগঠন সমিতির ইংরেজি নাম 'Charity Organization Society' সংক্ষেপে 'COS' বা দাসস বলা হয়। ঊনবিংশ শতাব্দীর সত্তরের দশকে ইংল্যান্ডের ব্যাপক বেকারত্ব, অর্থনৈতিক মন্দা ইত্যাদির কারণে দারিদ্র্যের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। এসময় দরিদ্রদের সাহায্য করার জন্য অনেক বেসরকারি ও স্বেচ্ছাসেবী ত্রাণ ও দান সংগঠন গড়ে ওঠে। এ সময় ইংল্যান্ডে খ্রিস্টধর্ম রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায় । ইংল্যান্ডের সব গির্জা, চার্চ ও বেসরকারি সংখ্যা ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করে। ফলে সমমনা এসব প্রতিষ্ঠানের মাঝে সাহায্য পরিচালনা সংক্রান্ত ব্যাপারে একটা প্রতিযোগিতা তৈরি হয়। পরবর্তীতে দেখা যায়, প্রতিযোগিতার কারণে একই সাহায্য একই ব্যক্তি একাধিক প্রতিষ্ঠান থেকে পেয়েছে। আবার অন্যদিকে কেউ ত্রাণ পর্যাপ্ত না থাকায় কোনো ধরনের সাহায্যই পাচ্ছে না। এ জাতীয় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি বিদ্যমান ত্রাণ কার্যক্রমে এক অস্থিতিশীলতার জন্ম দেয়। এতে ত্রাণ কার্যক্রমে পুনরাবৃত্তি ও সাহায্য দ্রব্যের অপচয় বৃদ্ধি পেতে থাকে। এ জাতীয় পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য সরকারি ও বেসরকারি সাহায্য সংস্থার সমন্বয়সাধনের জন্য হ্যানরি সলি (Henry Solly) একটি বোর্ড গঠনের সুপারিশ করেন। রিচার্ড গ্রিন, এডওয়ার্ড ডেনিসন, ওকট্যাভিয়া হিল, স্যামুয়েল বার্নেট, স্যার স্টুয়ার্ট লুচ প্রমুখ ব্যক্তির প্রচেষ্টায় ১৮৬৯ সালে লন্ডনে "TheSociety for Organizing Charitable Relief and Repressing Mendicity," নামক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরবর্তীতে এর নাম পরিবন করে যা দান সংগঠন সমিতি 'Charity Organization Society' নামকরণ করা হয়। দান সংগঠন সমিতি চার্লমাসের নীতির ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠা করা হয়। দান সংগঠন সমিতি তার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি অনুসন্ধান বিভাগ চালু করে । দান সংগঠন সমিতি সাহায্য প্রার্থীদের নাম নিবন্ধনের ব্যবস্থা করে। 'COS' তার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে গিয়ে জার্মানির এলবার ফিল্ড ব্যবস্থা অনুসরণ করে। এ সমিতি পরিদর্শনের মাধ্যমে দারিদ্র্যের কারণ অনুসন্ধান ও সাহায্য ব্যবস্থার পুনরাবৃত্তি রোধ করে ব্যয় হ্রাসে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখে। দান সংগঠন সমিতি পাঁচটি প্রধান উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য পরিচালিত হয়। দান সংগঠন সমিতি সরকারি-বেসরকারি সাহায্যের মধ্যে সমন্বয়সাধন করে সরকারি পর্যায়ে সাহায্যের পুনরাবৃত্তি রোধ করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং ভয়া সাহায্য সংস্থা চিহ্নিতকরণ ও বিলোপসাধনে বিশেষ ভূমিকা রাখে। দান সংগঠন সমিতির কার্যক্রম ব্যক্তি সমাজকর্ম ও সমষ্টি সমাজকর্মের ধারণা প্রতিষ্ঠা করতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ইংল্যান্ডে ১৩৪৯–১৮৩৪ পর্যন্ত প্রায় পাঁচশত বছর যাবৎ দরিদ্র কল্যাণে বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করা হলেও এসব আইন দরিদ্র সমস্যা মোকাবিলায় উল্লেখযোগ্য কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। উনিবংশ শতাব্দীর সত্তরের দশকের উদ্ভুত সমস্যা মোকাবিলা করতে গিয়ে গির্জা ও মানবহিতৈষী ব্যক্তিবর্গ দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। এ জাতীয় দ্বন্দ্বমূলক পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য গড়ে তোলা হয় দান সংগঠন সমিতি ।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ