বিভারিজ রিপোর্ট কি | বিভারিজ রিপোর্ট বলতে কী বোঝায়

বিভারিজ রিপোর্ট কি | বিভারিজ রিপোর্ট বলতে কী বোঝায়

প্রশ্ন ২.১২ | বিভারিজ রিপোর্ট কী? 

অথবা, বিভারিজ রিপোর্টের পটভূমি লেখ।

উত্তর ভূমিকা : সারা বিশ্বে সমাজকল্যাণ কার্যক্রম তথা সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার মডেল হচ্ছে বিভারিজ রিপোর্ট। বিভারিজ রিপোর্ট প্রণয়নের ফলে ইংল্যান্ডের সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রম সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে উপস্থাপিত হয়। তবে বিভারিজ রিপোর্ট প্রণয়ন একদিনের কাজ নয়, কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি দীর্ঘদিনের পরিকল্পিত একটি কাজ। এই রিপোর্ট প্রণয়নে রয়েছে বিশাল ইতিহাস বা পটভূমি।

বিভারিজ রিপোর্ট কী । অথবা, বিভারিজ রিপোর্টের পটভূমি
বিভারিজ রিপোর্ট কী । অথবা, বিভারিজ রিপোর্টের পটভূমি

বিভারিজ রিপোর্টের পরিচয় বা পটভূমি : নিম্নে বিভারিজ রিপোর্ট পরিচয় বা পটভূমি উল্লেখ করা হলো—

১. পূর্ববর্তী আইনগুলোর ব্যর্থতা : ১৩৪৯ থেকে ১৯৪০ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ইংল্যান্ডের দারিদ্র্য সমস্যা মোকাবিলায় অর্ধশতাধিক আইন প্রণয়ন করা হয়। এসব আইন ছিল মূলত নির্যাতন, দমন, নিপীড়নমূলক। এসব আইনে দারিদ্র্য সমস্যার কোনো স্থায়ী সমাধান গৃহীত হয়নি। যার ফলশ্রুতিতে পূর্বেকার আইনের দুর্বলতা দূর করার জন্য প্রণয়ন করা হয় নতুন আইন বা পূর্ব আইনের সংশোধিত রূপ। দরিদ্র কল্যাণ কার্যক্রমে তাই একটি অস্থিতিশীলতা বিরাজ করতো। এরূপ অস্থিতিশীলতা ওতন বিশৃঙ্খলা দূর করার জন্য দরিদ্রদের সামগ্রিক কল্যাণ বয়ে আনতে পারে এরূপ একটি পদক্ষেপ গ্রহণ করার প্রয়োজনীয়তা পরিলক্ষিত হয় । যার প্রেক্ষিতে প্রণীত হয় বিভারিজ রিপোর্ট।

২. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসাত্মক পরিণতি : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ইংল্যান্ডে নতুন নতুন সমস্যা দেখা দিতে থাকে। যুদ্ধফেরত সৈনিক, পঙ্গু, অক্ষম, যুদ্ধে নিহতের পরিবারের ভরণপোষণে বিদ্যমান সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রম অপ্রতুল প্রমাণিত হয়। তাই ব্যাপকভিত্তিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় ।

৩. শিল্পবিপ্লব সংক্রান্ত জটিলতা : শিল্পবিপ্লবের ফলে শ্রমিক শ্রেণির জীবনে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ আসতে থাকে। শিল্প দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে শ্রমিকরা পঙ্গু হয় বা মারা যায়। দুর্ঘটনাকবলিত এ শ্রেণিকে ভরণপোষণ করার জন্য প্রয়োজনীয় কোনো ব্যবস্থা বিদ্যমান ছিল না। এ সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য বিভারিজ রিপোর্ট কর্মসূচির আবশ্যকতা প্রমাণিত হতে থাকে।

৪. দারিদ্র্য : বিশ বছরের ব্যবধানে দুটি বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে ইংল্যান্ডের আর্থিক কাঠামো ভেঙে পড়েছিল। যার ফলে দরিদ্রদের সংখ্যা ক্রমাগতভাবে বাড়তে থাকে। দরিদ্ররা সাহায্যের জন্য আবেদন করতে থাকে। দরিদ্রদের আর্থিক কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য একটি বৃহৎ কর্মসূচির প্রয়োজনীয়তা পরিলক্ষিত হয়  আর এ প্রেক্ষিতেই প্রণয়ন করা হয় বিভারিজ রিপোর্ট ।

৫. সামাজিক কল্যাণমূলক কর্মসূচি : পূর্ববর্তী আইনগত পদক্ষেপগুলো শুধু ত্রাণ সাহায্য কার্যক্রমের মাধ্যমে সমস্যার সাময়িক সমাধান দিত। এসব আইনে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা ও বিনোদনমূলক কার্যক্রমের উপস্থিতি ছিল না। এসব সুবিধা সংবলিত একটি আইন প্রণয়নের সুপারিশ দীর্ঘদিন ধরে উপস্থাপিত হয়ে আসছিল । যার ফলশ্রুতিতে প্রণয়ন করা হয় বিভারিজ রিপোর্ট। 

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ইংল্যান্ডের বিভারিজ রিপোর্ট এক সুদীর্ঘ চিন্তার ফসল। পর্যালোচনা, অভিজ্ঞতা ও যৌক্তিকতার ভিত্তিতে বিভারিজ রিপোর্টের কল্যাণমূলক সুপারিশগুলো সন্নিবেশিত করা হয়। বিভারিজ রিপোর্টে এত ব্যাপক কর্মসূচির সমাহার ঘটানোর পিছনে রয়েছে এক যৌক্তিক পটভূমি ও ইতিহাস। বিভারিজ রিপোর্ট সমাজকল্যাণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ইতিহাসে একটি মাইলফলক

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ