ইংল্যান্ডের বহিঃসাহায্য ব্যবস্থা সম্পর্কে কী জান
প্রশ্ন ২.০৭ | বহিঃসাহায্য ব্যবস্থা সম্পর্কে লেখ ।
অথবা, ইংল্যান্ডের বহিঃসাহায্য ব্যবস্থা সম্পর্কে কী জান?
উত্তর ভূমিকা : ইংল্যান্ডের দারিদ্র্য সমস্যা মোকাবিলায় দরিদ্রাগার, শ্রমাগার ও সংশোধনাগার ব্যবস্থা অন্যতম। এসব ব্যবস্থায় সক্ষম দরিদ্রদের জোরপূর্বক নানা ধরনের কাজ করতে বাধ্য করা হতো। সক্ষম দরিদ্রদের পরিবার পরিজনকে দরিদ্রাগারে রেখে সাহায্য দেওয়া ছিল বেশ ব্যয়বহুল ও ঝামেলাপূর্ণ। তাই এর বিকল্প হিসেবে দরিদ্রকে তার বাড়িতে রেখে প্রয়োজনীয় ত্রাণ দেওয়ার এ ব্যবস্থা বহিঃসাহায্য বা বাহ্যিক সাহায্য নামে পরিচিত।
|
ইংল্যান্ডের বহিঃসাহায্য ব্যবস্থা সম্পর্কে কী জান |
বহিঃসাহায্য : ইংল্যান্ডের দরিদ্র সমস্যাকে স্থায়ীভাবে মোকাবিলা করার জন্য সময়ের পরিক্রমায় বিভিন্ন আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলেও তা পুরোপুরি সফলতা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়। তৎকালীন ইংল্যান্ডের সমাজসংস্কারকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন টমাস গিলবার্ট। পেশাগত জীবনে টমাস গিলবার্ট একজন ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। পেশাগত দায়িত্বের কারণেই গিলবার্ট তৎকালীন দরিদ্র আইন কার্যক্রমের সাথে সরাসরি জড়িত ছিলেন . এবং এসব আইনের আদ্যোপান্ত ভালোভাবে জানতেন। তিনি তার দীর্ঘ পেশাগত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে দরিদ্র আইনের ব্যর্থতাগুলো ভালোভাবে জানতেন। তিনি গিলবার্ট হাউজ অব কমন্সের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। হাউজ অব কমন্সের সদস্য হিসেবে গিলবার্ট দরিদ্র আইনের ব্যর্থতার কারণগুলো অধিক কার্যকরভাবে পার্লামেন্টে তুলে ধরেন। গিলবার্ট শ্রমাগার ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য কতকগুলো সুপারিশ পেশ করেন। গিলবার্টের আন্তরিকতা, নিরলস চেষ্টা ও বিচক্ষণতার কারণেই শ্রমাগারের উন্নয়নের জন্য ১৭৮২ সালে দরিদ্র আইন সংশোধন করে 'The Poor Law Amendment of 1782' প্রণীত হয়; যা পরবর্তীতে গিলবার্ট অ্যাক্ট নামে পরিচিত হয়। এ আইন শ্রমাগার পরিচালনার জন্য প্রণীত ঠিকাদারি ব্যবস্থা বন্ধ করে শ্রমাগারের সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য অবৈতনিক ওভারসিয়ারের পরিবর্তে বেতনভুক্ত ওভারসিয়ার নিয়োগ করা হয়। এদের 'Gurdians of the Poor' নামে আখ্যায়িত হয় । গিলবার্ট অ্যাক্ট অনুযায়ী দরিদ্রদের দরিদ্রাগার ও শ্রমাগারে রেখে সাহায্য করার নীতি পরিবর্তন করে সক্ষম ব্যক্তিদের নিজ গৃহে বহিঃসাহায্য বা বাহ্যিক সাহায্যের ব্যবস্থা করা হয়। এরকম সক্ষম বেকারদের কর্মসংস্থান না করা পর্যন্ত নিজ নিজ গৃহে বাহ্যিক সাহায্যের ব্যবস্থা করা হয়। Enclosur Movement এর ফলে দরিদ্র শ্রেণি তাদের ভূমিস্বত্ব থেকে বঞ্চিত হয়। তাছাড়া শিল্পবিপ্লবের সূচনালগ্নে যান্ত্রিক উৎপাদন শুরু হওয়া গ্রামীণ হস্ত ও কুটির শিল্পের বিলুপ্তি ঘটে। যার ফলে বেকার ও ভবঘুরের সংখ্যা মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যায়। এরকম ব্যাপক বেকারত্ব ও দারিদ্র্য সমস্যা কার্যকরভাবে মোকাবিলা করার জন্য Gilbert Act এর মাধ্যমে বাহ্যিক সাহায্যের ব্যবস্থা করা হয়। দরিদ্রদের নিজ গৃহে বাহ্যিক সাহায্যের আওতায় খাদদেবা, জ্বালানি, বস্ত্র, নগদ টাকা ইত্যাদি প্রদান করা হতো।উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, প্রচলিত দরিদ্রাগার, শ্রমাগার ও সংশোধনাগারভিত্তিক দরিদ্র সাহায্য ব্যবস্থার কর্মপ্রকৃতি এতটাই নির্মম ছিল যে দরিদ্র জনগণ একান্ত নিরূপায় না হলে সাহায্যের জন্য আবেদন করতো না। তাই এসব ব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে গিলবার্ট অ্যাক্ট ১৭৮২ অনুযায়ী বাহ্যিক সাহায্যের ব্যবস্থা করা হয়। শ্রমাগার ও দরিদ্রাগারের চেয়ে নিজ গৃহে বাহ্যিক সাহায্য ব্যবস্থা কম ব্যয়বহুল হওয়ায় তৎকালে তা ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে।