বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সমাজকর্ম পাঠের গুরুত্ব আলোচনা করো
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সমাজকর্ম পাঠের গুরুত্ব আলোচনা করো
প্রশ্ন ১.০৩ / বাংলাদেশে সমাজকর্ম পাঠের গুরুত্ব আলোচনা কর।
অথবা, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সমাজকর্ম পাঠের গুরুত্ব আলোচনা কর।
উত্তর ভূমিকা : বাংলাদেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের একটি দেশ। এদেশে ক্রমে উন্নতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। এর পিছনে শিল্পের অগ্রসরতা ও তথ্য প্রযুক্তির অধিক ব্যবহার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রভাব বিস্তার করছে। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে প্রকৃত উন্নতির ফলে সমাজজীবন তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন জটিল ও বহুমুখী সমস্যা। এসব সমস্যার প্রতিকার প্রতিরোধ ও উন্নয়নে সমাজকর্ম অনবধ্য ভূমিকা রাখতে পারে । তাই বাংলাদেশে সমাজকর্মের গুরুত্ব অত্যাধিক ।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সমাজকর্ম পাঠের গুরুত্ব আলোচনা করো |
বাংলাদেশে সমাজকর্ম পাঠের গুরুত্ব : নিম্নে বাংলাদেশে সমাজকর্মের গুরুত্ব আলোচনা করা হলো-
১. সামাজিক সচেতনতাবোধ জাগ্রত হওয়া : বাংলাদেশের অধিকাংশ জনগণের মধ্যে সামাজিক সচেতনতার খুবই অভাব। তারা এখনো অজ্ঞতা ও কুসংস্কারে আচ্ছন্ন । গ্রামের দরিদ্র, অশিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে এখনো কুসংস্কারের প্রভাব লক্ষণীয়। সমাজকর্মই এসব জনগোষ্ঠীর মধ্যে সামাজিক সচেতনতাবোধ জাগ্রত করে। এক্ষেত্রে সমাজকর্মী অগ্রণী ভূমিকা রাখে।
২. সমস্যা সম্পর্কে তথ্যসংগ্রহ : আধুনিক সমাজব্যবস্থা আর্থসামাজিক রাজনৈতিক মনোদৈহিকসহ নানাবিধ সামাজিক সমস্যায় জর্জরিত আর সমাজকর্ম হলো এমন একটি বিষয় যা অধ্যয়ন করে এসব সমস্যার সঠিক সমাধান বের করা সম্ভব। এজন্য সমস্যার প্রকৃতি, ধরন, বিস্তারসহ যাবতীয় তথ্যসংগ্রহ করা প্রয়োজন। সমাজকর্ম যেহেতু সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করে তাই সমাজকর্ম অধ্যয়নের মাধ্যমেই সমস্যা সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্যসংগ্রহ করা সম্ভব।মাধ্যমেই সমস্যা
৩. সমস্যার বিজ্ঞানভিত্তিক সমাধান : বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থা বহুমুখী সমস্যায় জর্জরিত। এসব সমস্যার বিজ্ঞানভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের প্রয়োজন। নিরক্ষরতা, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, মাদকাসক্তি, বেকারত্ব, দারিদ্র্য, অপরাধ প্রভৃতি সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য সমাজকর্ম অধ্যয়ন করে বিজ্ঞানভিত্তিক সমাধান করতে হবে। এক্ষেত্রে সমাজকর্মের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
৪. জনঅংশগ্রহণ : যেকোনো কাজে সফলতা অর্জনের জন্য প্রথমেই প্রয়োজন কাজের প্রতি আগ্রহ ও জনঅংশগ্রহণ। সমাজকর্ম মানুষকে কাজ করতে উৎসাহী করে। সমাজকর্মীরা তাদের পেশাগত জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে দেশের সমস্যা সম্পর্কে সচেতন করে জনঅংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারে।
৫. মানব সম্পদ উন্নয়ন : যেকোনো এলাকার জনগণকে জনসম্পদে রূপান্তর করার প্রক্রিয়াকে মানব সম্পদ উন্নয়ন বলে। বাংলাদেশের বহু জনগোষ্ঠী আজও উন্নয়নের অংশীদার হতে পারেনি'। এসব জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের অংশীদার করতে হলে তাদেরকে মানব সম্পদে পরিণত করতে হবে। সঠিক শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের মাধ্যমে এসব জনগোষ্ঠীকে মানব সম্পদে পরিণত করা যায় ।সমাজকন
৬. সম্পদের সদ্ব্যবহার: বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির তুলনায় সম্পদ খুবই সীমিত। এ সীমিত সম্পদকে যথাযথভাবে ব্যবহার করে জনগণের জীবনমানের উন্নয়ন ও জাতীয় উন্নয়ন সাধন করা যায়। এ সমাজ সবসময় সম্পদের সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে প্রয়াসী । তাই সমাজকর্মে এর প্রয়োজন অধিক।
৭. পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর স্বার্থরক্ষা : সমাজকর্ম সমাজের অসহায়, অবহেলিত, এতিম, অনাথ, বিধবা, নিপীড়িত, ভূমিহীন, সুবিধাবঞ্চিত প্রভৃতি শ্রেণির ভাগ্য উন্নয়নের ক্ষেত্রে সমাজকর্মের জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে থাকে। আর সমাজকর্মীগণ পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর স্বার্থরক্ষার জন্য সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি ও প্রক্রিয়ার আলোকে তাদের উন্নয়নের চেষ্টা করে থাকে। তাই পিছিয়ে পড়া তথা সুবিধাবঞ্চিত জনগণের স্বার্থরক্ষার তাগিদে সমাজকর্ম পাঠ করা অপরিহার্য।
৮. স্বাবলম্বী হওয়া : বাংলাদেশের অনেক জনগণের মধ্যে কর্মবিমুখতা, বেকারত্বের সমস্যা ও পরনির্ভরশীলতার মনোভাব দেখা যায়। এসব মনোভাবের কারণে তারা স্বাবলম্বী হতে পারে না। এরূপ কর্মবিমুখতা ও পরনির্ভরশীল মনোভাব দূর করতে সমাজকর্ম সাহায্য করে থাকে। আধুনিক সমাজকর্ম সমস্যাগ্রস্ত জনগণকে এমনভাবে সহায়তা করে, যাতে তারা তাদের নিজেদের সম্পদ সক্ষমতার মাধ্যমে সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটিয়ে নিজেরাই নিজেদের বিদ্যমান সমস্যা সমাধান করে স্বাবলম্বী হতে পারে। এক্ষেত্রে সমাজকর্মকে একটি সাহায্যকারী প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচনা করা হয় ।
৯. দক্ষতাসম্পন্ন পেশাদার সমাজকর্মী সৃষ্টি : বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়ন ঘটাতে হলে সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানেও দক্ষতাসম্পন্ন পেশাদার সমাজকর্মী থাকা দরকার । সমাজে বিদ্যমান সমস্যা সমাধান এবং উন্নয়নমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়নে পেশাদার সমাজকর্মীর গুরুত্ব অনস্বীকার্য। আর এ দক্ষতাসম্পন্ন পেশাদার সমাজকর্মী সৃষ্টি করার জন্য সমাজকর্ম অধ্যয়ন করা আবশ্যক ।অধ্যয়ন করা আবশ্যক
১০. সার্বিক সামাজিক উন্নয়ন : সমাজকর্ম সার্বিক সামাজিক উন্নয়ন সাধনের লক্ষ্যে কাজ করে। এতে ছোট-বড়, ধনী-দরিদ্র, উঁচু-নিচুর কোনো ভেদাভেদ নেই। সমাজকর্মের মূল উদ্দেশ্য হলো সর্বসাধারণের কল্যাণের লক্ষ্যে বহুমুখী কর্মসূচি প্রণয়ন এবং ইহার বাস্তবায়ন। সমাজকর্ম অধ্যয়নের মাধ্যমেই এ ব্যাপারে যাবতীয় বিষয়াদি সম্পর্কে জানা যায়।
১১. সামাজিক বৈষম্য দূরীকরণ : সামাজিক বৈষম্যের কারণে সমাজের সব মানুষ সমান সুযোগ সুবিধা উপভোগ করতে পারে না। তাদের মধ্যে উন্নয়নমূলক কাজ করার যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও কাজে অংশগ্রহণ করতে পারে না। ফলে তারা সামাজিক বৈষম্যের শিকার হয়। এসব সামাজিক বৈষম্য দূরীকরণের উপায় জানতে হলে সমাজকর্ম অধ্যয়ন করা দরকার।
১২. সামাজিক নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়ন : বাংলাদেশ বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ করে আর্থসামাজিক রাজনৈতিক, ক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য জনগণের জনকল্যাণকর সামাজিক নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়ন করা খুবই দরকার। আর সমাজকর্ম এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট ধারণা দিয়ে থাকে ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বাংলাদেশের আর্থসামাজিক, রাজনৈতিকসহ নানাবিধ সামাজিক সমস্যার মোকাবিলা ও সমাধানে সমাজকর্মের গুরুত্ব অত্যধিক । সমাজকর্ম বহু পন্থা অবলম্বন করে সমাজস্থ সমস্যা সমাধান করে থাকে। শুধু তাই নয় দেশের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সমাজকর্ম প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। তাই বলা যায়, বাংলাদেশে সমাজকর্মের গুরুত্ব অপরিসীম।