শ্রমাগার কাকে বলে | ইংল্যান্ডের শ্রমাগার বলতে কি বুঝায়

 ইংল্যান্ডের শ্রমাগার বলতে কী বুঝ । অথবা, শ্রমাগার কাকে বলে

প্রশ্ন ২.০৬] ইংল্যান্ডের শ্রমাগার বলতে কী বুঝ?

অথবা, শ্রমাগার কাকে বলে?

উত্তর ভূমিকা : ইংল্যান্ডে দরিদ্র সাহায্য কার্যক্রমে উদ্ভুত বিভিন্ন নেতিবাচক অবস্থা মোকাবিলা করার জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের আইন প্রণয়ন করা হয়। এসব আইনের প্রায় সবকটাতেই সক্ষম দরিদ্রদের শ্রমাগারে জোরপূর্বক কাজে বাধ্য করার বিধান রাখা হয়। অনেক সমালোচনা থাকার পরও ইংল্যান্ডসহ ইউরোপের অন্যান্য দেশে শ্রমাগারগুলো দরিদ্র সাহায্য কার্যক্রমে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ইংল্যান্ডের শ্রমাগার বলতে কী বুঝ । অথবা, শ্রমাগার কাকে বলে
ইংল্যান্ডের শ্রমাগার বলতে কী বুঝ । অথবা, শ্রমাগার কাকে বলে

● ইংল্যান্ডের শ্রমাগার : প্রাক শিল্প যুগে অর্থাৎ সপ্তদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে উৎপাদন ব্যবস্থায় শ্রমাগারগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে ওলন্দাজরা তাদের শ্রমাগারের দরিদ্রদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে বিভিন্ন ধরনের শিল্পে নিয়োজিত করে অভূতপূর্ব উন্নতি লাভ করে । ফলে ওলন্দাজরা ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে ইংল্যান্ডের প্রতিযোগী হয়ে ওঠে। ইংল্যান্ড দরিদ্রাগারে অবস্থানকারী দরিদ্রদের দক্ষ করে তোলারজন্য বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম গ্রহণ করে। দক্ষ ও প্রশিক্ষিত এসব শ্রমিককে রপ্তানিযোগ্য বিভিন্ন শিল্পে নিয়োজিত করা হয়। এ জাতীয় কার্যক্রমকে শৃঙ্খলিত করে ব্যবহার করার জন্য একটি আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। যার ফলশ্রুতিতে প্রণয়ন করা হয় ১৬৯৬ সালের শ্রমাগার আইন। এ শ্রমাগার আইনের মূল উদ্দেশ্য ছিল দরিদ্রদের এমনভাবে প্রশিক্ষিত করা যাতে তারা উৎপাদনমুখী শিল্পজাত দ্রব্য উৎপাদনে সক্ষম হয়। এ আইনের আওতায় লন্ডন, ব্রিস্টলসহ অন্যান্য বড় শহরের শ্রমাগারগুলোতে নিয়োজিত শিশু, বয়স্ক নারীদের সেলাই, তাঁত বুনন, কাপড় তৈরি, ফিতা তৈরিসহ অন্যান্য উৎপাদনমুখী কাজে নিয়োজিত করা হয়।

১৬৯৬ সালে শ্রমাগার আইনে সব সক্ষম দরিদ্রকে সমানভাবে প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। যার ফলে অদক্ষ এসব বেকার লোকজন দক্ষ ফোরম্যান ও শ্রমিকদের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারেনি। তাই অনেক ক্ষেত্রে এ ব্যবস্থা অকার্যকর প্রমাণিত হতে থাকে। এ আইনে এ দরিদ্রদের বিভিন্ন বেসরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগে সহায়তা করার জন্য ওভারসিয়ার নিয়োগ করা হয় এবং শ্রমাগারে কাজ করতে অনিচ্ছুক দরিদ্র ব্যক্তিকে ত্রাণসাহায্য থেকে বিরত রাখা হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন সমালোচনার প্রেক্ষিতে শ্রমাগারগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। এসব সমালোচনার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে শ্রমাগারে দরিদদের সাথে কয়েদির মতো ব্যবহার করা হতো এবং পুরুষদেরকে তাদের স্ত্রী ও সন্তানদের থেকে আলাদা করে রাখা হতো। শ্রমাগারগুলো বেসরকারি ঠিকাদার দ্বারা পরিচালিত হতো। এসব ঠিকাদার শ্রমাগারগুলোয় সর্বোচ্চ মুনাফা লাভের আশায় সর্বনিম্ন খরচে পরিচালনা করতো। ফলে এখানকার জীবনমান ছিল খুবই নিম্ন। শ্রমাগারগুলোতে এক কক্ষে অনেক লোককে গাদাগাদি করে বসবাস করতে বাধ্য করা হতো। ফলে নানা ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিত।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, শিল্পবিপ্লবের প্রাক্কালে বিকাশমান শিল্পখাতে দরিদ্রদের প্রশিক্ষিত করে নিয়োজিত করা নিঃসন্দেহে একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এতে দরিদ্ররা একদিকে দারিদ্র্যের কষাঘাত থেকে মুক্তি পায় অন্যদিকে সরকারি ত্রাণ কার্যক্রম বায় হ্রাস পায়। কিন্তু তৎকালীন ইংল্যান্ডের বিপুলসংখ্যক দরিদ্রকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কাজে নিয়োগ করা খুব একটা সহজ ছিল না। তাই পরবর্তীতে বিভিন্ন সমালোচনার প্রেক্ষিতে ১৬৯৬ সালের শ্রমাগার আইন বাতিল করা হয়।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ