সমাজকর্মের উদ্দেশ্য সমূহ লিখ

সমাজকর্মের উদ্দেশ্য সমূহ লিখ অথবা সমাজকর্মের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলো কী

উত্তর ভূমিকা : আধুনিক বিশ্বে সমাজকর্ম হচ্ছে একটি সাহায্যকারী পেশা এবং বিজ্ঞাননির্ভর সমস্যা সমাধানকারী প্রক্রিয়া। সমাজকর্ম আধুনিক বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তিদের সমস্যার গভীরে প্রবেশ করে সমস্যার ব্যাখ্যামূলক একটি বাস্তবসম্মত ও সময়োপযোগী সমাধান বের করে। মূলত নতুন নতুন ও জটিল সমস্যার বিজ্ঞানসম্মত সমাধানের লক্ষ্যেই সমাজকর্মের আবির্ভাব। সমাজকর্মের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য : নিম্নে সমাজকর্মের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলো উল্লেখ করা হলো-

১. সামগ্রিক কল্যাণ নিশ্চিত করা : সমাজের সকল মানুষের সামগ্রিক কল্যাণ নিশ্চিত করা সমাজকর্মের একটি অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে সমাজকর্ম মানুষকে এমনভাবে সাহায্য করে যাতে প্রত্যেক মানুষ আর্থসামাজিক ও মনোদৈহিক কল্যাণের অধিকারী হতে পারে। এ প্রসঙ্গে গর্ডন হ্যামিলটন বলেন “সমাজকর্মের উদ্দেশ্য শুধু ব্যক্তি, পরিবার ও দলীয় সদস্যদের সামাজিক সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়তা প্রদানই নয়; বরং স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক মানোন্নয়ন এবং উন্নত ধরনের গৃহায়ন ও কর্ম পরিবেশ তৈরি এবং সামাজিক আইন প্রণয়নে সমাজের সাধারণ অবস্থার উন্নয়ন।"

২. মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ : সমাজকর্মের একটি অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষকে তার মৌল মানবিক চাহিদা পূরণে সহায়তা প্রদান করা। এ প্রসঙ্গে Encyclopaedia of Social Work-তে বলা হয়েছে, “মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ এবং মানুষের সামর্থ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা, সামাজিক সম্প্রীতি, সেবা, সম্পদ ও কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা সমাজকর্মের অন্যতম লক্ষ্য।"

৩. প্রত্যাশিত সামাজিক পরিবেশ তৈরি : ব্যক্তি ও তার পরিবেশের মধ্যে সামঞ্জস্যবিধান করা সম্ভব না হলে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা এবং সমাজের উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই বিশৃঙ্খলা রোধ করে প্রত্যাশিত সামাজিক পরিবেশ তৈরি করা সমাজকর্মের অন্যতম লক্ষ্য । ৪. সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা : সমাজকর্ম সমাজের সুবিধাবঞ্চিত ও অসহায়দের সহযোগিতার জন্য সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে। সমাজের সকল ধরনের পরিবর্তন সমাজের জন্য কল্যাণকর নয়। তাই সামাজিক ন্যায়বিচার ও পরিবর্তন সমাজকে উন্নয়নের দিকে ধাবিত করে।

সমাজকর্মের উদ্দেশ্য সমূহ লিখ
সমাজকর্মের উদ্দেশ্য সমূহ লিখ

৫. মানবসম্পদ উন্নয়ন ও সংরক্ষণ : সমাজকর্মের একটি বিশেষ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে মানবসম্পদের উন্নয়ন ও সংরক্ষণ করা। সমাজকর্ম মানুষকে সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করার নীতিতে বিশ্বাস করে। দলমতনির্বিশেষে সমাজের সকল মানুষের উন্নয়নের জন্য সমাজকর্ম বহুমুখী কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে মানবসম্পদের উন্নয়ন ঘটায় এবং তা যথাযথভাবে সংরক্ষণ করে।

৬. জনঅংশগ্রহণ : সমাজে বিদ্যমান যেকোনো সমস্যা সমাধানের জন্য সমস্যাগ্রস্তদের অংশগ্রহণ অপরিহার্য। কারণ সুসংঘটিত জনগণের অংশগ্রহণই শক্তি। জনঅংশগ্রহণ ছাড়া সামাজিক সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। তাই আধুনিক সমাজকর্ম জনঅংশগ্রহণকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সমাজকর্ম বহুমুখী লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে কাজ করে যাচ্ছে। সমাজকর্মের মূল লক্ষ্যই হলো সমাজের সব মানুষের উন্নয়নের জন্য সার্বিক কল্যাণসাধন করা। আর এ লক্ষ্যার্জনের জন্য সমাজকর্ম নিজস্ব কতকগুলো পদ্ধতি গ্রহণ করে থাকে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ