সমাজকর্মের বৈশিষ্ট্য গুলো কি কি

সমাজকর্মের বৈশিষ্ট্য গুলো কি কি

উত্তর ভূমিকা : সমাজকর্ম একটি সাহায্যকারী পেশা। সাহায্যকারী পেশা হিসেবে সমাজকর্ম মানুষকে এমনভাবে সাহায্য করে, যাতে করে সাহায্যার্থী আত্মানিয়ন্ত্রণ অধিকারের সুযোগ লাভ করে। মূলত পেশাদারী সমাজকর্মীকে সাহায্যার্থীর সমস্যা ও সমাজব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এবং ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির জটিল পরিস্থিতিতে সাহায্য করার জন্য পেশাগত কারণে বহুমুখী বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হতে হয়।

সমাজকর্মের বৈশিষ্ট্য : নিম্নে সমাজকর্মের বৈশিষ্ট্যসমূহ উল্লেখ করা হলো-

১. বৈজ্ঞানিক জ্ঞানভিত্তিক পেশা : সমাজকর্ম বৈজ্ঞানিক জ্ঞানভিত্তিক একটি সাহায্যকারী পেশা। সমাজকর্মে সেবাদানকারীকে পেশাগত ক্ষেত্রে বিশেষ জ্ঞান ও দক্ষতার অধিকারী হতে হয়। সেজন্য সমাজকর্মীরা সুনির্দিষ্ট ও সুশৃঙ্খল পাঠ্যসূচি অধ্যয়ন করে পেশাগত কার্য পরিচালনা করেন । তাই একজন সমাজকর্মীকে সমাজ, সমাজের পারিপার্শ্বিক অবস্থা, সামাজিক বিজ্ঞানের জ্ঞান ও দক্ষতার অধিকারী হতে হয়।

২. পদ্ধতিনির্ভর সমাধান প্রক্রিয়া : সমাজকর্মের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো পদ্ধতিনির্ভর সমাধান প্রক্রিয়া। এর নিজস্ব পদ্ধতি রয়েছে, যার মাধ্যমে এটি সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে থাকে । এজন্য সমাজকর্মের কতকগুলো মৌলিক ও সহায়ক পদ্ধতি রয়েছে। মৌলিক পদ্ধতিগুলো হলো- ব্যক্তি সমাজকর্ম, দল সমাজকর্ম ও সমষ্টি সংগঠন। আর সহায়ক পদ্ধতিগুলো হলো- সমাজকল্যাণ প্রশাসন, সমাজকর্ম গবেষণা ও সামাজিক কার্যক্রম

৩. সাহায্যকারী ও সক্ষমকারী পেশা : সমাজকর্ম একটি সাহায্যকারী ও সক্ষমকারী পেশা। এটি সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তি, দল ও সমষ্টিকে এমনভাবে সাহায্য করে যা শুধু বর্তমান সমস্যাই নয়; বরং ভবিষ্যতে যেকোনো সমস্যায় পতিত হলে নিজেরাই যেন নিজেদের সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম হয়। অর্থাৎ সমাজকর্মীরা সমস্যাগ্রস্তদের সমস্যা সমাধানে সক্ষম হতে সাহায্য করে।

৪. পেশাগত কর্মকাণ্ড : সমাজকর্ম কোনো স্বেচ্ছামূলক সেবাকর্ম নয়; বরং এটি পেশাগত কর্মকাণ্ডের সমষ্টি। সমাজকর্মীরা সেবাদানের ক্ষেত্রে তাদের পেশাগত নীতিমালা অনুসরণ করে চলেন। তাই পেশাগত সেবাপ্রদান এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। কারণ পেশাগত জ্ঞান ও দক্ষতাসম্পন্ন সমাজকর্মীদের পক্ষেই আধুনিক সমাজকর্মের পেশাগত কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা সম্ভব।

সমাজকর্মের বৈশিষ্ট্য গুলো কি কি
সমাজকর্মের বৈশিষ্ট্য গুলো কি কি

৫. সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি : সমাজকর্মের আরেকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতে মানুষকে বিচার করা। মানুষের দৈহিক, মানসিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও নৈতিক দিকসহ জীবনের সব দিক পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। এসবের একটিকে বাদ দিয়ে অপরটি উন্নয়নের কথা চিন্তা করা যায় না। তাই সমাজকর্ম মানুষের সকল দিকের উন্নয়নে সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করে থাকে।

৬. সমন্বিত শিক্ষা কার্যক্রম : সমাজকর্ম সেবাদানকারীকে পেশাগত ক্ষেত্রে বিশেষ জ্ঞান ও দক্ষতার অধিকারী হতে হয়। এজন্য সমাজকর্মের তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞানার্জনের জন্য সুশৃঙ্খল সমন্বিত শিক্ষা কার্যক্রম রয়েছে। সারা বিশ্বে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও ডক্টরেট পর্যায়ে শিক্ষাকার্যক্রম প্রচলিত রয়েছে। সমাজকর্মীকে সমস্যা সমাধানে ব্যক্তিকে সাহায্যের জন্য উচ্চতর দক্ষতা অর্জন আবশ্যক ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সমাজকর্মে উপরিউক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো ছাড়াও আরও কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন- পেশাগত সম্পর্ক ও পারিশ্রমিক, সমন্বিত বিজ্ঞান, সার্বিক কল্যাণ, মূল্যবোধভিত্তিক পেশা প্রভৃতি । এই বৈশিষ্ট্যগুলোর ওপর নির্ভর করেই সমাজকর্ম পেশা হিসেবে পরিচিত। পাশাপাশি সমাজকর্মকে অন্যান্য পেশা থেকে স্বকীয়তা দান করেছে। তাই পেশাগত সমাজকর্মীর উপরিউক্ত বৈশিষ্ট্যাবলির জ্ঞান থাকা আবশ্যক ।

Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ